PM Narendra Modi

কর-বঞ্চনা: ধর্নায় সিদ্দারামাইয়া, জবাব প্রধানমন্ত্রীর

দাক্ষিণাত্য থেকে এই তিরের মুখে আজ প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী রাজ্যসভায় সরকারি তহবিল নিয়ে রাজনীতিকে ‘বিপজ্জনক’ বলে আখ্যা দিয়েছেন।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ০৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৪ ০৮:৪৫
Share:

প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। —ফাইল চিত্র।

এত দিন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলতেন, কেন্দ্রীয় সরকার রাজ্য থেকে কর, শুল্ক, জিএসটি আদায় করে নিয়ে যাচ্ছে। কিন্তু রাজ্যকে পাওনা দিচ্ছে না। এ বার দক্ষিণ ভারতের রাজ্যগুলি থেকে একই অভিযোগ উঠছে। কংগ্রেস শাসিত কর্নাটকের মুখ্যমন্ত্রী সিদ্দারামাইয়া, উপমুখ্যমন্ত্রী ডি কে শিবকুমার-সহ রাজ্যের মন্ত্রী, বিধায়ক, সাংসদরা আজ দিল্লির যন্তর মন্তরে কেন্দ্রীয় বঞ্চনার অভিযোগ তুলে ধর্নায় বসেছেন। ‘আমার, কর আমার অধিকার’ স্লোগান তুলে তাঁদের অভিযোগ, কেন্দ্রীয় সরকার কর্নাটক থেকে ১০০ টাকা কর আদায় করলে রাজ্য পাচ্ছে মাত্র ১২ টাকা। একই কেন্দ্রীয় বঞ্চনার অভিযোগ তুলে বৃহস্পতিবার কেরলের মুখ্যমন্ত্রী পিনারাই বিজয়ন সদলবলে দিল্লির যন্তর মন্তরে ধর্নায় বসতে চলেছেন।

Advertisement

দাক্ষিণাত্য থেকে এই তিরের মুখে আজ প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী রাজ্যসভায় সরকারি তহবিল নিয়ে রাজনীতিকে ‘বিপজ্জনক’ বলে আখ্যা দিয়েছেন। রাজ্যসভায় রাষ্ট্রপতির বক্তৃতা নিয়ে ধন্যবাদজ্ঞাপন প্রস্তাবের আলোচনায় কংগ্রেসকেই দুষে তাঁর অভিযোগ, কংগ্রেস ‘উত্তর ও দক্ষিণ ভারতের মধ্যে বিভাজন’ তৈরি করছে।

সিদ্দারামাইয়া, ডি কে শিবকুমাররা যন্তর মন্তরে ‘আমার কর, আমার অধিকার’ স্লোগান তুলেছেন। কয়েকশো মিটার দূরে সংসদে দাঁড়িয়ে মোদী পাল্টা অভিযোগ তুলেছেন, ‘‘আমাদের কর, আমাদের টাকা—এ কেমন ভাষা বলা হচ্ছে? দেশের মধ্যে ফাটল ধরানোর নতুন কারণ তৈরি করা হচ্ছে।” তাঁর প্রশ্ন, হিমালয় পর্বত যদি বলে, তার হিমবাহ থেকে তৈরি নদী থেকে কাউকে জল দেব না! যে সব রাজ্যে কয়লা খনি রয়েছে, তারা যদি বলে অন্য কাউকে কয়লা দেব না, তা হলে কী ভাবে চলবে! কংগ্রেস অবশ্য আজ ২০১২ সালে গুজরাতের মুখ্যমন্ত্রী থাকাকালীন নরেন্দ্র মোদীর টুইট তুলে ধরেছে। সে সময় মোদী প্রশ্ন তুলেছিলেন, ‘‘গুজরাত কেন্দ্রকে ৬০ হাজার কোটি টাকা কর দেয়। তার বদলে কী পায়?”

Advertisement

বিরোধী নেতারা বলছেন, উত্তর ভারতে বিজেপি বিভিন্ন রাজ্যে জিতলেও দক্ষিণের রাজ্যগুলিতে বিশেষ সুবিধা করতে পারছে না। কর্নাটক, তেলঙ্গানায় বিজেপির হার তারই প্রমাণ। তাই দক্ষিণের রাজ্যগুলিকে বঞ্চনা করা হচ্ছে। উত্তর ভারতের বিজেপি শাসিত রাজ্যগুলি সুবিধা পাচ্ছে। আজ লোকসভায় বাজেট নিয়ে আলোচনাতেও কর্নাটক, তামিলনাড়ু, কেরলের প্রতি বঞ্চনার অভিযোগ উঠেছে।

কর্নাটকের মুখ্যমন্ত্রী সিদ্দারামাইয়া আজ যন্তর মন্তরে বলেছেন, ‘‘কর্নাটক থেকে আমরা এ বছর ৪ লক্ষ ৩০ হাজার কোটি টাকা কেন্দ্রীয় করের তহবিলে জমা করছি। কিন্তু কেন্দ্রের থেকে পাব মাত্র ৫০ হাজার কোটি টাকার মতো। রাজ্য থেকে ১০০ টাকা কর বাবদ আদায় করে কেন্দ্রীয় সরকারকে দিলে আমরা মাত্র ১২-১৩ টাকা ফেরত পাচ্ছি।’’ তাঁর অভিযোগ, পঞ্চদশ অর্থ কমিশন কেন্দ্রীয় করে কর্নাটকের ভাগ ৪.৭২% থেকে কমিয়ে ৩.৬৪% করে দিয়েছে।

সিদ্দারামাইয়া কর্নাটকের রাজ্যসভা সাংসদ হিসেবে মোদী সরকারের অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামনকেও তাঁদের সঙ্গে ধর্নায় যোগ দেওয়ার আমন্ত্রণ জানিয়েছিলেন। আজ সীতারামন বলেছেন, কংগ্রেস বিচ্ছিন্নতাবাদের বিষাক্ত ভাষা বলছে। অন্য দলের মাথাতেও তারা এ সব ঢোকাচ্ছে। সম্প্রতি কর্নাটকের কংগ্রেস সাংসদ ডি কে সুরেশ বলেছিলেন, দক্ষিণ ভারতের প্রতি বৈষম্য হলে পৃথক রাষ্ট্রের দাবি উঠতে পারে। সীতারামনের বক্তব্য, ‘‘দক্ষিণের প্রতি এই বৈষম্যের অভিযোগ সাধারণ মানুষ তুলছেন না। কংগ্রেস নানা প্রতিশ্রুতি দিয়ে কর্নাটকে ক্ষমতায় এসেছিল। এখন ঠেলা সামলাতে না পেরে কেন্দ্রকে দুষছে।’’

অর্থ মন্ত্রক সূত্রের বক্তব্য, পঞ্চদশ অর্থ কমিশন রাজ্যের মানুষের আয়, জনসংখ্যা, রাজ্যের এলাকা, বন-পরিবেশ, জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণ, নিজস্ব কর আদায়ের উদ্যোগের ভিত্তিতে রাজ্যগুলির মধ্যে কে কতখানি কেন্দ্রীয় করের ভাগ পাবে, তা ঠিক করেছে। সেই অনুযায়ী কর্নাটকের করের ভাগ কমেছে। কর্নাটকের নেতাদের প্রশ্ন, দক্ষিণের রাজ্যগুলি উত্তর ভারতের তুলনায় জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণে ভাল কাজ করে থাকলে তার খেসারত দিতে হবে কেন!

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement