সাংবাদিক বৈঠকে কলকাতা হাই কোর্টের প্রাক্তন বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়। মঙ্গলবার তাঁর সল্টলেকের বাড়িতে। — নিজস্ব চিত্র।
তৃণমূলকে তোপ অভিজিতের। বললেন তৃণমূল এ বার জন মিউ মিউ সভা করবে।
শাসক দল তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের কেন্দ্র ডায়মন্ড হারবার। অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায় সরাসরি চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিয়ে বললেন, ডায়মন্ড হারবারে দাঁড়ালে লক্ষ লক্ষ ভোটে হারাব।
কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায় কি এখন ভবিষ্যদ্বাণী করছেন? উনি কুকথা বলার জন্যই পরিচিত। আমার মনে হয় ওঁর বেড়ে ওঠায় সমস্যা রয়েছে। ওঁর শিক্ষা-দীক্ষায় সমস্যা রয়েছে।
২০২৪ সালে লোকসভা ভোটে তৃণমূলের সেই অবস্থা হবে, যা ২০০৯ সালে সিপিএমের হয়েছিল। আর ২০২৬ সাল পর্যন্ত দলটাই থাকবে না। শুধু কয়েকটা গ্রেফতারির প্রয়োজন। বললেন অভিজিৎ।
শাহজাহান শেখকে নিয়ে প্রশ্ন করা হয়েছিল অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়কে। তিনি বললেন, ‘‘তালপাতাল সেপাই বলেছে, বিচারব্যবস্থা ওর গ্রেফতারি আটকেছিল। তালপাতার সেপাই বিচারব্যবস্থা কিছু জানেন না। ওঁর পেটে বোমা মারলেও কিছু বেরোবে না। তাঁর বিরুদ্ধে আদালত কিছু ব্যবস্থা নেয়নি, ওঁর ভাগ্য ভাল।’’
মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে প্রকৃত রাজনীতিবিদ বলে মনে করি আমি। তবে অন্য যাঁর কথা বলছেন, তাকে আমি তালপাতার সেপাই বলে মনে করি। বললেন বিচারপতি। তাঁক প্রশ্ন করা হয় কাকে তালপাতার সেপাই বলছেন? অভিজিৎ বলেন, ‘‘যাঁকে আপনারা সেনাপতি বলছেন। আমি কারও নাম করছি না। আমি তো এখানে কোনও কুকথা বলছি না। তাঁর নামটাকে আমি কুকথা বলে মনে করি।’’
তৃণমূল একটি দুষ্কৃতীদের দল বলে মনে করি। তৃণমূলকে আমি রাজনৈতিক দল বলেই মনে করি না। তৃণমূল হল একটি আদ্যোপান্ত যাত্রাদল। ওদের যাত্রাপালার নাম হল মা-মাটি-মানুষ।
শুভেন্দু অধিকারীকে নারদ কাণ্ডে টাকা নিতে দেখা গিয়েছে। এই প্রশ্নের জবাবে অভিজিৎ জানালেন শুভেন্দু চক্রান্তের শিকার। তাঁকে পাল্টা প্রশ্ন করা হয়, তবে কি যে তৃণমূল নেতাদের দেখা গিয়েছিল, তারাও চক্রান্তের শিকার? প্রশ্নের জবাবে অভিজিৎ বলেন, অবশ্যই তাঁরাও চক্রান্তের শিকার।
শেষ সাত দিন বিজেপির সঙ্গে কথা হয়েছে। দু'পক্ষের সহমতে সিদ্ধান্ত নিয়েছি। ওই দিনগুলিতে বিচারের কাজ করিনি। বললেন অভিজিৎ।
তৃণমূল ভিতর ভিতর ভেঙে পড়ছে। এই দল বেশি দিন আর নেই। বললেন অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়। তবে একই সঙ্গে তিনি জানালেন, শাসকদলের তরফে তাঁকে আক্রমণ করা হয়েছে বলেই তিনি আজ রাজনীতিতে। অভিজিৎ বলেন, ‘‘ওঁরাই আমাকে অনুপ্রেরণা দিয়েছেন।’’
অভিজিৎ বললেন, সিপিএমে যোগ দেব না কারণ আমি ঈশ্বর বিশ্বাসী। ধর্মে বিশ্বাস করি। তাদের সঙ্গে আমার মিল হবে না। কংগ্রেস হল পারিবারিক জমিদারির একটা দল। এখানে জয়রাম রমেশের মতো শিক্ষিত মানুষেরা থাকেন। কিন্তু তাঁরা পদ পান না। রাহুল গান্ধীর মতো নেতাদের পিছনে থেকে যেতে হয়।
বিজেপি তৃণমূলের মতো দুষ্কৃতী দলের বিরুদ্ধে লড়াই করছে। কোন আসনে লড়ব বিজেপির উপরমহল সিদ্ধান্ত নেবে। বললেন অভিজিৎ।
সাংবাদিক বৈঠকে অভিজিৎ বললেন, ‘‘বিশেষ সূত্রে খবর পেয়েছি কিছু ব্যক্তি সাংবাদিকের ছদ্মবেশে কিছু দুর্বৃত্ত ঢুকেছে। থানায় খবর দিয়েছি। সাদা পোশাকে পুলিশও রয়েছে।’’
প্রাক্তন বিচারপতি অভিজিৎ জানালেন, বিজেপিই একমাত্র দল, যারা তৃণমূলের দুর্নীতির বিরুদ্ধে লড়াই করছে।
বিজেপিতেই যোগ দিচ্ছেন অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়, জানালেন সাংবাদিক বৈঠকে।
বিজেপিতে যোগ দিচ্ছি। সাংবাদিক বৈঠকে জানালেন অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়।
রাজনৈতিক বিভিন্ন সূত্রে ইতিমধ্যেই অভিজিৎকে ঘিরে নানা তথ্য এবং তত্ত্ব প্রকাশ্যে এসেছে। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি আলোচিত যে তত্ত্বটি, তা হল বিচারপতি পদ থেকে ইস্তফা দেওয়ার পরের দিনই অর্থাৎ ৭ মার্চ তিনি বিজেপির সভায় গিয়ে পদ্মের পতাকা হাতে তুলে নেবেন। একই সঙ্গে তমলুক থেকে তাঁকে লোকসভা ভোটের প্রার্থীও ঘোষণা করবে বিজেপি। যদিও এ বিষয়ে অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায় নিজে কিছু বলেননি। এবিপি আনন্দকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে তিনি শুধু জানিয়েছেন, তিনি যদি রাজনীতিতে যান তবে তৃণমূলে যাবেন না। বাকি বিজেপি, সিপিএম, কংগ্রেস এবং আরও ছোট ছোট যে সব দল আছে সেখানে যেতে পারেন।
মঙ্গলবার দুপুর ২টোয় নিজের সল্টলেকের বাড়িতে সাংবাদিক বৈঠক করার কথা অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়ের। সেখানেই তিনি নিজের পরবর্তী পরিকল্পনা সম্পর্কে সমস্ত প্রশ্নের জবাব দেবেন বলে জানিয়েছেন।
বিচারপতি পদ থেকে ইস্তফা দিয়েছেন সকাল ১০টা ৩৫ মিনিট নাগাদ। কলকাতা হাই কোর্টের প্রধান বিচারপতি, সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি এবং দেশের রাষ্ট্রপতিকে নিজের ইস্তফার চিঠি পাঠিয়েছেন মঙ্গলবার সকালে। যেমনটা তিনি বলেছিলেন, ওই চিঠি পাঠানোর সঙ্গে সঙ্গেই তিনি আর বিচারপতি থাকবেন না। ফলে সকাল ১০টা ৩৫-এর পর থেকেই বিচারপতি নন অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়। তবে তিনি আগেই জানিয়েছেন। বিচারের গণ্ডি পেরিয়ে তিনি আরও বৃহত্তর ক্ষেত্রে যেতে চলেছেন। যার সঙ্গে রাজনীতির যোগ থাকবে বলেও সুস্পষ্ট ইঙ্গিত দিয়েছিলেন তিনি। তবে একই সঙ্গে জানিয়েছিলেন এ ব্যাপারে যা বলার তা তিনি বলবেন মঙ্গলবার।