অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। —ফাইল চিত্র।
নন্দীগ্রামের সভা থেকে ভোটের ভবিষ্যদ্বাণী করে দিলেন অভিষেক। জানিয়ে দিলেন, কেন্দ্রে মোদী সরকারের মেয়াদ আর মাত্র ১০ দিন। আগামী ৪ জুন ভোটের ফলাফলেই জানা যাবে, কেন্দ্রের মসনদ থেকে বিজেপি বিদায় নিচ্ছে। তমলুকে তৃণমূল প্রার্থী দেবাংশু কত ভোটের ব্যবধানে জিতবেন, তা-ও বলে দিলেন অভিষেক। জানান, দেবাংশুকে অন্তত দু’লক্ষ ভোটের ব্যবধানে জেতাবেন তমলুকের মানুষ।
অভিষেক বলেন, ‘‘ভোটের দিন যদি আপনাদের টাকা দিতে আসেন বিজেপির নেতারা, তা হলে সেই টাকা নিয়ে নেবেন। কিন্তু ভোটটা দেবেন জোড়াফুলে। মনে রাখবেন, পাঁচ বছর এঁরা টাকা দিতে আসেননি। পাঁচ বছর খোঁজ নেননি।’’
নন্দীগ্রামের সভা থেকে অভিষেক বলেন, ‘‘পথপ্রদর্শক, সমাজসংস্কারক রামমোহন রায়ের জন্মদিবসে আমরা শপথ নেব। তিনি ভারতকে পথ দেখিয়েছিলেন। সতীদাহ প্রথা রদ করেছিলেন। এই রামে আমরা বিশ্বাস করি। যোগী আদিত্যনাথের হিন্দু ধর্মে বিশ্বাস করি না। আমাদের কাছে রাম হলেন রামমোহন রায়।’’
নন্দীগ্রামে গিয়ে অভিষেক বলেন, ‘‘আবাস যোজনায় যাঁরা আবেদন করেছেন, দেবাংশু জেতার ছয় মাসের মধ্যে তাঁদের অ্যাকাউন্টে আবাসের প্রথম কিস্তির টাকা সরকার পৌঁছে দেবে। কেন্দ্রে বিজেপির বিদায় আসন্ন। কেউ বাঁচাতে পারবে না। এই সরকারের মেয়াদ আর ১০ দিন।’’
অভিষেক বলেন, ‘‘কেউ কেউ অশান্তি করার চেষ্টা করছেন। খুন্তি, বঁটি নিয়ে তাড়া করবেন এঁদের। কাউকে ছাড়বেন না। নিজের ভোট নিজেকেই দিতে হবে। কেউ তাতে যেন বাধা দিতে না পারেন।’’
নন্দীগ্রামের মঞ্চে একটি ভিডিয়োও দেখান অভিষেক। প্রধানমন্ত্রী আবাস যোজনার একটি বিজ্ঞাপনে ব্যবহৃত মহিলার বাড়িতে গিয়ে জনৈক সাংবাদিক দাবি করেন, ওই বিজ্ঞাপন ভুয়ো। মহিলা আদৌ কোনও প্রকল্পে বাড়ি পাননি বলে দাবি করেন। ভিডিয়োর সত্যতা যাচাই করেনি আনন্দবাজার অনলাইন।
শুভেন্দুর ভাষার সমালোচনা করে অভিষেক বলেন, ‘‘১০ কোটি মানুষ ভোট দিয়ে জিতিয়েছেন। তাঁর বাপবাপান্ত করছেন নন্দীগ্রামের বিধায়ক।’’ শুভেন্দুর কুরুচিকর মন্তব্যের অডিয়োও মঞ্চে শোনান অভিষেক। অডিয়োর সত্যতা যাচাই করেনি আনন্দবাজার অনলাইন।
মঞ্চে একটি অডিয়ো শোনান অভিষেক। যেখানে এক মহিলাকে বলতে শোনা যায়, লক্ষ্মীর ভান্ডার বন্ধ করে দেওয়া হবে। অভিষেক জানান, ওই মহিলা এক বিজেপি নেত্রী। এর পর জনতার উদ্দেশে তাঁর বক্তব্য, ‘‘শুভেন্দু বৃহস্পতিবার এখানে আসবেন। ওঁকে জিজ্ঞেস করুন, বুকের পাটা থাকলে এই মহিলার বিরুদ্ধে পদক্ষেপ করেননি কেন?’’
নন্দীগ্রামে গিয়ে শুভেন্দুকে আক্রমণ করে অভিষেক বলেন, ‘‘তিন বছরে কী করেছেন শুভেন্দু? ১০০ দিনের কাজ বন্ধ করার পর দিল্লিতে গিয়ে ফুর্তি করেছেন। আমরা দিল্লিতে গিয়ে আন্দোলন করেছি। সরকার টাকা দিয়েছে।’’
অভিষেক বলেন, ‘‘নন্দীগ্রামের মাটি বিজেপির স্বৈরাচারীদের মাটি নয়। তৃণমূলের দুর্জয় ঘাঁটি। এক ছটাক জমিও এখানে আমরা কাউকে ছাড়ব না। দু’লাখ ভোটের ব্যবধানে তমলুক থেকে আমাদের মা-বোনেরা জেতাবেন।’’
অভিষেক বলেন, ‘‘মমতার দাম জানতে চাইছেন বিজেপি প্রার্থী। যিনি বাংলার নারীদের লক্ষ্মীর ভান্ডার দিয়েছেন, কন্যাশ্রী দিয়েছেন, তাঁর দাম জানতে চাওয়া হচ্ছে। মানুষ ভোটবাক্সে এর জবাব দেবে।’’
নন্দীগ্রামের মাটিতে বিজেপির দলদাস কেন্দ্রীয় বাহিনী এবং নির্বাচন কমিশন রেফারির ভূমিকায় ছিল। লোডশেডিং করে চারটি ইভিএমে কারচুপি করে শুভেন্দু অধিকারীকে জয়ী ঘোষণা করা হয়। আমরা আদালতে গিয়েছিলাম। বিধায়ক এতই ভীত, তার বিরুদ্ধে সুপ্রিম কোর্টে যান। আবেদন করেন, অন্য হাই কোর্টে মামলা সরিয়ে দেওয়া হোক। আদালত কষিয়ে দু’গালে থাপ্পড় মেরেছে। বলেছে কলকাতা হাই কোর্টেই মামলা হবে।
নন্দীগ্রামের সভায় জনসমাগম দেখে ‘ইতিহাস তৈরি হয়েছে’ বলে মন্তব্য করলেন অভিষেক। তাঁর কথায়, ‘‘আমি আগেও একাধিক বার এখানে এসেছি। মাঠে যে পরিমাণ লোক রয়েছেন, তাঁরা যদি ২৫ তারিখ তৃণমূলের বোতাম টিপে দেন, বিজেপির দফারফা হয়ে যাবে।’’
অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের সভা উপলক্ষে নন্দীগ্রামের বাইপাস মাঠে জনসমাগম হয়েছে। সেই ছবি শেয়ার করা হয়েছে অভিষেকের ফেসবুক পেজ থেকেও।