চাহিদা: লোকসভা ভোটের ফল বেরোনোর আগে বিভিন্ন দলীয় রঙের আবির কেনার ব্যস্ততা বড়বাজারে। সোমবার। ছবি: বিশ্বনাথ বণিক।
ম্যারাথনের মতো টানা সাত দফার ভোটের দৌড়ে প্রথমে অনেকটাই এগিয়ে গিয়েছিল সবুজ। কিন্তু শেষ ল্যাপে গতি বাড়িয়ে গেরুয়া প্রায় ধরে ফেলেছে সবুজকে। আজ, মঙ্গলবার ভোট গণনা। তার আগে, সোমবার ফিনিশিং লাইনের মুখে হাড্ডাহাড্ডি লড়াই চলছে সবুজ আর গেরুয়ার মধ্যে।
কলকাতায় ভোটের বাজারে গেরুয়া ও সবুজ আবিরের মধ্যে কোনটির বিক্রি বেশি? এই প্রশ্নের উত্তরে এমনটাই বললেন বড়বাজারের পণ্ডিত পুরুষোত্তম রায় স্ট্রিটের কয়েক জন আবির ব্যবসায়ী। জানালেন, সোমবার সকালে দক্ষিণ কলকাতার তৃণমূল প্রার্থী মালা রায়ের সমর্থকেরা পাঁচ বস্তা সবুজ আবির কিনে নিয়ে গিয়েছেন। আবার দুপুরে এসেছিলেন উত্তর কলকাতার বিজেপি প্রার্থী তাপস রায়ের অনুগামীরা। তাঁরা কিনেছেন চার বস্তা গেরুয়া আবির। ভোটের ফলাফলের আগে গেরুয়া ও সবুজের মধ্যে লড়াইয়ের চিত্রটা এখন এ রকমই।
পণ্ডিত পুরুষোত্তম রায় স্ট্রিটে পর পর রঙের দোকান। ভোটের মরসুমে রঙের ব্যবসায়ীরা এখন আবির বিক্রিও শুরু করছেন। এমনই এক আবির ব্যবসায়ী সমীরণ পাল বললেন, ‘‘প্রথম পাঁচ দফা ভোটে যদি সাত বস্তা সবুজ আবির বিক্রি করে থাকি, তা হলে গেরুয়া আবির বিক্রি করেছি তিন বস্তা। কিন্তু সপ্তম দফা থেকে হঠাৎ গেরুয়া আবিরের চাহিদা অনেকটাই বেড়েছে। সংবাদমাধ্যমে বুথ-ফেরত সমীক্ষার ফল প্রকাশের পর থেকে গেরুয়া আবিরের চাহিদা কয়েক গুণ বেড়েছে। এখন দুই আবিরের মধ্যে হাড্ডাহাড্ডি লড়াই।’’ সমীরণ জানান, শুধু কলকাতাই নয়, আশপাশের জেলাগুলি থেকেও দলীয় সমর্থকেরা আসছেন তাঁদের দোকানে আবির কিনতে। জেলাতেও সবুজ আবিরকে জোর টক্কর দিচ্ছে গেরুয়া।
বড়বাজারের সরু গলিতে ভিড়ে ধাক্কা খেতে খেতে এগোচ্ছিলেন দক্ষিণ ২৪ পরগনার জয়নগর থেকে পাঁচ বস্তা সবুজ আবির কিনতে আসা দুই যুবক। বড়বাজারে দাম কম জেনে সেখানেই এসেছেন আবিরের খোঁজে। শুধুই আবির কিনতে শহরে আসা? দুই যুবকের এক জন বললেন, ‘‘আরও কিছু কাজ ছিল। পাড়ার দুই দাদা বললেন, কলকাতায় এসেছি যখন, সবুজ আবির কিনে নিয়ে যেতে। কাল বিজয়োৎসবে কাজে লাগবে।’’ হাওড়ার কদমতলা থেকে আসা অজয় সাউ আবার বড়বাজার থেকে কিনে নিয়ে গেলেন আট বস্তা গেরুয়া আবির। হাওড়ায় বিজেপির ভাল ফল নিয়ে এতটাই আত্মবিশ্বাসী? অজয়ের কথায়, ‘‘আমাদের গেরুয়া আবির কেনা কোনও ভাবেই বিফলে যাবে না। যদি কোনও ভাবে হাওড়ায় খারাপ ফল হয়ও, তবু দেশে তো মোদী সরকারই জিতে ক্ষমতায় আসবে। তা হলেও তো গেরুয়া আবির মেখে উৎসব হবে। আবির নষ্ট হচ্ছে কোথায়?’’
এ দিন বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে বড়বাজারের আবিরের দোকানে পাল্লা দিয়ে বেড়েছে ভিড়ও। সেখানকার এক দোকানি বাবুলাল মেনট জানালেন, দোকানে এসে সবুজ ও গেরুয়া আবিরের ক্রেতারা মুখোমুখি হয়ে যাচ্ছেন, এমন পরিস্থিতিও তৈরি হচ্ছে। বুথ-ফেরত সমীক্ষা কতটা মিলবে, তা নিয়ে সেখানেই তর্ক-বিতর্ক শুরু হয়ে যাচ্ছে। সব মিলিয়ে বড়বাজারে চাপা উত্তেজনা। বাবুলাল জানালেন, তাঁরা শুধু আবির বিক্রিই করেন না, নিজেদের কারখানায় আবির তৈরিও করেন। তিনি বলছেন, ‘‘প্রথমে সবুজ আবিরের চাহিদা বেশি দেখে সেটাই বেশি করে তৈরি করেছিলাম। এ বার শেষের দিকে গেরুয়া আবির তৈরি করছি বেশি।’’ বড়বাজারের অনেক ব্যবসায়ীর মতে, বুথ-ফেরত সমীক্ষার ফলে আর কারও লাভ হোক না-হোক, বড় লাভের মুখ দেখছেন বড়বাজারের আবির ব্যবসায়ীরা। সবুজ আবিরের চাহিদা তো ছিলই, তবে বুথ-ফেরত সমীক্ষা সবুজের সঙ্গে গেরুয়ার বাজারকেও চাঙ্গা করে দিয়েছে।
শুধু বড়বাজার নয়, উত্তরের মানিকতলা বাজার, শোভাবাজার বা দক্ষিণের গড়িয়াহাট বাজার থেকেও আবির কিনতে যাচ্ছেন অনেকে। তবে, দাম তুলনামূলক ভাবে সস্তা
বলে বেশির ভাগ আবিরের ক্রেতাই এখন বড়বাজারমুখী। সেখানেই একটি দোকানের সামনে রাখা কয়েক বস্তা সবুজ ও গেরুয়া আবিরের মধ্যে উঁকি মারতে দেখা গেল লাল
আবিরের বস্তাকেও। লাল আবিরের বিক্রি আছে? এক ব্যবসায়ী সন্দীপ পাল বলেন, ‘‘ঘাটাল লোকসভা কেন্দ্র থেকে আসা কয়েক জন ক্রেতা কয়েক বস্তা লাল আবির কিনে নিয়ে গেলেন। বহু বছর ধরে বড়বাজারে ব্যবসা করছি। আগে লড়াইটা ছিল লাল ও সবুজ আবিরের। ধীরে ধীরে লালের জায়গায় গেরুয়া জায়গা দখল করেছে। তবে লাল আবিরের চাহিদা এখনও একেবারে শেষ হয়নি। তাই গেরুয়া-সবুজের মাঝে লালও রেখে দিয়েছি।’’