বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী। —ফাইল ছবি।
দল বদল করেও বিধানসভার খাতায় তাঁরা রয়ে গিয়েছিলেন পুরনো দলে। বিরোধী দলের বিধায়ক পরিচয়েই তাঁদের মধ্যে এক জন আবার বিধানসভার পাবলিক অ্যাকাউন্টস কমিটির (পিএসি) চেয়ারম্যান। এ বার শাসক দল তাঁদের লোকসভা ভোটে প্রার্থী করে দেওয়ায় শেষ পর্যন্ত বিধায়ক-পদ ছাড়তে হবে তিন জনকে। দলত্যাগ-বিরোধী আইন প্রয়োগ আটকাতে যে পরিচয়ের ‘ঢাল’ কাজে লাগানো হয়েছিল, তৃণমূল কংগ্রেসের নিজেদের সিদ্ধান্তেই তা খসে যাওয়ায় বিষয়টি নিয়ে সরব হয়েছে বিজেপি। বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীর মন্তব্য, ‘‘সত্য বেশি দিন চাপা থাকে না!’’ স্পিকার বিমান বন্দ্যোপাধ্যায়ের ভূমিকাকেও নিশানা করছে বিরোধী দল। স্পিকার অবশ্য ফের দাবি করেছেন, সংশ্লিষ্ট বিধায়কদের দল বদলের অভিযোগ বিধানসভার নিয়ম-বিধির ভিত্তিতেই বিবেচ্য হবে।
লোকসভা ভোটে রায়গঞ্জ থেকে কৃষ্ণ কল্যাণী, বনগাঁ থেকে বিশ্বজিৎ দাস ও রানাঘাট থেকে মুকুটমণি অধিকারীকে প্রার্থী করেছে তৃণমূল। এঁরা তিন জনেই গত বিধানসভা ভোটে বিজেপির প্রতীকে নির্বাচিত হয়েছিলেন, পরে দল বদলেছেন। সম্প্রতি বিধায়ক-পদে ইস্তফা দিয়ে তাপস রায় যেমন তৃণমূল ছেড়ে বিজেপিতে গিয়েছেন, অন্য দল থেকে তৃণমূলে আসার সময়ে গত কয়েক বছরে প্রায় কোনও বিধায়কই সেই নীতি অনুসরণ করেননি। দলত্যাগ-বিরোধী আইনে বিধায়ক-পদ খারিজের দাবি জানানো হলেও শুনানিতে কোনও ফয়সালা হয়নি। পিএসি চেয়ারম্যান পদে কেন ‘দলবদলু’ কৃষ্ণকে বসানো হল, সেই প্রশ্ন তুলে আদালতেও গিয়েছিল বিজেপি। এখন ‘দলবদলু’ তিন বিধায়ক লোকসভায় তৃণমূলের প্রার্থী হওয়ায় মনোনয়নে দলের প্রতীক দেওয়ার সময়ে নিয়ম মেনে তাঁদের বিধায়ক-পদ (বিজেপির) ছেড়ে আসতে হবে। অন্যথায় তাঁদের মনোনয়ন বাতিল হবে।
দলত্যাগী বিধায়কদের কেন বারবার ‘আড়াল’ করে চলছে শাসক শিবির, সেই প্রশ্ন তুলে সরব হয়েছেন বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু। তাঁর বক্তব্য, ‘‘স্পিকার তাঁর আসনের মর্যাদা রক্ষা করতে ব্যর্থ হয়েছেন। আমরা যখন অধিবেশন কক্ষে বলেছি এঁদের কেন বিজেপির বিধায়ক বলা হচ্ছে, কেন অশোক লাহিড়ীর মতো অর্থনীতিবিদকে পিএসি চেয়ারম্যানের পদ দেওয়া হয়নি, তখনও স্পিকার বলেছেন এঁরা সব বিজেপিরই! আদালতে গিয়ে দাবি করা হয়েছে এই বিধায়কেরা বিজেপি, স্পিকারও হলফনামা দিয়ে একই কথা বলেছেন।’’ বিরোধী দলনেতার আরও সংযোজন, ‘‘সংসদীয় গণতন্ত্রের ইতিহাসে তৃণমূলের এই জমানা কলঙ্কিত অধ্যায় হয়ে থাকবে!’’
স্পিকার বিমানের অবশ্য ব্যাখ্যা, ‘‘স্পিকার হিসেবে বিধায়কদের যে পরিচিতি বিধানসভায় রয়েছে, তার ভিত্তিতেই গোটা বিষয়টি বিবেচনা করতে হবে। বাইরে কে, কোথায় কী করছেন, তা দেখা আমার কাজ নয়। ফলে, দলবদলের যে অভিযোগ রয়েছে, তা বিধানসভার নিয়ম-বিধির ভিত্তিতেই দেখা হবে।’’ প্রসঙ্গত, দলত্যাগ-বিরোধী আইন প্রয়োগের আবেদনের প্রেক্ষিতে সোমবারই কৃষ্ণ ও বিশ্বজিতের শুনানি ছিল।