রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। —ফাইল চিত্র ।
ঘাটালের বহুকাঙ্ক্ষিত মাস্টারপ্ল্যান কবে শেষ হবে? জানিয়ে দিলেন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। শুক্রবার ঘাটাল লোকসভার দাসপুরে অভিনেতা তথা তৃণমূল প্রার্থী দেবের সমর্থনে প্রচার করতে এসেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী। সেখান থেকেই তিনি জানান, ঘাটালের মাস্টারপ্ল্যানের কাজ শুরু হয়ে গিয়েছে। সার্ভের কাজ চলছে। পুরো প্রকল্প শেষ করতে এক হাজার কোটি টাকার মতো লাগবে, তাই একটু অপেক্ষা করতে হবে। তবে তিন-চার বছরের মধ্যেই ঘাটালের মাস্টারপ্ল্যানের পুরো কাজ শেষ হয়ে যাবে বলেও ঘাটালের মানুষকে আশ্বাস দেন মমতা।
মমতা বলেন, ‘‘আমি দেবকে বলেছি আমার দু’টি বছর লাগবে। এক হাজার কোটি টাকার প্রকল্প। একটু সময় লাগবে। এত তাড়াতাড়ি করলে হবে না। তবে ও বলার পরেই আমরা সার্ভে শুরু করে দিয়েছি। তিন-চার বছরের মধ্যেই কাজ শেষ হয়ে যাবে। কপালেশ্বরী-কেলেঘাই করে দিয়েছি। এই মানস ভুঁইয়াকে দেখেছি সব সময় কপালেশ্বরী-কেলেঘাই বলে চিৎকার করতে। কিন্তু সেই কাজ করে দিয়েছি।’’
লোকসভা নির্বাচনের আগে জল্পনা তৈরি হয়েছিল, এই বার ভোটে লড়বেন না দেব। সমাজমাধ্যমে একটি পোস্টে দেব সেই সময় লিখেছিলেন, ‘‘সংসদে আমার শেষ দিন।” এতেই অনেকের মনে হয়েছিল, ঘাটাল থেকে আসন্ন লোকসভায় দেব যে আর দাঁড়াতে চাইছেন না, তা স্পষ্ট হয়ে গিয়েছে। যদিও সরাসরি এ ব্যাপারে কখনওই কোনও সিদ্ধান্ত নেওয়ার কথা জানাননি দেব। তৃণমূল সূত্রে খবর, দেবের মন পরিবর্তন করে তাঁকে আবার ভোটে লড়তে রাজি করানোর নেপথ্যে ছিলেন স্বয়ং মুখ্যমন্ত্রী এবং তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। কেন্দ্র টাকা না দিলে রাজ্যের টাকাতেই ঘাটালের মাস্টারপ্ল্যান হবে বলেও দেবকে আশ্বাস দিয়েছিলেন তাঁরা। তবে দাসপুরের জনসভা থেকে মুখ্যমন্ত্রী স্পষ্ট করেছেন, ঘাটালের মাস্টারপ্ল্যান আর আশ্বাসের পর্যায়ে নেই। তা নিয়ে কাজ শুরু হয়ে গিয়েছে। শেষও হয়ে যাবে বছর চারেকের মধ্যে।
মোদীকে সরিয়ে জোট ‘ইন্ডিয়া’ ক্ষমতায় আসবে। অনেক কাজ হবে মানুষের জন্য। দেবের প্রচারসভা থেকে মন্তব্য মমতার।
মমতা বলেন, ‘‘এক-দু’বছর লাগবে। একটু অপেক্ষা করতে হবে। সার্ভে শুরু করা হয়েছে। তিন-চার বছরের মধ্যে মাস্টারপ্ল্যান শেষ হবে।’’
একটা একটা করে তৃণমূলের আসন বাড়াতে হবে। দাসপুরে মন্তব্য মমতার। মমতা বলেন, ‘‘বিজেপিকে আর ক্ষমতায় আসতে দেওয়া যাবে না। মোদী এলে ভোট বন্ধ করে দেবে। দেশ থাক, মোদী যাক। ’’
বিজেপি চাকরিখেকো বাঘ। দাসপুরের জনসভা থেকে মন্তব্য করলেন মুখ্যমন্ত্রী।
পরিযায়ী শ্রমিকদের অত্যাচার করে বিজেপি। দাসপুর থেকে মন্তব্য মুখ্যমন্ত্রী মমতার। তিনি বলেন, ‘‘দয়া করে ভোটটা দিন। এই ভোটটা আপনাদের নিজের ভবিষ্যতের জন্য। এনআরসি করে দেবে। কাগজে বিজ্ঞাপন দিয়েছে। প্রচারক-প্রকাশকের নাম নেই। সব ভাঁওতা। মোদীকে-অমিত শাহকে আগে সিএএ-র জন্য আবেদন করতে বলুন।’’
কেন্দ্রের বিজেপি সরকারকে কটাক্ষ করে মমতা বলেন, ‘‘কয়েকটা চোর মিলে দেশ চালাচ্ছে। দেশ বিক্রি করে দিচ্ছে। ধর্ম-বর্ণ বিক্রি করে দিচ্ছে। আমরা যা বলি কথা রাখি। আর মোদীর গ্যারান্টি ফোরটোয়েন্টি।’’
দেবকে কেন ভোট দেবেন মানুষ? জানালেন মমতা। মমতা বলেন, ‘‘কোভিডের সময় অনেক পরিযায়ী শ্রমিককে ফিরিয়েছে। অনেক কাজ করে মানুষের জন্য। খুব ভাল ছেলে।’’
দেবের বিরুদ্ধে কে লড়ছেন? দাসপুরের জনসভা থেকে প্রশ্ন করলেন মমতা। উত্তর এল জনতার তরফে। তখন মমতা বলেন, ‘‘সেটা কে? খায় না মাথায় দেয়?’’
মুখ্যমন্ত্রীর শেষ কর্মসূচি খড়্গপুর শহরে। মেদিনীপুর লোকসভায় এ বার তৃণমূলের প্রার্থী অভিনেত্রী জুন মালিয়া। জুন মেদিনীপুরের বিধায়কও বটে। বিদায়ী সাংসদ দিলীপ ঘোষকে বর্ধমান-দুর্গাপুরে পাঠিয়ে পদ্মশিবির এখানে প্রার্থী করেছে আসানসোল দক্ষিণের বিধায়ক অগ্নিমিত্রা পালকে। শুক্রবার বিকেলে খড়্গপুর শহরে রোড-শোয়ের কর্মসূচি রয়েছে মমতার।
ঝাড়গ্রামের সভা সেরে মুখ্যমন্ত্রী সভা করতে যাচ্ছেন ঘাটাল লোকসভার দাসপুর বিধানসভায়। সেখানে তৃণমূল প্রার্থী দেবের সমর্থনে জনসভা করবেন তিনি। ২০১৪ ও ২০১৯ সালে ঘাটালে জিতেছিলেন অভিনেতা দেব। এই কেন্দ্রে নায়ক দেবের বিরুদ্ধে অন্য এক নায়ককে ময়দানে নামিয়েছে বিজেপি। তিনি খড়্গপুর সদরের বিজেপি বিধায়ক হিরণ চট্টোপাধ্যায়।
দিল্লিবাড়ির লড়াইয়ে ভোটপ্রচারে শুক্রবার ঝাড়গ্রাম ও পশ্চিম মেদিনীপুরে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তাঁর প্রথম কর্মসূচি ছিল ঝাড়গ্রাম লোকসভার গোপীবল্লভপুর বিধানসভায়। তফসিলি জনজাতিদের জন্য সংরক্ষিত এই লোকসভা আসনটি গত বার জিতেছিল বিজেপি। সাংসদ হন কুনার হেমব্রম। ২০২৪ সালের লোকসভা নির্বাচনে এখানে প্রার্থী বদল করেছে বিজেপি। পদ্ম-প্রতীকে এ বার প্রার্থী হয়েছেন প্রণত টুডু। তাঁর বিরুদ্ধে তৃণমূলের প্রার্থী কালীপদ সোরেন। কংগ্রেস-সিপিএম জোট এই আসনে প্রার্থী দিয়েছে। এখানে জোটের পক্ষে সিপিএমের প্রার্থী সোনামণি মুর্মু টুডু। তবে এখানে লড়াই মূলত বিজেপি বনাম তৃণমূলের।