৪৯ নম্বর ওয়ার্ডের রোডশোয়ে একসঙ্গে উত্তর কলকাতার বিদায়ী সাংসদ তথা তৃণমূল প্রার্থী সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায় ও কাউন্সিলর মোনালিসা বন্দ্যোপাধ্যায়। নিজস্ব ছবি।
অবশেষে কলকাতা উত্তরের তৃণমূল প্রার্থী সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়ের প্রচারে দেখা গেল ‘বিক্ষুব্ধ’ কাউন্সিলর মোনালিসা বন্দ্যোপাধ্যায়কে। সোমবার বিকেলে ৪৯ নম্বর ওয়ার্ডে একটি রোড-শো করেন উত্তর কলকাতার বিদায়ী সাংসদ সুদীপ। ওই রোড-শোতে ছিলেন সুদীপ-জায়া তথা চৌরঙ্গীর বিধায়ক নয়না বন্দ্যোপাধ্যায়, বজবজের তৃণমূল বিধায়ক অশোক দেব এবং মোনালিসা। প্রচার কর্মসূচি শেষে চোয়াল শক্ত করে নিজের অবস্থানও স্পষ্ট করে দিয়েছেন তৃণমূল কাউন্সিলর। প্রচারে নামলেও নিজের অবস্থানের কথা যে দলের শীর্ষ নেতৃত্বকে জানাবেন, তা-ও স্পষ্ট করেছেন তিনি।
উত্তর কলকাতা তৃণমূল সূত্রে খবর, সোমবারের রোড-শোয়ের আয়োজন করা হয়েছিল কাউন্সিলর ও সাংসদের মধ্যে ‘সম্পর্ক’ যে এখনও স্বাভাবিক রয়েছে, তা তুলে ধরতে। তাই কর্মসূচির শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত প্রার্থী সুদীপের সঙ্গেই ছিলেন মোনালিসা। রোড-শো শুরুর আগেই বিধায়ক নয়না কাউন্সিলর মোনালিসাকে দেখেই এগিয়ে আসেন। কাউন্সিলরের গালে হাত বুলিয়ে আদরও করতেও দেখা যায় সুদীপ-জায়াকে। ৪৯ নম্বর ওয়ার্ডের মহাত্মা গান্ধী রোড, সূর্য সেন স্ট্রিট, এপিসি রোড, আমহার্স্ট স্ট্রিট হয়ে বিবি গাঙ্গুলি স্ট্রিটে এসে এই রোড-শো শেষ হয়। রোড-শো চলাকালীন সুদীপ বা মোনালিসা কেউই সাম্প্রতিক ঘটনাক্রম প্রসঙ্গে কোনও মন্তব্য করেননি। বরং হাসিমুখেই পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখার চেষ্টা করেছেন উভয়েই।
অথচ গত সপ্তাহেই তাঁকে বাদ দিয়ে তাঁরই ওয়ার্ডেই ভোটের কাজকর্ম পরিচালনা করছেন উত্তর কলকাতার তৃণমূল প্রার্থী সুদীপ, এমন অভিযোগ তুলে তাঁবু খাটিয়ে অনশনে বসেছিলেন মোনালিসা। তৃণমূল কাউন্সিলরের দাবি ছিল, তাঁকে বাদ দিয়েই ওয়ার্ডে তৃণমূলের ভোটের কাজ পরিচালনা করছেন সুদীপ-ঘনিষ্ঠেরা। সমান্তরাল ভাবে একটি পার্টি অফিসও চালানো হচ্ছে বলে অভিযোগ ছিল। মোনালিসার বক্তব্য, জনৈক দেবাশিস বন্দ্যোপাধ্যায় তাঁকে বাদ দিয়ে করে ভোটের প্রচার করতে চাইছেন। মোনালিসার দাবি ছিল, বার বার জানিয়েও কাজ না হওয়ায় তিনি শিয়ালদহে তাঁর ওয়ার্ড এলাকাতেই মঞ্চ বেঁধে অনশন-সত্যাগ্রহ শুরু করেছেন।
মোনালিসার ক্ষোভ প্রসঙ্গে তৃণমূল নেতা কুণাল ঘোষ কথা বলেন প্রবীণ নেতা সুদীপের সঙ্গে। তার পর বার্তা পাঠানো হলেও মোনালিসা ধর্না ছেড়ে উঠতে চাননি। কিন্তু এই গরমে অনশন চালাতে গিয়ে ক্রমে অসুস্থ হয়ে পড়েছিলেন ওই কাউন্সিলর। আবার কুণাল সুদীপের কাছে বার্তা পাঠান। এর পরে কার্যত সুদীপের ‘দূত’ হয়েই শনিবার মোনালিসার সত্যাগ্রহ মঞ্চে হাজির হন কুণাল। ওই মঞ্চ থেকেই সুদীপের সঙ্গে নিজের মোবাইল থেকে মোনালিসার কথাও বলিয়ে দেন কুণাল। মোনালিসার দাবি ছিল, তাঁর ওয়ার্ডে পৃথক পার্টি অফিস বন্ধ করতে হবে। তাঁকে ভোটের কাজে ‘সসম্মানে’ রাখতে হবে। সুদীপ জানিয়েছিলেন, ওয়ার্ডে একটি ‘নির্বাচনী স্টিয়ারিং কমিটি’ গঠন করা হবে। তার চেয়ারম্যান হবেন মোনালিসাই। তবে পৃথক অফিসটি এখনই বন্ধ করা হবে না। ভোটের পর তা তুলে দেওয়া হবে। সব শুনে মোনালিসা জানিয়েছিলেন, আপাতত তিনি অনশন প্রত্যাহার করছেন। কুণালই তাঁকে শরবত খাইয়ে অনশন ভাঙান। কিন্তু পাশাপাশিই মোনালিসা এ-ও জানিয়েছেন, তিনি অনশন তুললেও সত্যাগ্রহের মঞ্চটি এখনই তুলে ফেলছেন না। কেন? মোনালিসার বক্তব্য ছিল, যা কথা হয়েছে, তা যদি বাস্তবে না ঘটে, তা হলে ফের তিনি সত্যাগ্রহে বসবেন। সেই জন্যই তাঁবু থাকছে।
কুণাল বলেছিলেন, ‘‘আগামী সোমবার সুদীপদা মোনালিসার ওয়ার্ডেই প্রচারে যাবেন। সেখানে কাউন্সিলর হিসেবে মোনালিসাও থাকবেন। তবে মোনালিসাকে কেউ আবার অসম্মান করলে ওঁর সঙ্গে আমরাও অনশনে বসব।’’ কুণালের ঘোষণামাফিক সোমবার ৪৯ নম্বর ওয়ার্ডে রোড-শোয়ের আয়োজন করা হয়। কর্মসূচি শেষে নিজের অবস্থান ফের স্পষ্ট করেছেন মোনালিসা। আনন্দবাজার অনলাইনকে তিনি বলেন, ‘‘দলীয় প্রার্থীর হয়ে আমি প্রচারে নেমেছিলাম। আগামী দিনেও আমি প্রচার করব, ভোটে দলের প্রার্থীকে জেতাতে আমি কাজ করব। তবে আমি আমার ক্ষোভের কথা কিন্তু দলের শীর্ষ নেতৃত্বকেও জানাব।’’ তাই উত্তর কলকাতা তৃণমূলের একাংশ মনে করছেন, কুণালের উদ্যোগে মোনালিসা উত্তর কলকাতার তৃণমূল প্রার্থীর হয়ে প্রচারে নামলেও, এখনও তাঁর ক্ষোভ পুরোপুরি কমেনি।
প্রসঙ্গত, কুণালও প্রার্থীপদ ঘোষণার আগে সুদীপের বিরোধিতা করেছিলেন। কিন্তু তৃণমূল শীর্ষ নেতৃত্ব উত্তর কলকাতার সাংসদকেই মনোনয়ন দেওয়ায়, তিনিও তাঁর হয়ে প্রচারে নেমে নিজের বিরোধিতার পথ ছেড়েছেন। কিন্তু মোনালিসার ক্ষেত্রে তেমনটা হয়নি, সোমবার প্রচারে নামলেও, এখনও যে সুদীপের বিরুদ্ধে তাঁর ক্ষোভ রয়েছে তা নিজের বক্তব্যের মাধ্যমে বুঝিয়ে দিয়েছেন এই যুবতী কাউন্সিলর।