দাবদাহের জেরে বাস চালাতে গিয়ে অসুস্থ হয়ে পড়ছেন বাসচালক ও কন্ডাক্টরেরা। —প্রতিনিধিত্বমূলক ছবি।
প্রবল দাবদাহের জেরে ইতিমধ্যে রাজ্যে কয়েকটি মৃত্যুর ঘটনা ঘটে গিয়েছে। এ বার প্রবল গরমের ধাক্কা বেসরকারি গণপরিবহণ ব্যবস্থাতেও। গ্রীষ্মকালের শুরুতেই কলকাতা শহর ও শহরতলিতে এক ঝটকায় কমে গিয়েছে বেসরকারি বাসের সংখ্যা। লোকসভা ভোটের কারণে আগেই প্রচুর পরিমাণে বেসরকারি বাস নির্বাচনের কাজের জন্য নিয়েছে কমিশন। ফলস্বরূপ শহর ও শহরতলিতে বাসের সংখ্যা অনেকটাই কমে গিয়েছে। কিন্তু গরমের প্রকোপে বেসরকারি বাসের সংখ্যা কমেছে অস্বাভাবিক হারে। দাবদাহের জেরে বাস চালাতে গিয়ে অসুস্থ হয়ে পড়ছেন বাসচালক ও কন্ডাক্টরেরা। যেখানে এক একটি বাস সারা দিনে দশ বার যাতায়াত করত, সেখানে ওই একই বাস তিন-চার বারের বেশি যাতায়াত করতে পারছে না। কোনও কোনও ক্ষেত্রে দেখা গিয়েছে, দুই বারের বেশি যাতায়াত করার পর কর্মীদের অসুস্থতার কারণে আর বাস রাস্তায় নামানো সম্ভব হচ্ছে না। যে কারণে গত এক সপ্তাহে বাসের সংখ্যা অস্বাভাবিক হারে কমে গিয়েছে।
জয়েন্ট কাউন্সিল অফ বাস সিন্ডিকেটের সাধারণ সম্পাদক তপন বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “যে হারে লাগামছাড়া গরম বাড়ছে তাতে বাস শ্রমিকেরা অসুস্থ হয়ে পড়ছেন। বাস্তব পরিস্থিতি বিবেচনা করে বেসরকারি বাসমালিকেরাও চালক ও কন্ডাক্টরদের উপর বাস চালানোর জন্য জোর দিতে পারছেন না। এমনিতেই নির্বাচনের কাজের জন্য কমিশন অনেক বাস রাস্তা থেকে তুলে নিয়েছে। আর গরমের জন্য অনেক বাস রাস্তায় নামাতে পারছে না চালক ও কন্ডাক্টর। তাই যত দিন গরম না কমে, তত দিন সাধারণ মানুষকে ভোগান্তি পোহাতে হবে।” তিনি আরও বলেন, “গরমের কারণে রাস্তায় মানুষ কম, তাই বাস চালিয়ে জ্বালানির খরচটুকুও উঠছে না। তাতে পরিষেবা ও ব্যবসা দুই একসঙ্গে মার খাচ্ছে।” প্রতি বছর গরমের সময় এই ধরনের সমস্যায় পড়েন বেসরকারি বাসমালিকেরা। কিন্তু সেই সময় নির্বাচনের নির্ঘণ্ট থাকে না। তাই গরমের কারণে কিছু বাস চালানো সম্ভব না হলেও, পরিষেবার জন্য বাসের সংখ্যা এতটা কম হয় না। কিন্তু এ বার গরমের সঙ্গে নির্বাচনের ধাক্কাতে বেসরকারি পরিবহণ পরিষেবা দুর্ভোগে ফেলছে নিত্যযাত্রীদের।
করোনা সংক্রমণের পর থেকে কলকাতা ও শহরতলিতে প্রতি দিন আড়াই থেকে তিন হাজার বাস চলত। কিন্তু নির্বাচন কমিশন ভোটের কাজে বাস তুলে নেওয়ায় সেই সংখ্যা দাঁড়িয়েছে দেড় থেকে দুই হাজারে। আর এখন গরমের কারণে সেই সংখ্যা এসে দাঁড়িয়েছে এক হাজার থেকে ১২০০-র মধ্যে। এ প্রসঙ্গে পরিবহণ দফতরের এক কর্তার কথায়, “প্রকৃতির সঙ্গে লড়াই করে আমরা কেউ পেরে উঠি না। তাই যে ভাবে গরম পড়েছে তাতে বাসের চালক ও কন্ডাক্টারদের অসুস্থ হয়ে পড়ার ঘটনা কোনও ভাবেই অস্বাভাবিক নয়। তবু সরকার পক্ষ চেষ্টা করবে রাস্তায় পর্যাপ্ত পরিমাণ বাস নামিয়ে এই পরিস্থিতির মোকাবিলা করার।”