— প্রতিনিধিত্বমূলক ছবি।
ভোট-পর্বের শুরু থেকে তিন শিবিরের ‘টক্কর’ নির্বাচনের দিন পর্যন্ত সমানে সমানে চলেছে। জনতার রায়ে জেতার দৌড়ে কে আগে থাকবে, তাই নিয়ে ফল ঘোষণার আগে দোলাচল তুঙ্গে। চূড়ান্ত ফলাফল ঘোষণার পরে রাজনৈতিক অশান্তির বাতাবরণ তৈরি হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে দমদম লোকসভা কেন্দ্রের সর্বত্রই।
সেই আশঙ্কা থেকেই আগামী কাল, মঙ্গলবার পানিহাটির গুরু নানক ডেন্টাল কলেজের গণনা কেন্দ্র-সহ সাতটি বিধানসভা এলাকার আইনশৃঙ্খলা ঠিক রাখতে কড়া নিরাপত্তা ব্যবস্থার আয়োজন করেছে ব্যারাকপুর সিটি পুলিশ।
রবিবার ব্যারাকপুরের নগরপাল অলোক রাজোরিয়া বলেন, ‘‘ফলাফল বেরোনোর সময়ে ও
তাকে কেন্দ্র করে কোনও রকম অপ্রীতিকর ঘটনা যাতে না ঘটে, তার দিকে নজর রাখা হবে। কেন্দ্রীয় বাহিনী ও রাজ্য পুলিশ, উভয়েরই নজরদারি চলবে।’’ তিনি জানান, দমদম লোকসভার ওই একটি গণনা কেন্দ্রের নিরাপত্তার জন্য দুই কোম্পানি কেন্দ্রীয় বাহিনী মোতায়েন করা হচ্ছে। বাকি ১১ কোম্পানি কেন্দ্রীয় বাহিনী ব্যারাকপুর সিটি পুলিশের সমস্ত থানায় ভাগ করে দেওয়া হবে। এর সঙ্গেই রাজ্য পুলিশের এক হাজার সদস্যের বাহিনী থাকছে। প্রতিটি থানাতেই কুইক রেসপন্স টিম (কিউআরটি) থাকবে।
ভোট ঘোষণার পর থেকে, এমনকি নির্বাচনের দিনেও অশান্তির ঘটনায় দমদম লোকসভা কেন্দ্রে একাধিক ব্যক্তি আহত হয়েছেন। ভোটের আগের রাতে বেলঘরিয়ার নন্দননগর, বিলকান্দা ২ নম্বর গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকা, বিশরপাড়া, বরাহনগর থেকে দমদমের বেদিয়াপাড়া এলাকায় অশান্তির ঘটনা ঘটেছে বলে অভিযোগ ছিল বিরোধীদের। খড়দহে দলীয় কার্যালয় পুড়িয়ে দেওয়ার অভিযোগ তুলেছে তৃণমূলও।
আবার, ভোটের পরে দমদমে বিজেপির এক বুথ এজেন্টকে বেধড়ক মারধরের অভিযোগ উঠেছে শাসকদলের বিরুদ্ধে। শনিবার ভোটের পরে সব পক্ষের নেতা-কর্মীরা কার্যত ছুটির মেজাজে থাকলেও মঙ্গলবার ফলাফল বেরোনো শুরু হওয়ার পরে পরিস্থিতি কী হবে, তা নিয়েই সংশয় প্রকাশ করছে রাজনৈতিক শিবির। বাসিন্দাদের একাংশ এটাও বলছেন, ফলাফল ঘোষণার আগেই যে ভাবে রাজনৈতিক নেতাদের হুঁশিয়ারি-পাল্টা হুঁশিয়ারির কথা শোনা যাচ্ছে, তাতে পরবর্তী অশান্তির আশঙ্কা অমূলক নয়।
নির্বাচনের দিন তৃণমূল, বিজেপি, বাম-কংগ্রেস জোটের তিন প্রার্থীর মাটি কামড়ে পড়ে থাকা, কৌশল-পাল্টা কৌশলের লড়াই দেখেছে দমদম। বিরোধী দলগুলির দাবি, পুলিশের উপস্থিতিতেই ভোটের আগে এবং ভোটের দিন যে ভাবে তাদের কর্মীদের উপরে হামলার ঘটনা ঘটেছে, তাতে পরবর্তী সময়ে হিংসার আশঙ্কা করছেন তাঁরা। যদিও তৃণমূলের পাল্টা দাবি, প্রচার পর্ব থেকে ভোটদান পর্যন্ত কাউকে বাধা দেওয়া হয়নি। বিরোধীরা মিথ্যা, ভিত্তিহীন অভিযোগ তুলে পরিবেশ উত্তপ্ত করার চেষ্টা করেছেন।
সূত্রের খবর, দমদম লোকসভা কেন্দ্রের মোট ভোটার ছিলেন ১৬ লক্ষ ৯৯ হাজার ৬৫৬ জন। এর মধ্যে ৮ লক্ষ ৩৮ হাজার ৯০ জন পুরুষ ভোটার। তাঁদের থেকে ২৩ হাজার ৪৩১ জন বেশি রয়েছে মহিলা ভোটারের সংখ্যা। কিন্তু শনিবার সাতটি বিধানসভা মিলিয়ে দমদম কেন্দ্রে যে ভোট পড়েছে, তাতে রয়েছেন ৬ লক্ষ ৩৫ হাজার ৫১ জন পুরুষ এবং ৬ লক্ষ ১৯ হাজার ৩৯২ জন মহিলা ভোটার। অর্থাৎ হিসাব বলছে, দমদমের মোট ভোটার সংখ্যার ক্ষেত্রে পুরুষদের থেকে মহিলারা বেশি হলেও প্রদত্ত ভোটের নিরিখে পুরুষদের তুলনায় ১৫ হাজার ৬৫৯টি মহিলা ভোট কম পড়েছে।
রবিবার নির্বাচন কমিশন সূত্রে জানা গিয়েছে, দমদমে মোট ভোট পড়েছে ৭৩.৮১ শতাংশ। তার মধ্যে সব থেকে বেশি ভোট পড়েছে খড়দহে (৭৮.৮১ শতাংশ)। বাকি, দমদম উত্তরে ৭৬.৯২, পানিহাটিতে ৭৪.৪৭, কামারহাটিতে ৭০.৪১, বরাহনগরে ৭৩.২৩ শতাংশ এবং রাজারহাট-গোপালপুরে ভোটদানের হার ছিল ৬৮.৭৬ শতাংশ।