Lok Sabha Election 2024

দিনের ‘টার্গেট’ ২০ হাজার জনকে দলে টানা! বিধি ভেঙে সমাজমাধ্যমে প্রচার আটকাবে কে

২০ জনকে নিয়ে একটি দল তৈরি করা হয়েছে। দলের প্রত্যেককে দেওয়া হয়েছে একটি করে স্মার্টফোন। প্রতিটি ফোনে ৪০০ থেকে ৫০০টি হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপ আছে। প্রত্যেক গ্রুপে সদস্য-সংখ্যা ৩০০ থেকে ৪০০।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ৩১ মে ২০২৪ ০৮:১০
Share:

—প্রতীকী চিত্র।

যাদবপুরে একটি রাজনৈতিক দলের কার্যালয়ে বৃহস্পতিবার দুপুরে তখন ব্যস্ততা তুঙ্গে। পর পর চেয়ার নিয়ে বসে তরুণ-তরুণীর দল। প্রত্যেকেরই চোখ নিবিষ্ট হাতে ধরা মোবাইলে। সেখানে কী চলছে? উত্তর এল, ‘‘ভোটের প্রচার। শেষ কয়েক ঘণ্টা বেশি গুরুত্বপূর্ণ।’’

Advertisement

বিষয়টি ভেঙে বললেন ওই রাজনৈতিক দলের সমাজমাধ্যম সেলের দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রধান কোঅর্ডিনেটর। ২০ জনকে নিয়ে একটি দল তৈরি করা হয়েছে। দলের প্রত্যেককে দেওয়া হয়েছে একটি করে স্মার্টফোন। প্রতিটি ফোনে ৪০০ থেকে ৫০০টি হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপ আছে। প্রত্যেক গ্রুপে সদস্য-সংখ্যা ৩০০ থেকে ৪০০। যাঁরা ফোনটি ব্যবহার করছেন, তাঁদেরও অন্তত ৫০০০ করে নিজস্ব ‘কন্ট্যাক্ট’ রয়েছে। সব মিলিয়ে দু’লক্ষ লোকের যোগাযোগ এক জায়গায়। রয়েছে দিনে অন্তত ১৫ থেকে ২০ হাজার জনের কাছে পৌঁছনোর লক্ষ্য! সঙ্গীদের দ্রুত হাত চালানোর নির্দেশ দিয়ে কোঅর্ডিনেটর বললেন, ‘‘শেষ মুহূর্তের খেলা চলছে। ভোটারের মন জিততে হোয়াটসঅ্যাপ, ফেসবুকের মতো সোশ্যাল মিডিয়াই ভরসা।’’

ভোট কৌশলের এই বন্দোবস্ত দেখে মাথা ঘুরে যেতে বাধ্য। ২০১৪ সালে সমাজমাধ্যমে প্রচারের যে হাওয়ায় ভর করে কেন্দ্রে সরকার গড়েছিল বিজেপি, পরবর্তী কালে সেই পথে হেঁটেছে সব দলই। সংগঠন থাক বা না থাক, সমাজমাধ্যমে প্রচারের জোরে এলাকা দখলের স্বপ্ন দেখেছে সকলে। সূত্রের খবর, ২০১৯ সালে লোকসভা নির্বাচনের প্রচারে বিজেপি খরচ করেছিল ৩২৫ কোটি টাকা। কংগ্রেস আবার তাদের ছাপিয়ে গিয়ে খরচ করে ৩৫৬ কোটি। দু’পক্ষই মোটা টাকা ঢেলেছিল সমাজমাধ্যমে প্রচারের জন্য। চলতি বছরেও তার ব্যতিক্রম হচ্ছে না।

Advertisement

ভোট কুশলী একটি সংস্থার এক সদস্য বললেন, ‘‘কোনও বিধানসভা কেন্দ্রে যদি দু’লক্ষ ভোটার থাকেন, তাঁদের ৪০ শতাংশ, অর্থাৎ প্রায় ৭৫ থেকে ৮০ হাজার জনকে সোশ্যাল মিডিয়া দ্বারা প্রভাবিত করা সম্ভব। সে ক্ষেত্রে পাঁচ হাজার ভোটারকেও যদি নিজের পক্ষে আনা যায়, তা হলেই তো যথেষ্ট!’’ এই ভোটারদের প্রভাবিত করার জন্য বিভিন্ন ‘সেন্টিমেন্ট অ্যানালিসিস টুল’ ব্যবহার করা হচ্ছে। তার সঙ্গে রয়েছে কৃত্রিম মেধা-নির্ভর কম্পিউটার অ্যাপ্লিকেশন।

একটি লোকসভা কেন্দ্রের অন্তর্গত প্রতিটি বিধানসভা কেন্দ্র ধরে ধরে অঞ্চলভেদে এবং তার নীচে বুথভিত্তিক দল তৈরি হয়েছে। তথ্য বিশ্লেষণকারী পদ্ধতির (ডেটা অ্যানালিসিস টুল) সাহায্যে প্রতিটি অঞ্চলের সমাজমাধ্যম ব্যবহারকারীদের প্রোফাইল তৈরি করা হচ্ছে। সেই প্রোফাইল স্ক্যান করে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির রিপোর্টও তৈরি করে রাখা হচ্ছে।

এক ভোট কুশলীর মন্তব্য, ‘‘হতেই পারে, কোনও ব্যক্তি একটি বিশেষ রাজনৈতিক দল বা তাদের নেতা-নেত্রীদের পছন্দ করেন না। কিন্তু ওই রাজনৈতিক দলেরই নির্বাচনী ইস্তাহারে অন্যতম বিষয়, অনুপ্রবেশ ঠেকানো বা দুর্নীতি রোখা। সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিও হয়তো দুর্নীতি রুখতে এবং অনুপ্রবেশ আটকাতে চান। এ নিয়ে তিনি সোশ্যাল মিডিয়ায় মন্তব্য করেছেন। সেই মন্তব্যের সূত্র ধরেই চলবে তাঁকে দলে টানার খেলা। আগের চেয়ে বেশি করে দেখানো শুরু হবে ওই নির্দিষ্ট দলের অনুপ্রবেশ রোখা বা দুর্নীতি-বিরোধী কাজকর্ম সম্পর্কিত ভিডিয়ো এবং ছবি।’’

কিন্তু এই প্রচার কি দীর্ঘস্থায়ী হয়? ‘রিপ্রেজ়েন্টেশন অব দ্য পিপল অ্যাক্ট, ১৯৫১’-এর ১২৬ ধারা অনুযায়ী, ভোটের ৪৮ ঘণ্টা আগে সব ধরনের প্রচার নিষিদ্ধ। ২০১৯ সালে নির্বাচন কমিশন সংশোধনী এনে সমাজমাধ্যমেও এমন পদ্ধতিতে প্রচার নিষিদ্ধ করেছিল। যদিও রাজনৈতিক দলগুলির কর্মীদের দাবি, এখানেই হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপের গুরুত্ব। যে হেতু ব্যক্তিগত বার্তা চালাচালির
(মেসেজিং) মাধ্যমে এই প্রচার চলছে, তাই এ ক্ষেত্রে নিয়ম থেকে যাচ্ছে খাতায়-কলমেই। এর মধ্যেই কোঅর্ডিনেটর হাঁক দিলেন, কেন্দ্রীয় অফিস থেকে নাকি নতুন বার্তা এসেছে। দ্রুত ‘হ্যাশট্যাগ’ সহযোগে ‘ট্রেন্ডিং’ করতে হবে!

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement