বেহালার সভায় মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ছবি: ফেসবুক থেকে।
মমতা বলেন, ‘‘৩৪ বছরের বামফ্রন্টকে যদি উপড়ে ফেলতে পারি, মানুষের আশীর্বাদে, তোমাকেও উপড়ে ফেলতে পারি। অপেক্ষা করো। মা-বোনেরা জেনে রাখুন, ওদের এত সাহস, বলে লক্ষ্মীর ভান্ডার তুলে দেবে! যত দিন বেঁচে থাকবেন, এটা পাবেন। আপনাদের আশীর্বাদ, দোয়া, লড়াই না পেলে জিততে পারব না। এ মাটি জন্ম দিয়েছে। কর্ম দিয়েছে। শান্তিতে ঘুমাতে যান মোদীবাবু। সকলকে শুভকামনা জানিয়ে শেষ করছি। মালা রায় অনেক পুরনো মেয়ে। ছাত্র পরিষদ করা মেয়ে। তিন নম্বরে ওঁকে ভোট দিন। বিজেপি হটাও, দেশ বাঁচাও।’’
মমতা বলেন, ‘‘শ্যামবাজার থেকে স্বামীজির বাড়ি পর্যন্ত মিছিল করব। স্বামীজির বাড়ি দখল হয়ে যাচ্ছিল। আমরাই কিনে দিয়েছি। স্বামীজির চিরস্থায়ী ঠিকানা করে দিয়েছি। লাইট অ্যান্ড সাউন্ডের ব্যবস্থা করা হয়েছে। নিবেদিতার বাড়িও দখল হয়ে যাচ্ছিল। আমরাই কিনে দিয়েছি, যারা নিবেদিতার সঙ্গে যুক্ত। দার্জিলিঙে নিবেদিতার বাড়ি দখল হয়ে যাচ্ছিল। বিমল গুরুঙ্গ জিটিএ ভবন করছিলেন। আমি উদ্ধার করে দিয়েছি।’’
মমতা খতিয়ান তুলে ধরলেন, রাজ্যে তাঁর আমলে কী কী হয়েছে। কোথায় কোথায় মন্দির হয়েছে, তা-ও জানালেন। ফুল্লরার মন্দির, তারাপীঠ, কালীঘাট মন্দির করা হয়েছে। তিনি ফিরহাদকে জিজ্ঞেস করেন, ‘‘কালীঘাটের কাজ কবে শেষ হবে রে? অগস্টে হবে। জগন্নাথ মন্দিরও শেষ হয়ে গিয়েছিল। কিন্তু আমি অসম্পূর্ণ করি না। কালীঘাটে পয়লা বৈশাখের আগেই উদ্বোধন করতে পারতাম। করিনি, কারণ, একটু কাজ বাকি ছিল। মোদীবাবুকে বলব, বাংলা কী ছিল, পড়াশোনা করে আসুন। ভাগ্যিস বলেনি, মমতাদি কালীপুজো করতে দেন না।’’
মমতা বলেন, ‘‘বিজেপির কারাগার ভাঙো। লুটেরাদের ভাঙো। বাংলা ভারতের সাংস্কৃতিক কেন্দ্র। বিজেপি ক্ষমতায় আসছে। মুম্বইয়ের এক সংস্থা ইন্ডিয়াকে দিয়েছে ৩৪৮। বলে লক্ষ্মীর ভান্ডার বন্ধ করব। বলেছি, সকলের ৩২টা দাঁত রয়েছে। বিষদাঁত মেয়েরা ভেঙে দেবে। সৌন্দর্য বৃদ্ধি করতে বিচুটি মাখাবে। মিথ্যা কথা বলার লিমিট রয়েছে। আমি অটলবিহারীর সঙ্গে কাজ করেছি। মনমোহনজি, দেবগৌড়া, রাজীব গান্ধী, নরসীমা রাওয়ের সঙ্গে কাজ করেছি। ইন্দিরা গান্ধীর সঙ্গে কাজ করিনি। এ রকম প্রধানমন্ত্রী দেখিনি। এক দিনে ১৪৭ জন সাংসদকে বহিষ্কার করেছেন। মহুয়া মৈত্র লড়াই করত। তাঁর বাবা-মাকে হেনস্থা করেছেন। মহুয়া বলেছিল, ক্যাম্প করেছে ওঁর ওখানে। বললাম, নির্বাচন হয়ে যাক।’’
মমতা বলেন, ‘‘১০০ দিনের কাজের টাকা দেয়নি। আমরা কর্মশ্রী প্রকল্প করছি। তাঁদের টাকা দেব। ৪৩ লক্ষ বাড়ি করে দিয়েছি। ঘরবাড়ি পড়ে গিয়েছিল। আবার করে দেব। সামনে দুর্গাপুজো রয়েছে। বাংলার উৎসব রয়েছে। বাংলার ভাল না করে রাজনৈতিক ফয়দা লোটা হচ্ছে। আড়াই-তিন মাস ধরে ভোট করাচ্ছে। বিদ্যাসাগেরর মূর্তি ভেঙে দাও। রবীন্দ্রনাথের উল্টো ছবি দাও। ভারতের জাতীয় সেনাবাহিনী কে করেছিলেন? নেতাজি। যোজনা কমিশন করেছিলেন নেতাজি। উঠিয়ে দিয়েছেন মোদী। বাংলা কী করেনি! কবিগুরু বেঁচে থাকলে মোদীর আস্ফালন দেখে বলতেন, বাঁধ ভেঙে দাও!’’
মমতা জানান, যা প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন, সব করেছেন। বিনামূল্যে রেশন থেকে স্বাস্থ্যসাথী, সবুজসাথী, হাসপাতাল, বিশ্ববিদ্যালয়, সবই হয়েছে। ‘মধুর স্নেহ’ নামে পিজি হাসপাতালে মাতৃদুগ্ধের ব্যাঙ্ক করা হয়েছে। তাঁর কথায়, ‘‘একটাই কাজ বাকি, বিজেপিকে হটানো।’’
মমতার দাবি, এক জন প্রধানমন্ত্রীকে টেলি প্রম্পটারের মাধ্যমে বক্তৃতা করতে হয়। তিনি বলেন, ‘‘আমি দেখতে পেয়েছিলাম। শেখ হাসিনার সঙ্গে প্রধানমন্ত্রী রয়েছেন। টেলি প্রম্পটার লাগানো, সেখান থেকে পড়ছেন। নিজে দেখেছি। না হলে বিশ্বাস করতে পারবেন না।’’
মমতা জানান, দিন-রাত মোদীর ছবি দেখতে হচ্ছে। তাঁর কথায়, ‘‘তেজস্বী খাটাখাটনি করে লাঞ্চ করছিল। সেই ভিডিয়ো করেছে। মাছ খাচ্ছিল। সেই নিয়ে বলেন, মাছ খায়! তিনি একটা ব্যাঙের ছাতা খান, চার লক্ষ টাকা দাম। তাইওয়ানের ব্যাঙের ছাতা। আমি এ সবে যেতাম না, যদি না এ সব বলে বাংলার মানুষকে অপদস্থ করতেন। সমাজমাধ্যমে দেখেছি একটা ছাতার দাম ৮০ হাজার। লাঞ্চে খরচ চার লক্ষ টাকা। এটা খাওয়ার অধিকার রয়েছে। কিন্তু যখন বলেন, মাছ খাবে না, তা হলে কি বার্লি খাব?’’
মমতা বলেন, ‘‘তিন মাস ধরে নির্বাচন চলছে। এত গরম। বাচ্চাদের স্কুল বন্ধ করলাম। ঝড়জল শুরু হল। ভ্রূক্ষেপ নেই। এক জন নির্বাচন কমিশনার প্রতিবাদে ছেড়ে দিলেন। উনি যত বার বাংলায় আসেন, এক জন করে আইএএসকে সরিয়ে দেন। ক্ষমতা যে দিন মানুষ কেড়ে নেবে, জবাব দেবে ব্যালটে। চেয়ারে না থাকলে কেউ দেখবে না। কালো ধন করছেন, পিএম কেয়ারের টাকা কই? রেলের কর্মীদের আন্দোলনে সমর্থন রয়েছে।’’
মমতা বলেন, ‘‘মা-বোনদের অসম্মান করে বিজেপি নির্বাচনী ইস্যু করেছে। বাংলার বদনাম করার চেষ্টা করেছে সন্দেশখালিতে। বাংলার মা-বোনদের এই অসম্মান মেনে নেব না। আজ থেকে পাকিস্তান বলতে শুরু করেছেন। আবার পুলওয়ামা হবে বোধ হয়।’’
মমতা বলেন, ‘‘২৬ হাজার শিক্ষকের চাকরি খেল! আমি বর্ধমানে প্রচার করছিলাম। বলেছিলাম, হতে দেব না। করেছি। করে স্টে করে রেখে দিয়েছি। ক’দিন আগে এক জনকে দিয়ে ১৫ লক্ষ ওবিসি শংসাপত্র খেয়েছে। বিচারপতিকে বলা যাবে না, তাঁর রায়কে বলা যাবে। আমিও আইনজীবী। একটা শংসাপত্র বানাতে কত সময় লাগে! এখন নিজেই অথরাইজ করা যায়। মোদীবাবুর কল হল খুড়োর কল।’’
মমতা বলেন, ‘‘কত রকম কালী হয়, তিনি কী জানেন? আপনি কী করে সাক্ষাৎকার দেন? গত ১০ বছরে কাউকে দেননি। নিজে প্রশ্ন লিখে নিজে উত্তর দেন। জনসমক্ষে হোক। গুজরাতে হবে? আপনি চাইলে আমি যাচ্ছি। দেখব, জ্ঞানভান্ডার কত, কত দেশকে ভালবাসেন! সব বেচে দিল। রেল, সেল, গেল, সব বেচেছে।’’
মমতা বলেন, ‘‘ভোট ছাড়া তো আসেন না। বিপদে আসেন না। বাংলাকে লাঞ্ছনা করাই ওঁর কাজ। আগে বলত, মমতাজি বাংলায় দুর্গাপুজো করতে দেন না। সরস্বতী পুজো করতে দেন না। সেই বাংলা ইউনেস্কোর তকমা পেয়েছে। দেখ কেমন লাগে! বাংলা কাজ করে না। সব তিনি করেন। কোনও কালো ধন এনেছেন? ওয়াশিং মেশিনে মাফিয়াদের ঢুকে কালোদের সাদা করেছেন। সাধু আপনি!’’
মমতা বলেন, ‘‘নড্ডা বলেছেন, উনি সব দেবতার রাজা। আমি বলি, হতেই পারে। কেউ বলেন, জগন্নাথ দেবও ওঁর ভক্ত। সকলে ওঁর ভক্ত হলে, যে দেবতা হয়, তাঁর রাজনীতি, দাঙ্গা করা শোভা পায় না। মন্দির করছি, বসুন, নকুলদানা, ফুল, বেলপাতা দেব। চাইলে ধোকলাও দেব।’’
মমতা বলেন, ‘‘রঘুনন্দন তিওয়ারিকে মারেনি? ১ অগস্ট। ৮ অগস্ট মারল বিমলা দে-কে হাওড়ায়। একটা ঘটনা ঘটেছিল বিষ্ণুপুর আমতলায়। আমার একটা জিপ ছিল। পুলিশ ধাওয়া করছিল। কাছাকাছি চেনাশোনা বাড়িতে গেলাম। আমি শাড়ি চেঞ্জ করলাম। একটা মেয়ের শাড়ি আমি পরি, আমার শাড়ি ওকে দিই। জেমস লং সরণি দিয়ে বেরিয়ে আসি। কিছু ঘটনা বলা হয় না। যিনি বলেন, দিল্লি থেকে বসে সাইক্লোন সামলেছেন, তাঁকে বলব, প্রধানমন্ত্রীর মিথ্যা বলা সাংবিধানিক অধিকার নয়। কাজও নয়। কাকে নিয়ে করিয়েছিলেন? এনডিআরএফ দেখাচ্ছে? টাকাও দেব, আবার বড় কথা বলবেন! উনি নাকি মা কালীকে ডেকে সাইক্লোন আটকেছে।’’
মমতা বলেন, ‘‘আমার সময়ে জাতীয় মহিলা কমিশন তৈরি হয়। মানবাধিকার কমিশনের জন্য ২১ দিন ধর্না দিয়েছিলাম। ভুলে গেছেন সেই ভেজাল তেলের কথা? কত রক্ত ঝরেছে। সিপিএম সে দিন লাঠি-গুলি নিয়ে তাড়া করল। আমি একা দাঁড়িয়েছিলাম। কেউ নেই।’’
মমতা বলেন, ‘‘গুজরাতের যখন মুখ্যমন্ত্রী ছিলেন, দাঙ্গা করেছেন। তখন সারা দেশের খবর রাখতেন না। আমি মুখ্যমন্ত্রী হওয়ার আগে রেলমন্ত্রী, ক্রীড়ামন্ত্রী, কয়লামন্ত্রী ছিলাম। সুব্রত ভট্টাচার্য আমার হাত দিয়ে পুরস্কার নিয়েছিলেন। বুলা চৌধুরী এখন অন্য দল করতেই পারি। আমাকে বলেছিল অর্জুন পুরস্কার চাই। বললাম, আটটার মধ্যে ছ’টায় সোনা পেতে হবে এশিয়াডে। ও পেয়েছিল, আমি দিয়েছিলাম। সচিনের কোচ আচরেকরকে দ্রোণাচার্য দেওয়া হয়নি। আমি দিলাম।’’
মমতা বলেন, ‘‘আজ মাননীয় প্রধানমন্ত্রীজি, আর সাত-আট দিন প্রধানমন্ত্রী বলতে পারবেন। তার পর আর থাকবেন না। তিনি কাকদ্বীপে দাঁড়িয়ে বলছেন, সাইক্লোন দিল্লি থেকে বসে পর্যবেক্ষণ করেছে। এত মিথ্যা বলা শোভা পায়? এনডিআরএফ দেখাচ্ছে। ওরা কাজ করলে টাকা দিতে হয়। আমি রেলমন্ত্রী থাকার সময় রাজ্যগুলির সঙ্গে চুক্তি করিয়ে দিয়েছিলাম।’’
মমতা বলেন, ‘‘কাল ৮টার পর সাইক্লোন চলে গেছে। ৪৬ লক্ষ লোককে তুলে বাঁচিয়েছি। সাত জন মারা গিয়েছে। সময় মতো ব্যবস্থা না নিলে কয়েক লক্ষ লোক মারা যেতেন। প্রশাসন সাধ্য মতো কাজ করেছে। আমি পর্যবেক্ষণ করেছি। ববি, দেবারা করেছে। অনেকে ত্রাণশিবির থেকে বাড়ি ফিরে গিয়েছে।’’
মমতা বলেন, ‘‘এ বার সাইক্লোনে জল দাঁড়ায়নি কলকাতায়। দিল্লি হলে পাঁচ দিন জল জমে থাকত। বাংলার উন্নয়ন ওরা চোখে দেখে না। হিংসুটেরা কুৎসা করে। আজও বলেছে। এমন কথা বলব না, যে করিনি বা করতে পারব না। এমন কথা বলব না, যা শোভা পায় না। কথা বলার সৌজন্য বোধ থাকে।’’