Lok Sabha Election 2024

ভোটের আগে দ্বিগুণ গতিতে পুকুর ভরাট চলছে হাওড়ায়

লোকসভা নির্বাচন নিয়ে বর্তমান সময়ে প্রশাসন ও পুলিশের ব্যস্ততা তুঙ্গে। প্রচারে ব্যস্ত সব রাজনৈতিক দল।

Advertisement

দেবাশিস দাশ

শেষ আপডেট: ০৯ এপ্রিল ২০২৪ ০৬:৩৪
Share:

আর্বজনা ফেলে বুজিয়ে ফেলার চেষ্টা হচ্ছে শিবপুরের রামচরণ চ্যার্টাজি লেনের ২০ কাঠার পুকুর। ছবি : দীপঙ্কর মজুমদার।

ছিল রুমাল, হয়ে গেল বিড়াল!

Advertisement

ছিল টলটলে জল ভরা পুকুর। নির্বাচন আসতেই বাড়ি ভাঙার আবর্জনা, নির্মাণ বর্জ্য, প্লাস্টিক-সহ নানা জঞ্জাল ফেলে ভরাট করার কাজ দ্বিগুণ গতিতে শুরু হওয়ায় সেই পুকুরের চরিত্র সরকারি ভাবে বদলে গিয়ে হয়ে যাচ্ছে বাস্তুজমি। এমনই অর্ধেক বা পুরো ভরাট করা পুকুরের উপরেই এর পরে বহুতল তৈরির নকশার অনুমোদন করিয়ে নিচ্ছে জমি-মাফিয়ারা।

লোকসভা নির্বাচন নিয়ে বর্তমান সময়ে প্রশাসন ও পুলিশের ব্যস্ততা তুঙ্গে। প্রচারে ব্যস্ত সব রাজনৈতিক দল। এই সুযোগে ভোটের আগে হাওড়া জুড়ে শুরু হয়েছে জমি-মাফিয়াদের পুকুর ভরাটের হিড়িক। বাদ যাচ্ছে না নবান্ন সংলগ্ন এলাকার পুকুরও। এলাকাবাসীর অভিযোগ, শিবপুর এলাকায় রাজ্যের প্রধান সচিবালয় নবান্ন তৈরি হওয়ার পরেই সেখানকার জমির দাম প্রায় ৫০ গুণ বেড়ে গিয়েছে। আর জমির দাম বাড়তেই সক্রিয় হয়ে উঠেছে জমি-মাফিয়ার দল। তাদের নজর পড়েছে নবান্ন থেকে সিকি মাইল দূরে থাকা গোরাচাঁদ রায় লেনের ১০ কাঠা পুকুর, বাজেশিবপুর সেকেন্ড বাইলেন বা রামচরণ চ্যাটার্জি লেনের একটি ২০ কাঠা পুকুর, শিবপুর রোডের জেলে গিন্নির ১৫ কাঠা পুকুরের উপরে। নবান্ন বাসস্ট্যান্ডের কাছেই বোজানো শুরু হয়েছে একটি ১৫ কাঠা পুকুর।

Advertisement

শুধু নবান্ন এলাকাই নয়, টিন দিয়ে ঘিরে পুকুর বোজানোর কাজ চলছে আন্দুল রোডের অরবিন্দ সরণিতেও। হাওড়া পুরসভার ৪৬ নম্বর ওয়ার্ডের ২ নম্বর সুলতানপুরের নস্করপাড়ায় ২০ কাঠার একটি পুকুর এবং হাঁসখালি পোলের কাছে দক্ষিণপাড়ার একটি ১৭ কাঠা পুকুর নিয়মিত নির্মাণ-বর্জ্য ফেলে ভর্তি করা হচ্ছে। এর মধ্যে সেগুলির অর্ধেকেরও বেশি অংশ বোজানো হয়ে গিয়েছে।

এই ভাবে একের পর এক পুকুর বোজানো শুরু হওয়ার পরেও প্রশাসনের পক্ষ থেকে কোনও সদর্থক পদক্ষেপ করা হচ্ছে না বলে অভিযোগ। যদিও এর বিরুদ্ধে এগিয়ে এসেছেন‌ এলাকার বাসিন্দারা। রামচরণ চ্যাটার্জি লেনে এলাকাবাসীদের নিয়ে গঠিত হয়েছে ‘পুকুর বাঁচাও কমিটি’। ওই কমিটির পক্ষ থেকে সুবীর মান্না বলেন, ‘‘২০০৮ সালের মৎস্য দফতরের একটি সংশোধনী আইনকে সামনে রেখে একের পর এক পুকুর বোজানো হচ্ছে। ওই আইন অনুযায়ী, প্রশাসনের কাছে কেউ কোনও পুকুর বোজানোর আবেদন করলে তাঁকে একই এলাকায় একই মাপের বা তার বেশি মাপের পুকুর খুঁড়ে তৈরি করে দিতে হবে। কিন্তু তা করা হচ্ছে না।’’

অভিযোগ উঠেছে, ভোটের মুখে এই ভাবে পুকুর বোজাতে জমি-মাফিয়াদের অতি সক্রিয়তার কারণ মূলত রাজনৈতিক দলগুলির জন্য ভোটের অর্থ সংগ্রহ। এ বিষয়ে মানবাধিকার কর্মী এবং শিবপুরের বাসিন্দা তাপস চট্টোপাধ্যায় বলেন, ‘‘গোটা হাওড়া শহর জুড়ে জলাশয় বুজিয়ে অবৈধ নির্মাণের একটা বড় কারণ হল নির্বাচন। হাওড়া শহরে কলকারখানা নেই, একমাত্র হাতে গরম শিল্প হল নির্মাণ শিল্প।এখানে ফ্ল্যাটের দামও চড়া। তাই এক-তৃতীয়াংশ দরে পুকুর কিনে সেটা বুজিয়ে নির্মাণ করলেই লভ্যাংশ প্রায় দ্বিগুণ হয়।’’

গোটা হাওড়া জুড়েই যে একাধিক পুকুর বোজানোর অভিযোগ আসছে, তা মানছেন পুরসভার চেয়ারপার্সন সুজয় চক্রবর্তী। তিনি বলেন, ‘‘অভিযোগ পেলেই পুরসভার জল ভরো জল ধরো বিভাগকে জানানো হচ্ছে। তাঁরা সরেজমিনে খতিয়ে দেখে ব্যবস্থা নিচ্ছেন। ইতিমধ্যে একাধিক পুকুর থেকে মাটি তুলে আমরা আগের অবস্থায় ফিরিয়ে দিয়েছি। যেহেতু পুরসভার লোকবল কম, তাই একসঙ্গে সর্বত্র পৌঁছনো যাচ্ছে না।’’ আর পুরসভার এই অসহায়তাকেই কাজে লাগাচ্ছে জমি-মাফিয়াদের দুষ্টচক্র।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement