Lok Sabha Election 2024

গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব বহাল, উদ্বেগে তৃণমূলের বহু নেতা-কর্মী

লোকসভা ভোটের আগে বিধানসভাভিত্তিক কোন দলের কী অবস্থা? প্রচারে কারা কোন বিষয়কে তুলে ধরছে? আজ, আমতা বিধানসভা কেন্দ্র।

Advertisement

নুরুল আবসার

আমতা শেষ আপডেট: ১৭ এপ্রিল ২০২৪ ০৮:৪২
Share:

—প্রতীকী ছবি

দলের প্রার্থী ঘোষণার পরে প্রায় এক মাস কেটে গিয়েছে। কিন্তু এখনও উলুবেড়িয়া লোকসভা কেন্দ্রের অধীন আমতা বিধানসভা কেন্দ্রের ৬০ শতাংশ দেওয়ালে তৃণমূল প্রার্থীর হয়ে কোনও প্রচার-লিখনই নেই!

Advertisement

এমন দাবি দলেরই ‘বিক্ষুব্ধ’ গোষ্ঠীর বেশ কিছু নেতা-কর্মীর। তাঁদের বক্তব্য, আমতায় দলের গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব যে ভাবে ব্যাপক আকার নিয়েছে, তা দলীয় নেতাদের একাধিকবার হস্তক্ষেপেও বন্ধ হওয়ার নাম নেই। পরিসংখ্যান বলছে, ২০১৯-এর লোকসভা ভোটের পর থেকে আমতায় তৃণমূলের ভোট কমছে। লোকসভা ভোটে এই কেন্দ্রে তৃণমূল ৩৭ হাজার ভোটে এগিয়ে ছিল। ২০২১-এ সেই ব্যবধান কমে। আমতা বিধানসভা কেন্দ্রেরই অধীন বাইনান পঞ্চায়েত এখন বাম-কংগ্রেস-আইএসএফ জোটের দখলে। ফলে, পরিস্থিতি যে তাঁদের দলের অনুকূলে খুব একটা নেই, তা স্বীকার করেছেন এই এলাকার তৃণমূলের নেতা-কর্মীদেরই একটা বড় অংশ।

এই পরিস্থিতিতে আগামী ২৯ এপ্রিল আমতার বাকসির মতো দুর্গম এলাকায় (থানা বাগনান) দলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের সভার মাধ্যমে সেই গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব ধামাচাপা দেওয়া হতে পারে বলে মনে করছেন তাঁদের অনেকে। ‘বিক্ষুব্ধ’দের মধ্যে রয়েছেন একাধিক গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রধান এবং দলীয় পদাধিকারীরা।

Advertisement

গ্রামীণ হাওড়ার এক তৃণমূল নেতা বলেন, ‘‘একাধিকবার দলীয় নেতৃত্বের হস্তক্ষেপেও যখন গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব বন্ধ করা যায়নি, তখন মেগা জনসভার মাধ্যমে তা যাতে আপাতত ধামাচাপা দেওয়া যায়, সেই কারণেই বাকসিকে অভিষেকের সভার জন্য বাছা হয়েছে।’’

আমতায় দলের এহেন পরিস্থিতির জন্য ‘বিক্ষুব্ধরা’ নিশানা করেছেন বিধায়ককে। তাঁদের অভিযোগ, বিধায়ক নিজের খেয়ালখুশি মতো চলছেন। প্রার্থীকে নিয়ে কর্মিসভা করলেও সকলকে ডাকা হচ্ছে না। তাঁদের দাবি, সমস্ত বিষয় তাঁরা দলের শীর্ষ নেতৃত্বকে জানিয়েছেন।

দলের গ্রামীণ জেলা সভাপতি অরুণাভ সেন অবশ্য বলেন, ‘‘কিছু ছোটখাটো সমস্যা ছিল। মিটে গিয়েছে।’’ একই দাবি করে বিধায়ক সুকান্ত পাল বলেন, ‘‘বিবাদ এখন অতীত। আমি সকলের সঙ্গে কথা বলেছি। কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে লড়াই করছি।’’

শাসকদলের এই গোষ্ঠীদ্বন্দ্বের সুযোগ কি নিতে পারছে বিরোধীরা?

রাজনৈতিক মহল মনে করছে, না। কারণ, বিরোধীদের সাংগঠনিক দুর্বলতা। গত লোকসভা নির্বাচনে আমতায় শাসকদলের সঙ্গে প্রধান বিরোধী দল বিজেপির যে ব্যবধান ছিল, তা ২০২১ সালের বিধানসভা নির্বাচনে অনেকটা কমে গেলেও তার রেশ তারা ধরে রাখতে পারেনি। গত বছরের পঞ্চায়েত নির্বাচনে এখানে বিজেপি কার্যত ধরাশায়ী হয়। বিজেপি অবশ্য তাদের সাংগঠনিক দুর্বলতার কথা মানতে চায়নি। দলের নেতা লালন ঈশ্বর বলেন, ‘‘পঞ্চায়েত নির্বাচনে ভোট লুট হয়েছে। তার ফল দেখে কিছু বলা যায় না। লোকসভা নির্বাচনে মানুষ তৃণমূলকে উচিত শিক্ষা দেওয়ার জন্য মুখিয়ে আছেন। প্রার্থীকে নিয়ে আমরা প্রচারে ঝাঁপিয়ে পড়েছি।’’

এই বিধানসভার সারদা গ্রামের ছাত্রনেতা আনিস খানের অপমৃত্যু হয়েছিল দু’বছর আগে। তখন থেকেই একযোগে আন্দোলন করেছে বাম-কংগ্রেস। আনিসের পরিবার সিপিএমের সঙ্গে যুক্ত। উলুবেড়িয়ায় বাম সমর্থিত কংগ্রেস প্রার্থী আজহার মল্লিক এখনও আনিসের অপমৃত্যুর বিচার চাইছেন। এখানে আইএসএফ প্রার্থী দিলেও বিষয়টিকে গুরুত্ব দিতে নারাজ কংগ্রেস প্রার্থী বলেন, "তৃণমূলকে হটাতে মানুষ বাম-কংগ্রেসকেই চাইছেন।’’

আমতা বিধানসভা এলাকাটি নদীঘেরা। দু’বছর আগে পর্যন্ত বন্যা এখানকার এলাকার বড় সমস্যা ছিল। বিশ্ব ব্যাঙ্কের টাকায় বন্যা নিয়ন্ত্রণের কাজ হয়েছে। তিনটি রাজ্য
সড়ক সম্প্রসারণের কাজ চলছে। ঝিকিরায় তৈরি হচ্ছে বাস স্ট্যান্ড। প্রায় প্রতি গ্রামে হয়েছে ঢালাই রাস্তা। ‘জল জীবন মিশন’ প্রকল্পে প্রতি বাড়িতে নলবাহিত পানীয় জল পৌঁছে দেওয়ার কাজ চলছে। কুলিয়াঘাটে পাকা সেতু হচ্ছে।

উন্নয়নের এ সব কাজকে হাতিয়ার করছেন তৃণণূল প্রার্থী সাজদা আহমেদ। তাঁর দাবি, ‘‘উন্নয়নের মূল কান্ডারী মুখ্যমন্ত্রী। তাঁর সহযোগিতা এবং পরামর্শে আমরা সবাই পিছিয়ে পড়া এলাকা আমতার অনেকটা পরিবর্তন ঘটিয়েছি। সেই উন্নয়নের স্বপক্ষেই মানুষ ভোট দেবেন।’’

বিজেপি এবং বাম-কংগ্রেসের পাল্টা অভিযোগ, উন্নয়নের নামে তৃণমূলের সর্বস্তরের নেতারা জনগণের টাকা লুট করেছেন। মানুষ তার যোগ্য জবাব দেবেন। তৃণমূল টাকা লুটের অভিযোগ নস্যাৎ করে দিয়েছে।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement