পুজো দেওয়ার পরে কর্মীদের সঙ্গে চায়ের আড্ডায় দেবাশিস ধর। তারাপীঠে মঙ্গলবার। —নিজস্ব চিত্র।
শীতলখুচির ঘটনা নিয়ে তৃণমূল তাঁকে সমাজমাধ্যমে খোঁচা দিয়েছে। যদিও বীরভূম লোকসভা কেন্দ্রের বিজেপি প্রার্থী ও প্রাক্তন আইপিএস দেবাশিস ধরের দাবি, শীতলখুচি নিয়ে তাঁর বিরুদ্ধে মিথ্যা প্রচার হচ্ছে।
মঙ্গলবার তারাপীঠ মন্দিরে পুজো দিয়ে প্রচার শুরু করেন বিজেপি প্রার্থী। গত বিধানসভা নির্বাচনে কোচবিহারের পুলিশ সুপার থাকাকালীন শীতলখুচির ভোটগ্রহণ কেন্দ্রে কেন্দ্রীয় বাহিনীর গুলিতে চার জন ভোটারের মৃত্যুর অভিযোগ উঠেছিল। গোটা ঘটনায় দেবাশিসের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তুলে সরব হয়েছিল তৃণমূল কংগ্রেস। এ বারেও তিনি ইস্তফা দিয়ে বিজেপি প্রার্থী হতেই সমাজমাধ্যমে ওই প্রসঙ্গ তোলা হয়েছে।
এ দিন তারাপীঠে অভিযোগ প্রসঙ্গে দেবাশিস বলেন, ‘‘ওই ঘটনা যে কত বড় ভাঁওতা ছিল, সেটা মানুষ বুঝেছে। একটা অডিয়ো ক্লিপ, যাতে বলা হয়েছে, ‘এসপিকে ফাঁসাও’— এটাও মানুষ জেনেছে।’’ গুলি চালানো প্রসঙ্গে তাঁর দাবি, ‘‘রাজ্য পুলিশের সেখানে সীমিত ক্ষমতা ছিল। যে জায়গায় ঘটনা, সেখানে কেন্দ্রীয় বাহিনী আক্রান্ত হয়েছিল। কী ঘটেছে, সেটা সবাই এখন জানতে পারছে।’’ আগামী দিনে আরও জানতে পারবেন বলে দাবি বিজেপি প্রার্থীর। প্রসঙ্গত,বীরভূমের তৃণমূল প্রার্থী শতাব্দী রায়ের নামে এক্স হ্যান্ডলের একটি অ্যাকাউন্ট থেকে দেবাশিসকে খোঁচা দিয়ে পোস্ট করা হয়েছিল। শতাব্দী বিষয়টি পুলিশে জানিয়েছেন। দেবাশিস নিজেও এ দিন বলেন, ‘‘উনি (শতাব্দী) বলেছেন যে, এটা উনি করেননি। তার জন্য উনি প্রশাসনকে বিষয়টি দেখার জন্য বলেছেন। প্রশাসন দেখুক, ওই পোস্ট কে করেছে।’’ তৃণমূলের কোর কমিটির আহ্বায়ক বিকাশ রায়চৌধুরী বলেন, ‘‘শীতলখুচির ঘটনা নিয়ে কী হয়েছে, আমার জানা নেই। কাদের জয় হবে, সেটা ভোট বাক্সেই জানা যাবে।’’
কেন তিনি চাকরি ছেড়ে বিজেপি-তে এলেন, সে প্রশ্নে দেবাশিসের দাবি, ‘‘প্রশাসনে থাকলে কোনও দলের হয়ে কাজ আইনত করা যায় না। দুর্ভাগ্যজনক ভাবে তৃণমূল সরকার সেই জায়গাকে নিজের ব্যক্তিগত জায়গা করে দিয়েছে। আমি তৃণমূল সরকারের পদলেহন করিনি বলে আমার এই পরিণতি হয়েছে।’’ এর পরেই বগটুই হত্যাকাণ্ডের প্রসঙ্গ তুলে সংখ্যালঘুদের উদ্দেশে তাঁর বার্তা, ‘‘জতুগৃহের মতো মানুষকে পুড়িয়ে মারা হয়েছে। আপনাদের বোঝা উচিত যে, এখানে সুশাসন দরকার।’’
তিনবারের সাংসদ শতাব্দীর বিরুদ্ধে লড়াই প্রসঙ্গে তাঁর বক্তব্য, এই লড়াই ব্যক্তিগত কোনও লড়াই নয়। দুটো রাজনৈতিক দলের মতাদর্শের লড়াই। তিনি এখানে জেতার জন্যই এসেছেন। রাজ্য পুলিশের উপর ভরসা রেখেই দেবাশিস ধর বলেন অবশ্যই আছে। কেন্দ্রীয় বাহিনী তো নির্বাচনের জন্য নিযুক্ত হয়েছে।
অতীতে বীরভূমের প্রতিটি নির্বাচনে সন্ত্রাস প্রসঙ্গে দেবাশিসের বক্তব্য, সন্ত্রাস মোকাবিলা করার জন্য নির্বাচন কমিশন সচেষ্ট। তাঁরা প্রত্যেকটি ঘটনার প্রতি নজর রাখছেন এবং প্রয়োজনে কমিশনকে জানাবেন। ভোটের ফলে বীরভূমের গ্রামাঞ্চলে বিজেপি-র পিছিয়ে থাকা প্রসঙ্গে দেবাশিস ধর বলেন, ‘‘এ বার মিড ডে মিলের চাল চুরি, আবাস যোজনার টাকা চুরি, একশো দিনের প্রকল্পের টাকা চুরি, রেশনে চাল চুরি এবং সর্বোপরি চাকরি চুরির জন্য গ্রামের মানুষ ভুক্তভোগী। সেই কারণে শহরের মানুষের মতো এ বার গ্রামের মানুষও বিপুল উৎসাহে বিজেপিকে ভোট দেবেন।’’
তারাপীঠের পরে বিকেলে নলহাটি দলীয় কার্যালয়ে বীরভূম সাংগঠনিক জেলার নেতা-কর্মীদের সঙ্গে বৈঠক করেন দেবাশিস। সঙ্গে ছিলেন সাংগঠনিক জেলা সভাপতি ধ্রুব সাহা। বৈঠক শেষে রাস্তা দিয়ে ঢাক বাজিয়ে নলাটেশ্বরী মন্দিরেও পুজো দেন বিজেপি প্রার্থী। অনুব্রত মণ্ডলকে বিঁধে দেবাশিস বলেন, ‘‘অনুব্রত মণ্ডল যে সাম্রাজ্য স্থাপন করেছিলেন, তার ফল তাঁর নিরপরাধ মেয়ে। তা দেখে যাঁরা চুরি করছেন, সতর্ক হবেন।’’ তাঁর দাবি, মিথ্যা মামলায় বহু বিজেপি কর্মী জেলে গিয়েছেন। তারও বিচার
শুরু হবে।