—প্রতীকী চিত্র।
আগের রাতে ভিজে হাওয়া কয়েক দিনের গরমে হাঁসফাঁস উড়িয়ে নিয়ে গিয়েছিল। দু’একটি বিক্ষিপ্ত ঘটনা ছাড়়া মঙ্গলবার বেশ ফুরফুরে মেজাজেই ভোট হল মুর্শিদাবাদ কেন্দ্রের করিমপুরে।
এক সময়ে করিমপুর ‘লালদুর্গ’ বলে পরিচিত ছিল। ২০১৬ সালে সেই দুর্গের পতন হয়। প্রথম বার ভোটে জিতে তৃণমূলের বিধায়ক হন মহুয়া মৈত্র আর হেরে গিয়ে পরে বিজেপিতে চলে যান প্রাক্তন সিপিএম বিধায়ক সমরেন্দ্রনাথ ঘোষ। এর পর থেকে এই কেন্দ্র বরাবর তৃণমূলের হাতেই থেকেছে। কিছু এলাকায় বিজেপির উত্থান হয়েছে আর সময় যত গড়িয়েছে তত ফিকে হয়েছে লাল।
এ দিন কিন্তু সেই চেনা ছবিটায় ঈষৎ রংবদল চোখে পড়েছে। প্রত্যাশিত ভাবেই, বেশ কিছু বুথের বাইরে বিজেপি বা সিপিএম কর্মীদের তেমন চোখে পড়েনি। কিন্তু প্রায় অপ্রত্যাশিত ভাবে তৃণমূলের ক্ষেত্রেও তা-ই ঘটেছে। করিমপুর ২ গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকার নাটনা, রহমতপুর এলাকার রামকৃষ্ণপুর, পিপুলবাড়িয়া গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকার বেশ কয়েকটি বুথে আগের মতো তৃণমূলের কর্মীদের আনাগোনা ছিল না। বরং কিছু এলাকায় বহু দিন বাদে লালঝান্ডার ওড়াউড়ি ছিল চোখে পড়ার মতো।
ভোট শুরু হওয়ার খানিক পরেই তৃণমূলের অস্বস্তি প্রায় স্পষ্ট হয়ে ওঠে থানারপাড়ায় শোভরাজপুরে ৩৫ নম্বর বুথে। সিপিএম অভিযোগ করে, সেখানে তাদের ভোটারদের ভয় দেখিয়ে বাড়ি থেকে বেরোতে দিচ্ছে না তৃণমূলের নেতাকর্মীরা। মারধরেরও অভিযোগ ওঠে। শেষে পুলিশের হস্তক্ষেপে সিপিএম সমর্থকেরা ভোট দিতে যান। পরে সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক তথা এই কেন্দ্রের জোটপ্রার্থী মহম্মদ সেলিম এসে দাবি করেন, “এই ভোট থেকে শুধু মুর্শিদাবাদ লোকসভা কেন্দ্র নয়, গোটা বাংলার রং পাল্টাতে শুরু করবে।”
গত লোকসভা নির্বাচনে এই কেন্দ্রে তৃণমূলের আবু তাহের খান ছ’লাখের বেশি ভোট পেয়ে জেতেন। আলাদা লড়া সিপিএম ও কংগ্রেসের মিলিত ভোট ছিল সাড়ে পাঁচ লাখের কিছু বেশি। ফারাকটা খুব বেশি নয়। বিজেপির হুমায়ুন কবির পান প্রায় পৌনে তিন লাখ ভোট। তিনি তৃণমূলে চলে যাওয়ার পরে তা কতটা থাকবে, সেটাও দেখার। এ দিন বিজেপির মুর্শিদাবাদ লোকসভা জেলার সাংগঠনিক সহ-সভাপতি সুরজিৎ জোয়ারদার দাবি করেন, “এত সুষ্ঠু নির্বাচন দেখিনি।” সেই সঙ্গেই তাঁর দাবি, “বহু বুথের বাইরে তৃণমূলের কর্মী-সমর্থকদের তেমন দেখাও যায়নি।”
ভোটের আগে তৃণমূলের করিমপুর ২ ব্লক সভাপতিকে পদ থেকে সরানো বা করিমপুর ১ ব্লক সভাপতিকে ভোটের কাজ থেকে সরিয়ে রাখাতেই কি কর্মীদের একাংশ বসে গিয়েছেন? সেই সম্ভাবনা উড়িয়ে তৃণমূল বিধায়ক বিমলেন্দু সিংহ রায়ের ব্যাখ্যা, “কিছু এলাকার নেতাকর্মীরা আত্মতুষ্টিতে ভুগছেন। তাঁদের ধারণা হয়েছে, ভোটের দিন সক্রিয় না থাকলেও মানুষ ভোট দেবে। এতে হিতে বিপরীত হতে পারে।” তবে তাঁর দাবি, “হাওয়া আমাদের পক্ষেই রয়েছে।”