Lok Sabha Election 2024

আরামবাগে প্রচারে জোর আনতে আসরে ফিরহাদও

গতবার এক হাজারের কিছু বেশি ভোটের ব্যবধানে এই কেন্দ্রে জয়ী হয়েছিলেন তৃণমূলের অপরূপা পোদ্দার।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

আরামবাগ শেষ আপডেট: ০২ এপ্রিল ২০২৪ ০৮:১৮
Share:

ফিরহাদ হাকিম। নিজস্ব চিত্র।

কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের পরে এ বার আসরে ফিরহাদ হাকিম।

Advertisement

আরামবাগে দলীয় গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব মিটিয়ে ভোট প্রচারে ‘বিক্ষুব্ধ’ এবং ‘নিষ্ক্রিয়’ নেতাদের নামাতে তৃণমূলের শীর্ষ নেতৃত্ব যে কতটা মরিয়া, তা আরও একবার দেখা গেল সোমবার। এ দিন হরিপালের মালিয়ায় এসে ফিরহাদ ওই নেতাদের নিয়ে বৈঠক করলেন। কিন্তু বৈঠকের মধ্যে এবং পরে যে বাগবিতণ্ডা দেখা গেল, তাতে আরামবাগে দ্বন্দ্ব কতটা মিটল, তা নিয়ে প্রশ্ন রয়েই গেল তৃণমূল নেতা-কর্মীদের একাংশের মধ্যে।

গতবার এক হাজারের কিছু বেশি ভোটের ব্যবধানে এই কেন্দ্রে জয়ী হয়েছিলেন তৃণমূলের অপরূপা পোদ্দার। এ বার ভোটের ব্যবধান বাড়ানো তৃণমূলের কাছে বড় চ্যালেঞ্জ। কিন্তু প্রার্থী মিতালি বাগের প্রতি ইতিমধ্যেই দলের অনেকে অনাস্থা প্রকাশ করেছেন। কয়েক দিন আগে শ্রীরামপুরের সাংসদ তথা এ বারেরও তৃণমূল প্রার্থী কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায় এখানে এসে কর্মিসভা করে গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব মেটানোর চেষ্টা করেছেন। কিন্তু তার পরেও প্রচারে সবাইকে নামতে দেখা যায়নি।

Advertisement

সোমবার মালিয়ায় তারকেশ্বর, পুরশুড়া, খানকুল, আরামবাগ এবং গোঘাট— এই পাঁচ বিধানসভার ‘বিক্ষুব্ধ’ এবং নিষ্ক্রিয় থাকা ৫৫ জন নেতাকে নিয়ে বৈঠক করেন ফিরহাদ। মূলত পঞ্চায়েত ভোটে টিকিট বন্টন নিয়েই তাঁরা ফিরহাদের কাছে নিজেদের ক্ষোভের কথা তুলে ধরেন বলে দলীয় সূত্রে জানা গিয়েছে। বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন মন্ত্রী তথা সিঙ্গুরের বিধায়ক বেচারাম মান্না, হরিপালের বিধায়ক করবী মান্না, তৃণমূলের আরামবাগ সাংগঠনিক জেলা সভাপতি তথা তারকেশ্বরে বিধায়ক রামেন্দু সিংহ রায় প্রমুখ।

কিন্তু বৈঠকের মধ্যেই খানাকুলের ‘বিক্ষুব্ধ’ নেতা নজিবুল করিমকে ফিরহাদ ভোটের কাজে নামতে বলায় দলের খানাকুল ২ ব্লক সভাপতি রমেন প্রামাণিক প্রতিবাদ করেন। তর্কাতর্কি হয়। রমেন বলেন, ‘‘নজিবুলকে দায়িত্ব দিলে আমি থাকছি না।’’ রমেনর মতোই দলের আরও নেতা আপত্তি জানানোয় নজিবুলকে বাদ রেখেই ভোটে কাজ করার কথা বলেন ফিরহাদ।

নজিবুল বলেন, “আমাকে ভোটে বাদ রাখায় সিলমোহর দিয়েছেন ববিদা (ফিরহাদ)। আমি বলেছি, দল যা সিদ্ধান্ত নেবে, তা-ই হবে। আমি থাকব না। দল জিতুক কামনা করব।’’ রমেন বলেন, “আমি বলেছিলাম, মানুষ নজিবুলকে প্রত্যাখ্যান করেছেন। নজিবুল থাকলে সমস্যা হবে।”

বৈঠকের শেষে ফিরহাদের দাবি, ‘‘আরামবাগে ১০০ শতাংশ আমরাই জিতব। দলীয় কর্মীদের নিয়ে অভ্যন্তরীণ বৈঠক হয়েছে। বহু পুরনো কর্মীর সঙ্গে দেখা হল। মমতাদির নির্দেশে আমি এসেছি।” গোষ্ঠীদ্বন্দ্বে বসে যাওয়া কর্মীদের ফেরানোর প্রশ্নে ফিরহাদ বলেন, “সমাধান হয়েই রয়েছে। ভোটের কাজে সব কর্মী নেমে পড়েছেন।”

ফিরহাদ ওই দাবি করলেও তিনি চলে যাওয়ার পরে দলের আরামবাগ সাংগঠনিক জেলা সভাপতি তথা তারকেশ্বরের বিধায়ক রামেন্দু সিংহরায়ের সঙ্গে তারকেশ্বর পুরসভার চেয়ারম্যান উত্তম কুন্ডুর তীব্র বাগবিতণ্ডা হয়। তারকেশ্বর বিধানসভা কেন্দ্রিক আলোচনা করতে গিয়ে ওই বাগবিতণ্ডা থামাতে বেচারাম মান্নাকে হস্তক্ষেপ করতে হয়। উত্তম শারীরিক অসুস্থতার জন্য বৈঠকের মাঝ পথে বেরিয়ে যান বলে তৃণমূলের একটি সূত্রের খবর। উত্তম এ নিয়ে সাংবাদিকদের কিছু না বলেও তাঁর এক অনুগামী বলেন, “আরামবাগ সাংগঠনিক জেলা সভাপতি একা নিজের মতো কাজ করতে চাইছে। আমাদের অভিযোগের কথা দলকে বলেছি। দেখা যাক দল কী ব্যবস্থা নেয়।”

রামেন্দু বলেন, ‘‘তারকেশ্বর শহর নিয়ে একটা সমস্যা হয়েছিল। সেই ভুলভ্রান্তি কিছু কাউন্সিলর ও চেয়ারম্যান তুলে ধরেছেন। সেটা নিয়ে আলোচনা হয়েছে। আমরাই জিতব।’’

ফিরহাদের বৈঠকে ডাক পাওয়া ‘বিক্ষুদ্ধ’দের মধ্যে গোঘাটের মনোরঞ্জন পাল বলেন, “পঞ্চায়েত নির্বাচন নিয়ে আমাদের ক্ষোভের কথা জানিয়েছি। উনি (ফিরহাদ)বলেছেন, মান-আভিমান ভুলে ভোটে নামতে। জটিলতা নিয়ে দিদিকে বলবেন বলেও জানিয়েছেন।” গোঘাটের শান্তি রায়, সাহাবুদ্দিন খানও নিজেদের ক্ষোভের কথা জানিয়েছেন ফিরহাদকে।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement