আরামবাগ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ব্লাড ব্যাংক। ফাইল চিত্র।
গরম পড়তেই রক্তদান শিবিরের সংখ্যা কমেছে। যে সব শিবির হচ্ছে, সেখানে সংগৃহীত রক্তের পরিমাণও কমছে। তার সঙ্গে জুড়েছে ভোট। নির্বাচনের আদর্শ আচরণবিধির কারণে রাজনৈতিক দলগুলি শিবির করতে পারছে না। নির্বাচনের কাজকর্মের জন্য বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের ঘনিষ্ঠ ক্লাবও শিবির আয়োজনে আগ্রহ দেখাচ্ছে না।
এই পরিস্থিতিতে আগামী দু’মাস রক্তের সরবরাহ নিয়ে চিন্তায় হুগলির বিভিন্ন হাসপাতাল। স্বাস্থ্য দফতরের খবর, পরিস্থিতি বুঝে নির্বাচন চলাকালীন বিভিন্ন ক্লাব সংগঠনের পাশাপাশি পুলিশ-প্রশাসনকে শিবির আয়োজনের অনুরোধ করা হচ্ছে।
ইমামবাড়া জেলা সদর হাসপাতালের ব্লাড ব্যাঙ্কের হিসাব, গড়ে দৈনিক রক্তের চাহিদা ৪০ প্যাকেট। বৃহস্পতিবার থ্যালাসেমিয়ার বহির্বিভাগ থাকায় চাহিদা ৫০-৬০ প্যাকেট পৌঁছয়। এ বার গরমের সঙ্গে ভোট ও রমজান মাস পড়ে যাওয়ায় পরিস্থিতি কঠিন! প্রতি বছর এই সময়ে বৈঁচিগ্রামে একটি শিবিরে অন্তত ৬০ জন রক্ত দেন। শনিবার এই শিবির হয়। সেখানে রক্তদাতার সংখ্যা মাত্র ৩৫ জন! গরম এবং রোজার কারণেই এই পরিস্থিতি বলে সংশ্লিষ্ট সকলের ধারণা। এই ব্লাড ব্যাঙ্কের মাধ্যমে শীতে সপ্তাহে কমপক্ষে ৫টি করে শিবির হয়। এখন ওই সংখ্যা এক থেকে তিনে নেমেছে।
শ্রীরামপুর ওয়ালশের সুপারিন্টেন্ডেন্ট প্রণবেশ হালদার জানান, আপাতত রক্তের জোগান ঠিক থাকলেও সঙ্কট হতে পারে বলে তাঁরা মনে করছেন। জেলা স্বাস্থ্য দফতরের নির্দেশিকা অনুযায়ী পুলিশ-প্রশাসনকে অনুরোধ করা হবে।
আরামবাগ মেডিক্যালে রক্ত মজুত দূর, দৈনন্দিন প্রয়োজন মেটাতে হিমসিম অবস্থা! ঘাটতির কথা স্বীকার করে মেডিক্যালের অধ্যক্ষ রমাপ্রসাদ রায় জানান, শিবিরের আবেদন কম আসছে। যে শিবিরগুলি হচ্ছে, সেখানে কমপক্ষে ১০০ ইউনিট রক্ত দেওয়ার কথা বলা হলেও মিলছে কার্যত অর্ধেক। আগামী এক-দেড় মাসে সঙ্কট বাড়ার আশঙ্কায় পুলিশ ও বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের কাছে শিবির আয়োজনের অনুরোধ করা হয়েছে।
এই ব্লাড ব্যাঙ্কের ধারণক্ষমতা ৭০০ ইউনিটেরও বেশি। এখন গড়ে সপ্তাহে ২০০-৩০০ ইউনিট থাকছে। ব্লাড ব্যাঙ্কটির উপরে নির্ভরশীল ৫৮৪ শয্যার এই হাসপাতাল ছাড়াও মহকুমার প্রায় ৫০টি নার্সিংহোম। সংলগ্ন হাওড়া, বর্ধমান, বাঁকুড়া, দুই মেদিনীপুরের একাংশের রোগীদেরও ভরসা। থ্যালাসেমিয়া রোগীদের জন্যই দৈনিক প্রায় ২৫ ইউনিট রক্ত লাগে।
রাজনৈতিক দলগুলি কী ভাবছে?
তৃণমূলের আরামবাগ সাংগঠনিক জেলা যুব সভাপতি পলাশ রায় বলেন, ‘‘বিভিন্ন ক্লাব-সংগঠনগুলিকে রক্তদান শিবিরের জন্য অনুরোধ করেছি। প্রয়োজনে নিজেরা হাসপাতালে গিয়ে রক্ত দেব।’’ বিজেপির আরামবাগ সাংগঠনিক জেলা সভাপতি বিমান ঘোষের দাবি, ‘‘থ্যালাসেমিয়া আক্রান্তদের প্রয়োজনে আমাদের ছেলেরা হাসপাতালে গিয়ে রক্ত দিচ্ছেন।’’ সিপিএমের জেলা সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য পূর্ণেন্দু চট্টোপাধ্যায়ের বক্তব্য, ‘‘আমাদের ছেলেরা রক্ত দিতে বছরভর তৈরি থাকেন। হাসপাতাল ডাকলেই হাজির হবেন।’’
আজ, রবিবার শ্রীরামপুর শ্রমজীবী হাসপাতালের মাধ্যমে স্থানীয় ছোটবেলুতে একটি রাজনৈতিক দলের শিবির করার কথা ছিল। নির্বাচন-বিধির কারণে তাদের শিবির বাতিল করতে হয়েছে। উত্তরপাড়ার একটি বিদ্যালয়ের প্রাক্তনী সংগঠন শিবির পিছিয়ে দিয়েছে ভোটের সময়ে স্কুলে কেন্দ্রীয় বাহিনী থাকবে বলে।
শ্রমজীবীতে রক্তের আকাল শনিবার এমন জায়গায় পৌঁছয়, নেগেটিভ গ্রুপ তো বটেই, ‘এ পজ়িটিভ’, ‘ও পজ়িটিভ’, ‘এবি পজ়িটিভের’ মতো গ্রুপের রক্তও শূন্য ছিল। আজ, রবিবার তিনটি শিবির থাকলেও তা পর্যাপ্ত নয় বলেই হাসপাতালের সদস্যেরা মনে করছেন। কারণ, শিবির থেকে যথেষ্ট সংখ্যক রক্ত মিলছে না। হাসপাতালের সহ সম্পাদক গৌতম সরকার বলেন, ‘‘অতীতে রক্তের সঙ্কট হলে হাসপাতালের বন্ধুরা এগিয়ে এসেছেন। এ বারও তাঁরাই ভরসা।’’