Lok Sabha Election 2024

চারমু‌খী লড়াই ছাড়াও বহু নতুন পঞ্জাব ভোটে

এ বারে পঞ্জাবের ভোটযুদ্ধে সম্ভবত সব চেয়ে বড় নির্ণায়ক বিষয় হয়ে দাঁড়াতে চলেছে নতুন করে অক্সিজেন পাওয়া কৃষক বিক্ষোভ, এমনটাই মনে করছেন স্থানীয় মহল।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ০১ জুন ২০২৪ ০৭:২৭
Share:

ছবি: পিটিআই।

শনিবার লোকসভা নির্বাচনের শেষ পর্বে পঞ্জাবের মোট ১৩টি কেন্দ্রে যে ভোট হতে চলেছে তাতে অনেক কিছুই এ বার প্রথম বারের জন্য দেখবে রাজ্যের যুবকেরা। তিন দশক ধরে পরস্পরের জোটসঙ্গী হয়ে থাকা শিরোমণি অকালি দল এবং বিজেপি এই প্রথম লড়ছে একে অন্যের বিরুদ্ধে। এই প্রথম লোকসভা নির্বাচন হচ্ছে, যখন অকালি জোট অথবা কংগ্রেস— কেউই রাজ্যে ক্ষমতায় নেই। ১৯৯৬ সালের পর এই প্রথম বার বিজেপি একা লড়ছে পঞ্জাবের ১৩টি আসনে। দ্বিমেরু রাজনীতিতেই অভ্যস্ত পঞ্জাববাসী, যার এক দিকে শিখ অস্মিতার নেতৃত্ব দিতেন অকালি নেতা প্রকাশ সিংহ বাদল, অন্য দিকে পঞ্জাবি হিন্দু এবং মধ্যমপন্থী শিখ ও তফসিলিদের নেতা ছিলেন কংগ্রেসের ক্যাপ্টেন অমরিন্দর সিংহ। এই প্রথম এই দু’জনের তিক্ত লড়াই দেখবে না পঞ্জাব। প্রকাশ সিংহ বাদল প্রয়াত, ক্যাপ্টেন শিবির বদল করে বিজেপিতে গিয়ে এখন প্রায় অবসরে। এই প্রথম চারমুখী লড়াইও দেখছে পঞ্জাব— কংগ্রেস, বিজেপি, আপ এবং অকালি দলের মধ্যে।

Advertisement

এ বারে পঞ্জাবের লড়াই অন্য রকম। কারণ বিরোধী জোট ইন্ডিয়ার দুই সদস্য আপ ও কংগ্রেস দিল্লিতে একত্রে লড়লেও 'বন্ধুত্বপূর্ণ' লড়াই করছে পঞ্জাবে। কিন্তু ভোট ময়দানে বিষয়টি আদৌ 'বন্ধুত্বপূর্ণ' থাকছে না বলেই মনে করছেন ভোটারেরা। স্বাভাবিক ভাবেই লড়াই হচ্ছে জোর। ২০২২-এর বিধানসভা ভোটে কংগ্রেসকে সরিয়ে এই রাজ্যে প্রথম বার উত্থান ঘটেছিল আপ-এর। তাই যে বিধানসভাগুলিতে কেজরীওয়ালের দল আধিপত্য বিস্তার করেছে, তার সম্মিলিত লোকসভা আসনগুলিতেও সাফল্য পেতে লড়ছে তারা। আপ তাদের প্রচারে আগাগোড়া কাজে লাগিয়েছে রাজ্য সরকারের গত দু'বছরের রিপোর্ট কার্ড। তাদের বক্তব্য, আপ সরকার দু'বছরে রাজ্যের উন্নয়নের জন্য যা করেছে, তা কংগ্রেস-সহ অন্য দলের সরকার ২০ বছরেও করতে পারেনি। দিল্লি সরকারের মডেলকে সামনে রেখে গত দু'বছরে স্বাস্থ্য ও চিকিৎসা এবং সরকারি স্কুলের উন্নতিতে করা কাজ সামনে রেখে ভোট চেয়েছে তারা। সেই সঙ্গে কেন্দ্রের বঞ্চনা, মোদী সরকার যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামোকে জলাঞ্জলি দিচ্ছে— এমন অভিযোগও তুলেছে আপ। শিরোমণি অকালি দল লড়ছে শিখ গৌরব এবং অস্মিতার তাস নিয়ে। বিজেপি লড়ত তিনটি আসনে, কিন্তু এ বার ‘একলা চলার’ নীতি বাধ্য হয়েই নিতে হয়েছে তাদের। পঞ্জাবের সব ক’টি আসনেই প্রার্থী দিয়েছে তারা।

স্থানীয়রা বলছেন, এ বার দলিত ভোটব্যাঙ্ককে নিশানা করে গোড়া থেকেই প্রচার করছিল বিজেপি। প্রধানমন্ত্রী এখানে এসে সন্ত রবিদাস, অম্বেদকরের কথা প্রচার করে গিয়েছেন। কিন্তু এখানে বিজেপির গলার কাঁটা হয়ে দাঁড়িয়েছেন দলিত নেত্রী বিএসপি-র মায়াবতী। তাঁর এখানে একটি আসনও জয়ের সম্ভাবনা নেই, কিন্তু প্রার্থী দাঁড় করিয়েছেন ১৩টি আসনেই। ফলে এখানে বিজেপি-র ‘ভোট কাটুয়া’ হিসাবে দেখা যেতে পারে মায়াবতীকে, যা গেরুয়া শিবিরের চিন্তার কারণ।

Advertisement

কংগ্রেসের লড়াইয়ের অন্যতম বিষয়, গত কয়েক বছরে এখানে মাদকের বাড়বাড়ন্ত। তারা জালন্ধরে দাঁড় করিয়েছে রাজ্যের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী চরণজিৎ সিংহ চান্নিকে। অমৃতসর থেকে কংগ্রেসের হয়ে লড়ছেন গুরজিৎ সিংহ আউজলা। দলীয় নেতৃত্বের আশা, অন্তত ৩টি আসনে (অমৃতসর, হোসিয়ারপুর ও গুরুদাসপুর) ভাল ফল করবে কংগ্রেস।

তবে এ বারে পঞ্জাবের ভোটযুদ্ধে সম্ভবত সব চেয়ে বড় নির্ণায়ক বিষয় হয়ে দাঁড়াতে চলেছে নতুন করে অক্সিজেন পাওয়া কৃষক বিক্ষোভ, এমনটাই মনে করছেন স্থানীয় মহল। ন্যূনতম সহায়ক মূল্যের জন্য আইনের দাবিতে এই বছরের ফেব্রুয়ারি মাসে দিল্লির দিকে যাত্রা শুরু করেছিলেন পঞ্জাব এবং হরিয়ানার কৃষকরা। কিন্তু মোদী সরকার তাঁদের আটকে দেয় হরিয়ানা-দিল্লি সীমান্তে। চার দফা আলোচনাতেও সমাধান হয়নি সঙ্কটের। পঞ্জাব-হরিয়ানা সীমান্তে খানৌরি এবং সম্ভুর বিস্তীর্ণ এলাকা জুড়ে লোকসভা ভোট চলাকালীন ট্র্যাক্টর ধর্না অব্যাহত থেকেছে। কৃষকদের মধ্যে সংখ্যাগরিষ্ঠ শিখ এবং জাঠ সম্প্রদায়। এমনও পরিস্থিতি হয়েছে, পঞ্জাবের কয়েকটি গ্রামে বিজেপি প্রার্থীকে ঢুকতেই দেননি গ্রামবাসীরা। বিজেপির রামমন্দির নির্মাণের বিষয়টি পঞ্জাবের গ্রামাঞ্চলে সে ভাবে আলোড়ন ফেলতে পারেনি বলেই মনে করা হচ্ছে। বিজেপি লক্ষ্য, হিন্দু ভোটের পাশাপাশি কট্টর শিখদের মন জয় করা। তাই শিখ নেতা গুরমির সিংহ সোধি, প্রাক্তন কূটনীতিক তরণজিৎ সিংহ সান্ধুকে দাঁড় করিয়েছে বিজেপি।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement