প্রসূন বন্দ্যোপাধ্যায়। —ফাইল চিত্র।
ঘড়িতে তখন দুপুর ৩টে। হাওড়ার জগাছায় একটি বেসরকারি মেডিক্যাল কলেজের গণনা কেন্দ্রের বাইরে রাস্তায় ব্যারিকেডের ১০০ মিটার দূরে উল্লাসে মেতেছেন তৃণমূলের কর্মী-সমর্থকেরা। চলছে দেদার ঢাক-ঢোল বাজানো। তখনই স্পষ্ট হয়ে যায়, শেষ হাসি হাসতে চলেছেন হাওড়া লোকসভা কেন্দ্রের প্রার্থী প্রসূন বন্দ্যোপাধ্যায়। শেষমেশ ১ লক্ষ ৬৯ হাজার ২৩৩ (পোস্টাল ব্যালটের গণনা ছাড়া) ভোটে জয়ী হলেন তিনি। ছাপিয়ে গেলেন ২০১৯-এর ফলকে। গত লোকসভা নির্বাচনে প্রসূন জিতেছিলেন ১ লক্ষ ৩ হাজার ভোটে। এ বার জয়ের ব্যবধান বাড়ানোর পাশাপাশি একই কেন্দ্রে পর পর চার বার জেতার নতুন রেকর্ড গড়লেন অর্জুন পুরস্কারপ্রাপ্ত এই প্রাক্তন ফুটবলার। শুধু তা-ই নয়, সাতটি বিধানসভা কেন্দ্রের প্রতিটিতে বড় ব্যবধানে জয় পেয়েছেন প্রসূন।
অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ এই লোকসভা কেন্দ্রের ফল জানতে সকাল থেকেই গণনা কেন্দ্রের বাইরে দলীয় ক্যাম্প অফিসে ভিড় জমাতে শুরু করেছিলেন তৃণমূল, বিজেপি ও সিপিএমের কর্মীরা। দুপুর ৩টের পরেই প্রসূনের জয় প্রায় নিশ্চিত হয়ে যায়। বিকেলের পরে গণনা কেন্দ্রের ভিতরের ও বাইরের পথ ঢাকা পড়ে যায় সবুজ আবিরে। এ দিন গণনার প্রথম রাউন্ড থেকেই জয়ের ধারা অব্যাহত রেখেছিলেন প্রসূন। সময় যত গড়িয়েছে, বিজেপি প্রার্থী রথীন চক্রবর্তীর সঙ্গে তাঁর ব্যবধান ক্রমশ বেড়েছে। অন্য দিকে, সিপিএমের ‘তরুণ তুর্কি’ সব্যাসাচী চট্টোপাধ্যায় গত দু’মাস ধরে মানুষের দরজায় দরজায় ঘুরেও ভোটের অঙ্কে তৃণমূল ও বিজেপির ধারেপাশে আসতে পারেননি।
তবে, এ দিন সকাল থেকে গণনা কেন্দ্রের ধারেকাছে দেখা যায়নি প্রসূনকে। সকাল থেকে বাড়িতে বসেই সব খোঁজখবর রেখেছেন তিনি। জয়ের সম্ভাবনা স্পষ্ট হতে শুরু করতেই প্রসূনের বাড়ির সামনে ভিড় জমাতে শুরু করেন দলীয় সমর্থকেরা। বাজতে শুরু করে ‘খেলা হবে’ গান। দলীয় কর্মীদের আবেদনে নীচে নেমে তাঁদের সঙ্গে নেচেও নেন প্রসূন। কাঙ্ক্ষিত জয়ের শেষে তিনি বলেন, ‘‘এই ফল প্রমাণ করে দিল, মানুষ দিদির সঙ্গে আছেন। আমি হাওড়ার বাসিন্দাদের কাছে কৃতজ্ঞ।’’
২০১৯ সালের লোকসভা নিবার্চনে জিতে ‘হ্যাটট্রিক’ করেছিলেন প্রসূন। যদিও এ বারের নিবার্চনে তাঁর প্রার্থী হওয়া নিয়ে প্রথম থেকেই দলে বিরোধিতা তৈরি হয়েছিল। অনেক কর্মী গোড়ায় প্রচারে নামেননি। পরে দলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় ও তৃণমূল সুপ্রিমো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় হাওড়ায় একাধিক সভা ও রোড-শো করেন। রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের ধারণা, এই দু’জনের উপস্থিতি দলীয় কর্মীদের চাঙ্গা করে তোলে।