প্রধানমন্ত্রী মণিপুরে গেলে আন্দোলন জোরদার করত দু’পক্ষই, দাবি শাহের।
Lok Sabha Election 2024

সন্দেশখালি আদতে তোষণের রাজনীতি: শাহ

ভোটের প্রচারে শিলিগুড়িতে এসেছিলেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ। কথা বললেন ঈশানী দত্ত রায় এবং দেবাশিস চৌধুরী।

Advertisement
শেষ আপডেট: ২২ এপ্রিল ২০২৪ ০৯:০১
Share:

শিলিগুড়িতে অমিত শাহ। ছবিঃ কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর দফতরের সৌজন্যে।

প্রশ্ন: বিধানসভা ভোটের আগে আপনি দাবি করেছিলেন, ২০০-র বেশি আসন পাবেন। কিন্তু বাস্তবে দেখা গিয়েছে, একশোও পেরোয়নি বিজেপি। এ বারেও দাবি করছেন, ৩০ থেকে ৩৫টা আসন পাবেন। এটা কি স্নায়ুর খেলা? নাকি সত্যিই হিসাব, যেটা মাঝে মাঝে ভুল প্রমাণিত হয়?

Advertisement

অমিত শাহ: আপনি আরও একটু পিছনে চলে যান। ২০১৯-এর লোকসভা ভোটে ২১টি আসন পাব বলেছিলাম। ১৮টি জিতেছিলাম। এই হিসাবে চললে ৩৫ এসে দাঁড়াবে ৩০-৩২ আসনে। কিন্তু আপনার শুধু বিধানসভা মনে আছে। এটাই আশ্চর্য লাগছে।

প্রশ্ন: কিন্তু ২০০ আসন তো বিশাল দাবি!

Advertisement

শাহ: ২০১৯ সালে ২১ আসন জেতার দাবিও বড় ছিল। সেটা তো আপনার মনে নেই। উদ্বেগের ব্যাপার।

প্রশ্ন: প্রধানমন্ত্রী সারা দেশে বিজেপির জন্য ৩৭০ আসনের লক্ষ্য বেঁধে দিয়েছেন। কোথা থেকে বাড়তি আসন আসবে?

শাহ: আমরা বাংলা থেকে ৩০-এরও বেশি আসন পাব। অন্ধ্রপ্রদেশে এনডিএ-র ঝড় হবে। তামিলনাড়ুতেও আমাদের আসন সংখ্যা বাড়বে। তেলঙ্গানায় বিজেপি ১০টির বেশি আসন পাবে। ওড়িশাতেও আমরা বড় জয় পাব। এই সব যোগ করলে বিজেপি ৩৭০ পেরিয়ে যাবে এবং এনডিএ ৪০০ আসনের লক্ষ্য ছুঁয়ে ফেলবে।

প্রশ্ন: ২০১৯-এ আপনারা উত্তর ও মধ্য ভারতে চুড়োয় উঠে গিয়েছিলেন। তার থেকে আর কী বাড়বে?

শাহ: যখন ২৭২ জিতেছিলাম, লক্ষ্য ছিল ৩০০। তখন আমাকে একই প্রশ্ন সবাই করেছিল, কোথা থেকে আসন বাড়বে? দেখা গেল, বাংলা থেকে আসন বেড়ে গেল। এ বারে পূর্ব এবং দক্ষিণ ভারতে আসন সংখ্যা বাড়বে।

প্রশ্ন: তা হলে রামমন্দির কি পূর্ব ও দক্ষিণ ভারতে প্রভাব ফেলবে?

শাহ: রামমন্দির থেকে ফায়দা হবে। কারণ, সারা দেশের মানুষের ইচ্ছে ছিল, রামমন্দির তৈরি হোক। সংখ্যালঘু ভোটের জন্য পূর্ব ভারতে প্রভাবশালী সব দল রামমন্দিরের বিরোধিতা করেছে। তাই রামমন্দিরের ফায়দা বিজেপির হবে। এ ছাড়া, পূর্ব ভারতে দেশের বাকি অংশের থেকে উন্নয়ন কম হয়েছে। বাংলাকেই দেখুন। স্বাধীনতার সময়ে সারা দেশে এই রাজ্য যেখানে ছিল, আজ কি তা রয়েছে? কেন এমন অবস্থা? কারণ, সংখ্যালঘু তোষণকেই রাজনীতি বলে মনে করা হয়েছে। উন্নয়ন কিছু হয়নি। এই ভাবে ওড়িশাতেও পরিবর্তন হয়নি। তেলঙ্গানা, অন্ধ্রপ্রদেশে দুর্নীতি চলছে। এই সব কিছু নিয়ে সাধারণ মানুষ
রায় দেবেন।

প্রশ্ন: আপনারা দুর্নীতির কথা বলছেন আর বিরোধীরা বলছেন, ‘ওয়াশিং মেশিন’ বিজেপি। কারণ আপনি ভাল ভাবেই জানেন, ২০-৩০ জন এমন নেতা আছেন, যাঁদের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ ছিল বা আছে এবং তাঁরা আপনাদের দলে যোগ দিয়েছেন। সেই তালিকায় আছেন প্রফুল্ল পটেল, শুভেন্দু অধিকারী প্রমুখ। তাঁরা আপনাদের দলে যোগ দেওয়ার পরে হয় মামলা বন্ধ হয়ে গিয়েছে, নয়তো কোনও অগ্রগতিই হয়নি।

শাহ: কোন মামলা বন্ধ হয়েছে?

প্রশ্ন: কোনও অগ্রগতিই হয়নি। নারদ মামলায় কী হয়েছে?

শাহ: দেখুন, বিরোধীদের মামলাও কিন্তু এগোয়নি। রাহুল গান্ধী, সনিয়া গান্ধীর বিরুদ্ধে মামলাও এগোয়নি। পি চিদম্বরমের মামলা এগোয়নি। মামলা এগোবে কি না, সেটা আদালত বলবে। তা হলে কি আপনারা চান, সরকার এ বারে আদালতকেও চালিয়ে নিয়ে যাক? তা হলে আদালতের দায় আপনারা কী ভাবে সরকারের উপরে চাপাচ্ছেন?

প্রশ্ন: কিন্তু রাহুল, সনিয়াকে তো তদন্তকারী এজেন্সিগুলি ডেকেছে।

শাহ: এফআইআর হয়ে গিয়েছে। কিন্তু মামলা এগোচ্ছে না।

প্রশ্ন: প্রফুল্ল পটেল এবং শুভেন্দু অধিকারীর ক্ষেত্রে কী হচ্ছে?

শাহ: সব মামলা আদালতে রয়েছে। আমরা একটা মামলাও তুলে নিইনি।

প্রশ্ন: কিন্তু ওঁদের মামলা তো এগোচ্ছে না। তা হলে?

শাহ: সবার ক্ষেত্রেই একই পরিস্থিতি। তৃণমূলের কোন অভিযুক্তের সাজা হয়েছে?

প্রশ্ন: প্রাক্তন শিক্ষামন্ত্রী জেলে রয়েছেন।

শাহ: জেলে আছেন, কারণ তিনি জামিন পাচ্ছেন না। কিন্তু সাজা কি হয়ে গিয়েছে? হয়নি। এটা দীর্ঘ প্রক্রিয়া।

প্রশ্ন: তা হলে আপনি ওয়াশিং মেশিন অভিযোগের মোকাবিলা কী ভাবে করবেন?

শাহ: কারও মামলাই তো তুলে নেওয়া হয়নি। তা হলে ওয়াশিং মেশিন কোথায়?

প্রশ্ন: প্রফুল্ল পটেলের তদন্ত তো বন্ধই করে দেওয়া হয়েছে।

শাহ: একেবারেই না। পাঁচটি মামলা ছিল। একটি মামলা বন্ধ হয়েছে। চারটি মামলায় চার্জশিট হয়ে গিয়েছে। তাঁকে সেই সব মামলার মুখোমুখি হতে হচ্ছে।

প্রশ্ন: পশ্চিমবঙ্গে বিরোধীদের অভিযোগ, কেজরীওয়াল গ্রেফতার হয়েছেন, কিন্তু ইডি, সিবিআই ডাকলেও অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের ক্ষেত্রে তদন্ত খুব বেশি দূর এগোয়নি। বিরোধীরা আরও দাবি করছেন, বিজেপির সঙ্গে তৃণমূল শীর্ষ নেতৃত্বের ‘ডিল’ হয়েছে।

শাহ: মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে কোনও ডিলের প্রশ্নই নেই। বিজেপির প্রধান লক্ষ্যই হল মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সরকারকে শিকড়সুদ্ধ উপড়ে ফেলা। যিনি সন্দেশখালির মতো ঘটনাকে ভোটব্যাঙ্কের রাজনীতির জন্য আড়াল করেছেন, এমন দল আর নেতৃত্বের সঙ্গে আমরা এক সেকেন্ডের জন্যও বসতে পারব না। প্রশ্নই ওঠে না।

প্রশ্ন: তা হলে মামলা যেমন চলার, তেমনই চলবে এবং যে ভাবে শেষ হওয়ার তেমনই হবে?

শাহ: সেটা তো এজেন্সির কাজ। আমাদের কিছু করার নেই এখানে।

প্রশ্ন: সন্দেশখালি নিয়ে বিজেপি গোটা রাজ্যে প্রচার করছে। আপনারা কি মনে করছেন, এই প্রচারের ফল মিলবে? বিশেষ করে উত্তরবঙ্গের মতো জায়গায়, যা কি না সন্দেশখালির থেকে অনেকটা দূরে?

শাহ: অবশ্যই হবে। শুধু বাংলায় নয়। সারা ভারতে। সে জন্য বিরোধীরা মমতাকে কোথাও প্রচারে ডাকছে না।

প্রশ্ন: তিনি অসমে গিয়েছেন।

শাহ: তিনি তো সেখানে নিজের দলের জন্য গিয়েছেন। কোনও দলই ডাকেনি। কারণ সকলের ভয় আছে যে, সন্দেশখালির ভূত তাদেরও না ধরে ফেলে!

প্রশ্ন: সন্দেশখালির পরে একাধিক কমিশন রাষ্ট্রপতি শাসন জারির সুপারিশ করেছে। এই নিয়ে কোনও ভাবনাচিন্তা আছে আপনাদের?

শাহ: আমরা কখনওই বলিনি যে রাষ্ট্রপতি শাসন জারি হবে। হাই কোর্ট দায়িত্ব দিয়েছে, সিবিআই তদন্ত করছে।

প্রশ্ন: সিএএ কি বাংলায় আপনাদের রাজনৈতিক সুবিধা দেবে?

শাহ: সিএএ আমরা রাজনৈতিক সুবিধা পাওয়ার জন্য করছি না। আমরা মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় নই যে, প্রতিটি বিষয়ে লাভ-লোকসান খুঁজব। একটা কথা বলুন, ও-পার বাংলা থেকে যে শরণার্থীরা এসেছেন, তাঁদের নাগরিকত্ব পাওয়া উচিত, না কি উচিত নয়?

প্রশ্ন: তাঁরা তো সবাই ভোটার।

শাহ: কিন্তু বেআইনি।

প্রশ্ন: যদি বেআইনি-ই হয়, তা হলে তাঁরা ভোটার কার্ড পেলেন কী করে?

শাহ: যখনই তদন্ত হবে, ধরা পড়ে যাবেন ওঁরা। কিছু লোক ধরা পড়েও গিয়েছেন।

প্রশ্ন: আমরা কিন্তু মতুয়াদের প্রসঙ্গে বলছি। মতুয়াদের তো ভোটার কার্ড, আধার কার্ড রয়েছে। তাঁরা প্রতিটি নির্বাচনে ভোট দিচ্ছেন।

শাহ: যদি কেউ না-ই থাকে, তা হলে সিএএ নিয়ে মমতা দিদির এত ভয় কেন? ওঁর তো স্বাগত জানানো উচিত।

প্রশ্ন: মতুয়াদের একশো শতাংশ লোকের আবেদনই তো আর গৃহীত হবে না। কারও কারও হয়তো আবেদন খারিজও হয়ে যাবে। তা হলে সেই সব লোকজনের অবস্থা কী হবে?

শাহ: ওঁদের কিছু হবে না। মমতা দিদি মিথ্যে বলছেন। আইনেই বলা আছে যে, এঁদের বিরুদ্ধে কোনও ফৌজদারি মামলা হবে না। এখনকার ‘স্টেটাস’ বদলাবে না। সম্পত্তির ক্ষেত্রেও কোনও সমস্যা হবে না। সব ধরনের রক্ষাকবচ আইনেই রয়েছে।

প্রশ্ন: তা হলে, আবেদন খারিজ হয়ে গেলে সেই মানুষটি কী করবেন?

শাহ: আবেদন খারিজ হবে, কারণ, তিনি এর মধ্যেই নাগরিক। তাঁর নাগরিকত্ব প্রমাণিত হয়ে যাবে। ভবিষ্যতে তাঁর নাগরিকত্বকে কেউ চ্যালেঞ্জ করতে পারবে না। কর্তৃপক্ষই সেটা প্রমাণ করে দেবেন। মমতার প্রয়োজন পড়বে না।

প্রশ্ন: ভয়ের কোনও বিষয় নেই বলছেন?

শাহ: কোনও প্রশ্নই নেই। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সংখ্যালঘুদের খুশি করার জন্য এই সব মিথ্যে বলছেন।

প্রশ্ন: কিন্তু আবেদনপত্রে তো লিখতে হবে, আমি বাংলাদেশ থেকে এসেছি। তা হলে আবেদন খারিজ হয়ে গেলে তো সেই লেখাটা থাকছেই। তা হলে আমি এই দেশে থাকব কী করে?

শাহ: আবেদন খারিজ তখনই হবে, যখন আপনার নাগরিকত্ব পাওয়ার জন্য আবেদন করার কোনও প্রয়োজনই থাকবে না। আপনি এর মধ্যেই নাগরিক হয়ে গিয়েছেন। সেটাই কর্তৃপক্ষের শংসাপত্র।

প্রশ্ন: মতুয়ারা সংশয়ে রয়েছেন। তাঁরা আবেদনই করছে না। রাজবংশীদেরও একাংশ সিএএ-র বিরোধিতা করছেন। এঁদের কী ভাবে বোঝাবেন?

শাহ: এটা আদর্শের বিষয়। বাংলাদেশ থেকে যে শরণার্থীরা এসেছেন, তাঁদের এই দেশের উপরে অধিকার আছে বলেই বিজেপি মনে করে। তাঁদের নাগরিকত্ব দেওয়া উচিত। কে খুশি হল, কে অখুশি, তা দেখে বিজেপি সিদ্ধান্ত নেয় না।

প্রশ্ন: রামমন্দিরের পরে এ বারে কাশী, মথুরা নিয়েও জোরদার আলোচনা শুরু হয়েছে। তা হলে কি ‘এক দেশ এক ধর্মের’ দিকে আমরা এগোচ্ছি?

শাহ: এক দেশ এক ধর্মের কোনও প্রশ্নই ওঠে না। আপনার আদালতকে তো মানেন? রামমন্দিরের রায় তো সুপ্রিম কোর্ট দিয়েছিল। আপনারা কি সুপ্রিম কোর্টকেও মানবেন না? শুধু রাজনীতি করবেন? সুপ্রিম কোর্ট কি একটি ধর্মের হয়ে কথা বলতে পারে?

প্রশ্ন: কিন্তু কাশী এবং মথুরার কী হবে?

শাহ: মামলা কোথায় রয়েছে? নিম্ন আদালতে। উচ্চতর আদালত পর্যন্ত যাবে।

প্রশ্ন: কিন্তু কেউ তো মামলাটা করছে। কোর্ট তো স্বতঃপ্রণোদিত সিদ্ধান্ত নেয়নি।

শাহ: সেটাই তো হয়। কেউ তো মামলাটা করবে।

প্রশ্ন: তা হলে আপনি বলছেন, এক দেশ এক ধর্মের প্রশ্ন নেই?

শাহ: কোনও প্রশ্ন নেই। সরকারের নাক গলানোরও প্রশ্ন নেই। আদালত যে সিদ্ধান্ত নেবে, তার উপরে দেশ চলবে।

প্রশ্ন: সিএএ-র পরে কি এনআরসি হবে?

শাহ: একটা কথা স্পষ্ট করে দিচ্ছি। আমরা সিএএ করেছি। দেশ জুড়ে আবেদনপত্র জমা পড়ছে। স্ক্রুটিনি করে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। এখন আমরা এনআরসি-র কথা কিছু বলিনি।

প্রশ্ন: অনন্ত মহারাজ দীর্ঘদিন ধরে আলাদা রাজ্যের দাবি জানিয়ে আসছেন। তাঁকেই বিজেপি রাজ্যসভায় পাঠিয়েছে। তা হলে এই দাবিকে কি বিজেপি মান্যতা দিচ্ছে?

শাহ: না, আমরা মান্যতা দিচ্ছি না।

প্রশ্ন: তা হলে অনন্তকে কেন বিজেপি রাজ্যসভায় পাঠাল?

শাহ: আমাদের পার্টির সিদ্ধান্ত সেটা। আমাদের দল পরিবারতান্ত্রিক দল নয়। যে কেউ তার সিদ্ধান্ত জানাতে পারে সেখানে। একাধিক মত আসতেই পারে। কিন্তু দলের একটা নীতি আছে। বাংলার বিভাজনের দাবি বিজেপি মানে না।

প্রশ্ন: দার্জিলিঙেও বিমল গুরুং আপনাদের সঙ্গী। তাঁরও তো একই দাবি।

শাহ: তিনি তো দাবি করতেই পারেন। তাঁর অধিকার। আপনারা কেমন দেশ চান? যেখানে কেউ কোনও দাবিই করবেন না? ওঁরা দাবি জানাবেন। বিজেপি দলীয় নীতির ভিত্তিতে চলবে।

প্রশ্ন: আপনারা চারশো পার করার লক্ষ্য নিয়েছেন এ বারে। চারশো আসন পেলে কি সংবিধান বদলে সমাজতান্ত্রিক এবং ধর্মনিরপেক্ষ শব্দ দু’টি বাদ দেবেন?

শাহ: বিরোধীরা জনগণের মধ্যে আশঙ্কা তৈরি করতে চাইছেন চারশো আসন নিয়ে। আমরা দুই-তৃতীয়াংশ গরিষ্ঠতা নিয়ে কী করেছি? সংবিধানের ৩৭০ ধারা সরাতে, সিএএ আনতে আর তিন তালাক বন্ধ করতে এর ব্যবহার করেছি। এর পরে অভিন্ন দেওয়ানি বিধি আনার জন্য করব। এই সব ক’টিই গণপরিষদে নেওয়া সিদ্ধান্ত। সংখ্যালঘু ভোটের জন্য সংবিধানের কথাও কি বিরোধীরা মানবে না? তিন তালাক বা অভিন্ন দেওয়ানি বিধি তো গণপরিষদের নির্দেশমূলক নীতির (গাইডিং প্রিন্সিপাল) অনুচ্ছেদ ৪৪-এ রেখেছে। সেখানে বলা আছে, যদি সুযোগ আসে তবে দেশের সংসদ ও রাজ্যের বিধানসভাগুলির সব নাগরিকের জন্য সমান আইন তৈরি করা উচিত।

প্রশ্ন: তা হলে এর পরের অ্যাজেন্ডা ইউসিসি বা অভিন্ন দেওয়ানি বিধি?

শাহ: এটা ১৯৫০ সাল থেকে আমাদের অ্যাজেন্ডায় আছে। রামমন্দির, সিএএ, তিন তালাক, সবই আমাদের অ্যাজেন্ডায় বরাবর ছিল। উত্তরাখণ্ড সরকার এর মধ্যেই ইউসিসি পাশ করিয়েছে। এটা বড় সামাজিক সংস্কার। এই বিষয়টিকে আইনি এবং সংসদীয় দিক থেকে খতিয়ে দেখা দরকার। সামাজিক দিক থেকেও খতিয়ে দেখা দরকার। আদালতও দেখবে নিশ্চয়ই।

প্রশ্ন: তা হলে বলা যেতে পারে, এই নিয়ে আলোচনা, চর্চা করে তবেই আইন চালু হবে?

শাহ: অবশ্যই। আলোচনা তো শুরু হয়েও গিয়েছে।

প্রশ্ন: সংবিধান থেকে আপনারা কি সমাজতান্ত্রিক এবং ধর্মনিরপেক্ষ শব্দ দু’টি সরিয়ে দেবেন? হ্যাঁ কি না?

শাহ: আমরা সংকল্পপত্র প্রকাশ করেছি। তার উপর ভিত্তি করেই পাঁচ বছর সরকার চলবে।

প্রশ্ন: ২০২৬ সালের বিধানসভা ভোটের জন্য আপনারা কোনও মুখ্যমন্ত্রীর মুখ ভেবে রেখেছেন?

শাহ: এখন তো এই ধরনের কোনও ভাবনা নেই। সেটা পরে ঠিক করব, কোনও মুখ থাকবে কি না, থাকলেও কে সেই মুখ হবেন।

প্রশ্ন: একটা র‌্যাপিড ফায়ার প্রশ্ন: অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায় না শুভেন্দু অধিকারী?

শাহ: বললাম যে কিছু ঠিকই হয়নি। যখন ঠিক হবে, জানিয়ে দেব।

প্রশ্ন: অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়কে গান্ধী না গডসে জিজ্ঞেস করায়, তিনি কোনও জবাব দেননি। জানিয়েছেন, গডসের লেখা পড়ে তার পরে জানাবেন। অথচ প্রধানমন্ত্রী নিজে জাতির জনককে শ্রদ্ধা জানান। তা হলে এই মন্তব্যকে আপনি কী ভাবে দেখছেন?

শাহ: উনি ঠিক কী বলেছেন, আমি জানি না। তবে বিজেপি তাদের প্রতিষ্ঠার শুরুর দিন থেকেই জাতির জনককে সম্মান করে। তাঁর সিদ্ধান্তের বিরোধিতাও আমরা করিনি।

প্রশ্ন: আপনার কী মনে হয়, দুর্নীতি আর সন্দেশখালির মধ্যে কোনটা এখন বড় বিষয়?

শাহ: দু’টো সম্পূর্ণ আলাদা। বাংলায় যেখানে অর্ধেক লোকের খাওয়া জোটে না, সেখানে কোনও মন্ত্রীর বাড়ি থেকে পঞ্চাশ কোটিরও বেশি নগদ টাকা উদ্ধার হচ্ছে। কোটি কোটি যুবকের যখন চাকরি নেই, তখন নিয়োগ দুর্নীতিতে মন্ত্রীর জেলে যাওয়া বাংলার সরকারের ব্যর্থতা। মন্ত্রীদের দুর্নীতির উপরে মমতার নিয়ন্ত্রণই নেই। এত বিপুল দুর্নীতি বামেদের আমলেও হয়নি। মমতা এই দুর্নীতিগ্রস্তদের সাজা দেওয়ার বদলে তাঁদের এজেন্সির হাত থেকে বাঁচাতে চাইছেন। যদি মনে হয় এজেন্সি বাড়াবাড়ি করছে, তা হলে আদালতে যান।

প্রশ্ন: অভিষেক তো সুপ্রিম কোর্টে গিয়েছেন।

শাহ: এর মধ্যে তো কোনও আপত্তি নেই। কিন্তু কেউ ধরা পড়ার পরেও আপনি তাকে পার্টি থেকে বরখাস্ত করছেন না। জনতা মনে করে, মমতার সরকার দুর্নীতিগ্রস্তকে আড়াল করছে। আর সন্দেশখালি তো তোষণের সেরা উদাহরণ। এই তোষণের ফলে গরিব মহিলাদের উপরে যে অত্যাচার হয়েছে, তা দেখেও দেখেনি প্রশাসন। ভোটব্যাঙ্কের লোভ কোন জায়গায় পৌঁছতে পারে, এটা তার সেরা উদাহরণ। এত বছর ধরে এমন অত্যাচার করেছে যে, তার কোনও ভয়ডরও ছিল না। তৃণমূল কংগ্রেসের সঙ্গে সে যুক্তও ছিল এত বছর ধরে। ওকে ধরার জন্য হাই কোর্টকে নির্দেশ দিতে হয়। সেই মামলারও তদন্তে নিরপেক্ষতা নেই। তাই সেই তদন্ত সিবিআইয়ের হাতে তুলে দিতে হয়। কোনও সরকারের পক্ষে এর থেকে লজ্জাজনক আর কিছু হতে পারে না।

প্রশ্ন: অভিযোগ নিয়ে যখন আলোচনাই হচ্ছে, কেজরীওয়ালকে গ্রেফতার করা হয়েছে দুর্নীতির অভিযোগে। যদিও সময় নিয়ে বিরোধীদের প্রশ্ন রয়েছে। কংগ্রেসের সঙ্গে ওঁর আসন সমঝোতা হওয়ার পরেই উনি গ্রেফতার হন।

শাহ: ছ’মাস ধরে কেজরীওয়ালকে ইডি ডাকছিল। উনি যানইনি। তখন ইডি আদালতে যায়। আদালত জামিন অযোগ্য পরোয়ানা জারি করে। তখন কংগ্রেস এর সমাধান করল না কেন? সময় তো কেজরীওয়ালই ঠিক করেছেন। এজেন্সি করবে কেন? প্রথম সমনেই যদি উনি চলে যেতেন তা হলে ভোটের অনেক আগেই ওঁকে হয়তো গ্রেফতার করা হত।

প্রশ্ন: ব্রিজভূষণ শরণ সিংহের বিরুদ্ধেও যৌন হেনস্থার অভিযোগ রয়েছে। সোনার পদক পাওয়া মহিলা কুস্তিগিরেরাই এই অভিযোগ এনেছেন। বিজেপি কি ওঁকে আড়াল করছে না?

শাহ: বিজেপি কোথায় আড়াল করছে? মামলা তো আদালতে আছে। আদালত যে কোনও সময়ে নির্দেশ দিতে পারে।

প্রশ্ন: কিন্তু আপনারা ওঁকে দল থেকে বরখাস্ত করেননি।

শাহ: আদালত আগে বলুক। আর এ দিকে যিনি জেলে বসে মুখ্যমন্ত্রিত্ব করছেন, তাঁর ব্যাপারে কিছু জানতে চাইবেন না!

প্রশ্ন: তা কেন? নিশ্চয়ই আছে প্রশ্ন।

শাহ: না না। আর যাঁর উপরে শুধু অভিযোগ রয়েছে...

প্রশ্ন: (ব্রিজভূষণকে নিয়ে) অভিযোগ তো সোনাজয়ী কুস্তিগিরেরা তুলেছেন।

শাহ: সে তো ঠিক। কিন্তু সেটা তো অভিযোগ। মামলা তো দূরের কথা, আদালত তো সেই অভিযোগকে মান্যতাই দেয়নি (যদিও দিল্লির অতিরিক্ত মুখ্য মেট্রোপলিটান আদালত ব্রিজভূষণের বিরুদ্ধে চার্জগঠন বিষয়ে রায়দান আপাতত মুলতুবি রেখেছে)।

প্রশ্ন: তা হলে আপনি মনে করছেন, কেজরীওয়াল তাঁর গ্রেফতারি নিয়ে রাজনীতি করছেন?

শাহ: দুর্নীতির বিরুদ্ধে লড়াই করতে দল গঠন করেছিলেন কেজরীওয়াল। ক্ষমতায় এসেছিলেন। এখন তিনি দুর্নীতির মামলাতেই গ্রেফতার হয়েছেন। সেই জন্যই তিনি ভুল অভিযোগ তুলে রাজনীতি করছেন। যিনি বলতেন, আমি সরকারি বাংলো নেব না, তিনিই কোটি কোটি টাকা খরচ করে নতুন বাংলো বানিয়েছেন। পাশের প্লটের অংশ নিয়ে নিয়েছেন। আর উনি নৈতিকতার কথা বলছেন!

প্রশ্ন: এই রাজনীতি কি ভোটে ওঁর সুবিধা করে দেবে?

শাহ: দুর্নীতির মামলায় যদি কাউকে গ্রেফতার করলে সে ভোটে সুবিধা পায়, তা হলে কি তাকে গ্রেফতার করা হবে না? পার্থ চট্টোপাধ্যায়কে কি আমরা তা হলে গ্রেফতার করব না?

প্রশ্ন: ইলেক্টোরাল বন্ড নিয়ে আপনি সম্প্রতি বলেছেন, এর থেকে কংগ্রেস, তৃণমূল সবাই সুবিধা পেয়েছে। তা হলে বিজেপিকেই কেন শুধু দোষারোপ করা হচ্ছে? কিন্তু আমার প্রশ্ন হচ্ছে, এত লুকোছাপা কেন? যে কেউ তো যে কোনও রাজনৈতিক দলকে টাকা দিতে পারে।

শাহ: সহজ করে বলি। ইলেক্টোরাল বন্ড আসার আগে দলগুলি কী ভাবে চলত?

প্রশ্ন: কর্পোরেট ডোনেশনের মতো কিছু পদ্ধতিতে টাকা তুলত।

শাহ: সব দলের ৯৫ শতাংশ চাঁদা ২০ হাজার টাকা করে রসিদ কেটে নেওয়া হত। সেই টাকা আসত নগদে। বন্ড আসার পরে চেকে চাঁদা দেওয়া শুরু হল। যে সংস্থাগুলি বন্ড কিনেছে, তাদের ব্যালান্স শিটে দেখাতে হবে। যে পার্টি বন্ড পেয়েছে, তাদেরও ব্যালান্স শিটে দেখাতে হবে। গোপনীয়তা রাখা হয়েছে কারণ, যদি তৃণমূলকে বন্ড কিনে টাকা দেয়, তার প্রতি যেন বিজেপি প্রতিহিংসামূলক অবস্থান না নেয়। কেউ যদি বিজেপিকে টাকা দেয়, তার প্রতি যেন তৃণমূল প্রতিহিংসামূলক অবস্থান না নেয়। এটাই একমাত্র উদ্দেশ্য। এখন বন্ড বেআইনি হয়ে গেল। আবার নগদে লেনদেন ফিরে আসবে। নগদের ব্যবহার দেশের রাজনীতিতে বন্ধ হওয়া উচিত কি উচিত নয়?

প্রশ্ন: অবশ্যই। তবে দেখা যাচ্ছে, কিছু কিছু সংস্থায় এজেন্সির তল্লাশির পরেই তারা বিজেপিকে বড় অনুদান দিয়েছে।

শাহ: বড় অনুদান বলতে আপনি কী বোঝাচ্ছেন?

প্রশ্ন: অরবিন্দ ফার্মার শরৎচন্দ্রের তরফেই তো বিজেপিকে মোটা টাকা দেওয়া হয়েছে, গ্রেফতারির পরে।

শাহ: তল্লাশি বা তদন্ত, এগুলো তো নিয়মিত চলে। অনেক সংস্থার ক্ষেত্রেই তা নিয়মিত চলতে থাকে। এর উপরে ভিত্তি করে কেউ চাঁদা দেয় না। আমরা কাগজেকলমে টাকা নেওয়ার ব্যবস্থা চালু করার পরেই এটা জানা গেল। আগে যারা নগদে চাঁদা দিত, তাদের সংস্থায় তল্লাশি হত না? যে সংস্থায় তল্লাশি হত, সে-ই নগদে চাঁদা দিত।

প্রশ্ন: সুপ্রিম কোর্ট তো এই বিষয়টা সামনে এনেছে। আদালতের নির্দেশেই তো নামগুলো জানা গেল।

শাহ: আমরা তো সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ মেনে নিয়েছি। তবু আজ আবার বলব, নগদ চালু হলে রাজনীতিতে কালো টাকা বাড়বে।

প্রশ্ন: এর আগে লোকসভা ভোটে কালো টাকা ফেরানোর প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল বিজেপি। নীরব মোদীদের দেশে আনবে বলেও দাবি করেছিল।

শাহ: আমরা কোথায় এমন প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলাম? এই সব ঋণই কংগ্রেসের সময় দেওয়া হয়েছিল। তার পরে ওরা দেশের বাইরে চলে যান। আমরা কঠোর আইন তৈরি করেছি। বিদেশেও যদি সম্পত্তি থাকে, তা বাজেয়াপ্ত করতে পারব এখন।

প্রশ্ন: কিন্তু ওরা তো আপনাদের সময়ে দেশ ছেড়ে পালিয়েছে।

শাহ: ওই সময় তো কেউ জানতই না যে, ওরা এত বড় দুর্নীতি করেছে।

প্রশ্ন: ওদের দেশে ফেরাতে আপনারা এখন কী করছেন?

শাহ: মামলা চলছে। ব্রিটেনে মামলা চলছে। ভারত সরকারের পক্ষে হরিশ সালভে সওয়াল করছেন।

প্রশ্ন: আর কালো টাকা?

শাহ: আমরা আইন বানিয়েছি। কেউ যদি কালো টাকা অন্য দেশের ব্যাঙ্কে রেখে থাকে, তা-ও ভারত সরকার ফিরিয়ে আনতে পারবে। বহু তদন্তও চলছে।

প্রশ্ন: আপনারা প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন, কালো টাকা ফিরে এলে দেশের মানুষের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে সেই টাকার অংশ দেওয়া হবে। সেই টাকা তো কেউ পেল না।

শাহ: আমরা অন্তত একটা আইন করেছি। সেই লক্ষ্যে কাজ করছি। যে দলগুলি আমাদের কাছে হিসাব চাইছে, তারা এই কাজটুকুও করেনি। আর (নীরব মোদীরা) দেশ ছেড়েছিল, কারণ বিজেপি তত দিনে ক্ষমতায় চলে এসেছিল। ইউপিএ সরকার হলে তো ওদের দেশ ছাড়তেই হত না।

প্রশ্ন: আর বেকারত্ব?

শাহ: দশ বছর আগে তো ইউপিএ ছিল। তা হলে শুধু আমাদের উপরে অভিযোগ কেন? ওরাই তো ছেড়ে গিয়েছিল। কর্মসংস্থানের অর্থ শুধু সরকারি চাকরি পাওয়া নয়। বিজেপির সরকার স্বরোজগার যোজনার জন্য একাধিক প্রকল্প এনেছে। ১৩০ কোটির দেশে কি একশো শতাংশ সরকারি চাকরি সম্ভব? নরেন্দ্র মোদীর সময়ে যে পরিমাণ কর্মসংস্থান হয়েছে, তা কখনও হয়নি।

প্রশ্ন: বিজেপি বছরে দু’কোটি চাকরি দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল।

শাহ: আপনি যদি সব মিলিয়ে দেখেন, যেমন ধরুন, ৯ লক্ষ কোটি টাকার পরিকাঠামো উন্নয়ন, কোথাও রাস্তা বা বিমানবন্দর তৈরি হলে কারও না কারও তো কর্মসংস্থান হয়।

প্রশ্ন: সেটা তো অস্থায়ী কাজ।

শাহ: এক কাজ শেষ হলে সেই লোকটি তখন অন্য কাজ করবে। বাজেটে পরিকাঠামো ক্ষেত্রে ৯ লক্ষ কোটি টাকা একটা মাপকাঠি হয়ে দাঁড়িয়েছে। আগামী বছরেও ৯ লক্ষ কোটি টাকার বাজেট হবে। আর অস্থায়ী বলতে আপনি কী বোঝাচ্ছেন? সবাইকে তো সরকারি চাকরি দেওয়া সম্ভব নয়।

প্রশ্ন: সরকারের তো বহু পদ খালি রয়েছে।

শাহ: এক বছরে দশ লক্ষ লোককে চাকরি দেওয়া হয়েছে।

প্রশ্ন: কবে? কোন বছরে?

শাহ: এক বছরে, ২০২২-২৩ সালে পূরণ করে দেওয়া হয়েছে।

প্রশ্ন: সাম্প্রতিক আইএলও-র রিপোর্ট বলছে, শিক্ষিত যুবাদের মধ্যে বেকারত্বের হার বৃদ্ধি পেয়েছে। কেন?

শাহ: এরা স্থায়ী সরকারি চাকরি চায়।

প্রশ্ন: পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রীও কর্মসংস্থানের ক্ষেত্রে স্বরোজগারের উপরেই জোর দিচ্ছেন। এখানে আপনাদের মিল রয়েছে।

শাহ: আপনারাও বলুন।

প্রশ্ন: আপনারা যদি ৩০ বা তার বেশি আসন পান এই রাজ্য থেকে, তা হলে কি ২০২৫ সালেই এখানে বিধানসভা ভোট হয়ে যাবে?

শাহ: আমরা কখনও এমন কিছু বলিনি। আমরা সরকার ফেলে দেওয়ায় বিশ্বাস করি না। আমরা চেষ্টা করব, বিধানসভা ভোট যেন সময়ে হয়। তবে যদি তৃণমূল ভেঙে যায়, তা হলে আমরা কিছুই করতে পারব না।

প্রশ্ন: তা হলে কি তৃণমূলকে ভাঙার কোনও পরিকল্পনা আছে আপনাদের?

শাহ: আমাদের এমন কোনও পরিকল্পনা নেই।

প্রশ্ন: এক দেশ এক ভোট কবে থেকে চালু হবে?

শাহ: যত দ্রুত সম্ভব। সেটা ঠিক করবে সংসদ।

প্রশ্ন: আপনারা যদি এত গরিষ্ঠতা নিয়ে ক্ষমতায় আসেন, তা হলে তখন কোন কোন বিষয়ের উপরে গুরুত্ব দেবেন?

শাহ: আমাদের ঘোষণাপত্রে পরিষ্কার করে দেওয়া হয়েছে। দেশের অর্থনীতিকে আমরা তৃতীয় বৃহত্তম অর্থনীতি করব। দশ বছর আগে যখন ক্ষমতায় এসেছিলাম, দেশ তখন ১১ নম্বরে ছিল। এখন আমরা ৫ নম্বরে। এর পরে ৩ নম্বরে যাব। ঘরে ঘরে পাইপলাইনের মাধ্যমে গ্যাস পৌঁছনোর ব্যবস্থা করব। ৭০ বছর বা তার থেকে বেশি বয়স্কদের পাঁচ লক্ষ টাকার চিকিৎসা পুরো বিনাপয়সায় করানোর ব্যবস্থা করব। আগামী ৫ বছর বিনামূল্যে শস্যদানা দেব। তিন কোটি গরিবকে ঘর তৈরি করে দেব।

প্রশ্ন: এবং আপনাদের নতুন অর্থমন্ত্রী প্রয়োজন হবে। কারণ, নির্মলা সীতারমন আর ভোটে লড়বেন না।

শাহ: নির্মলা সীতারমন রাজ্যসভার সদস্য।

প্রশ্ন: অন্য প্রসঙ্গে আসি। আমরা সন্দেশখালি নিয়ে কথা বলছি। কিন্তু প্রধানমন্ত্রী তো মণিপুর যাননি। কেন?

শাহ: আমি তো গিয়েছি। থেকেছি। আমি কে? মোদীজির প্রতিনিধি। উত্তর-পূর্ব আর স্বরাষ্ট্র, দুটোই আমার দফতর।

প্রশ্ন: তবে প্রধানমন্ত্রী তো সর্বত্র যান। এখন মণিপুরের লোকজনের আশা ছিল, তিনি সেখানেও যাবেন। তাদের সঙ্গে কথা বলবেন।

শাহ: উনি দেশের প্রথম প্রধানমন্ত্রী যিনি সত্তর বারের থেকেও বেশি উত্তর-পূর্বে গিয়েছেন।

প্রশ্ন: সে জন্যই তো প্রশ্ন উঠছে, উনি মণিপুর গেলেন না কেন?

শাহ: কারণ, উনি গেলে দুই পক্ষই তাদের আন্দোলন বাড়িয়ে দেবে। প্রধানমন্ত্রী তো আমার কাছে, এজেন্সির কাছে জানতে চাইছেন, কী করা হল মণিপুর নিয়ে। আমি নিজে ওখানে গিয়ে থেকেছি। আমার প্রতিমন্ত্রী ২০ দিন ছিলেন।

বাংলা নিয়েও আমার কিছু বলার আছে। এখানে আইনশৃঙ্খলার অবস্থা, দুর্নীতি, অনুপ্রবেশ এবং রাজনীতির কারণে কেন্দ্রীয় সরকারের প্রকল্পের সুবিধা নীচের তলায় পৌঁছতে না দেওয়া— এগুলো পশ্চিমবঙ্গের সব থেকে বড় বিষয়। আইনশৃঙ্খলার অবস্থা নির্বাচন প্রক্রিয়া, গরিবের অধিকার এবং ন্যায়ে প্রভাব ফেলে। অনুপ্রবেশ প্রভাব ফেলে অর্থনীতিতে। আর মোদীজির জনপ্রিয়তা বেড়ে যাবে, এই আশঙ্কায় মমতাজি কেন্দ্রীয় প্রকল্পকে নীচের তলায় পৌঁছতে দেননি।

প্রশ্ন: কেন্দ্রীয় প্রকল্পের টাকা পাঠানো বন্ধ করে দিয়েছে বিজেপি সরকার। একশো দিনের কাজ, আবাস যোজনা, সবই আছে। দুর্নীতির অভিযোগ তো আছে। কিন্তু ক্ষতিগ্রস্ত তো হচ্ছেন সাধারণ মানুষ।

শাহ: ভাল হয়েছে আপনি জিজ্ঞেস করেছেন। অন্য যে সব রাজ্যে বিরোধী সরকার আছে, কোথাও কিন্তু টাকা আটকানো হয়নি। দুর্নীতি সেখানে নেই। কিন্তু এখান থেকে যদি হিসাবই দেওয়া না হয়, যদি দুর্নীতি হয়, তা হলে টাকা দেওয়া হবে কেন? টাকা তো সাধারণ মানুষের জন্য। তৃণমূলের গুন্ডাদের জন্য নয়।

প্রশ্ন: কিন্তু ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন তো সাধারণ মানুষ।

শাহ: সাধারণ মানুষ তো এমনিই ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। তাঁদের কাছে তো টাকা এমনিতেই যাচ্ছে না। এখন দিল্লিতে গিয়ে আন্দোলন করে তাঁদের বোকা বানানো হচ্ছে। বাংলার কোথাও কি গরিব মানুষ এর জন্য ধর্না দিচ্ছেন? দিল্লিতে কি কোনও গরিব ধর্না দিচ্ছেন? ওঁরা তো বরং খুশি হয়েছেন যে, টাকাটা তৃণমূলের লোকজনের হাতে যাচ্ছে না।

প্রশ্ন: আর একটা র‌্যাপিড ফায়ার প্রশ্ন: মন্দির না ক্ষুধা?

শাহ: এর মধ্যে কোনও বিরোধ নেই। মন্দির তার জায়গায়। আর প্রধানমন্ত্রী বিনা পয়সায় খাবার দিচ্ছেন।

প্রশ্ন: কিন্তু আন্তর্জাতিক ক্ষুধা সূচকে ভারত তো নেমে গিয়েছে।

শাহ: ও সব ছাড়ুন। যাঁরা মন্দির বানাননি, তাঁরা দেশকে ১১ নম্বরে রেখে গিয়েছিলেন। আর যাঁরা মন্দির বানিয়েছেন, তাঁরা দেশকে ৫ নম্বরে তুলে এনেছেন। ৩ নম্বরে নিয়ে যাবেন। আমরা গ্যাস, শৌচালয়, ঘর, বিদ্যুৎ, জল দিয়েছি। পাঁচ লক্ষ টাকা পর্যন্ত স্বাস্থ্যবিমা দিয়েছি।

প্রশ্ন: কিন্তু গ্যাসের দাম কত? মধ্যবিত্ত ভুগছেন। উজ্জ্বলা গ্যাসের উপভোক্তারা প্রথম সিলিন্ডার ফ্রিতে পেলেও তার পরে আর কিনতে পারছেন না।

শাহ: গ্যাসের দাম জিজ্ঞেস করার অধিকার তো মিলেছে ওঁদের। আগে তো জিজ্ঞেস করতেই পারতেন না।

প্রশ্ন: কিন্তু প্রথম গ্যাস সিলিন্ডারের পরে তো কিনতে পারছেন না। তখন কী হবে?

শাহ‌: আমরা তাঁদের আনাজ, চিকিৎসা সব বিনামূল্যে দিচ্ছি। তাঁদের তো পয়সা বাঁচছে।

প্রশ্ন: একটা একটু হালকা প্রশ্ন করছি। এত বার আপনি বাংলায় এসেছেন, আপনার পছন্দের খাবার কী?

শাহ: (হাসতে হাসতে) মিষ্টি দই।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement