প্রচারের সময় দেবকে মিষ্টি খাওয়ানো। ঘাটালে। নিজস্ব চিত্র
ছোট গাড়ির মাথায় মাইক বাঁধা। সেখানে নাগাড়ে চলছে ঘোষণা, ‘‘ঘাটালের মাস্টার প্ল্যানের রূপকার আপনাদের ঘরের ছেলে দীপক অধিকারী এখনই আসছেন।’’
ঘাটাল মাস্টারপ্ল্যান মাতৃগর্ভে থাকাকালীনই বৃদ্ধ হয়েছে। বয়স তার ৬০ পেরিয়েছে। সেই মাস্টারপ্ল্যানের রূপকার হিসেবে দেবকে তুলে ধরে প্রচার শুরু করল তৃণমূল। এমনটা যে হতে চলেছে তার আঁচ মিলেছেই তখনই যখন দেবকে সঙ্গে নিয়ে ভোটের মুখে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্য়ায় ঘোষণা করেছিলেন ঘাটাল মাস্টারপ্ল্যান রূপায়ণ করবে রাজ্য সরকার। আর এ বিষয়ে যে দেবের ভূমিকা রয়েছে তা-ও স্মরণ করিয়ে দিয়েছিলেন মমতা। বাস্তবে দেব এ বার সংসদের শেষদিনেও উল্লেখ করেছিলেন এই মাস্টারপ্ল্যানের কথা। অর্থাৎ দেব আর মাস্টারপ্ল্যানকে তৃণমূল জুড়েছিল আগেই। এ বার তা প্রচারে আনা হল। বুধবার ঘাটাল শহরে সকাল থেকেই প্রচারে বেরিয়েছিলেন ঘাটাল লোকসভা কেন্দ্রের তৃণমূল প্রার্থী দীপক অধিকারী তথা দেব। তাঁর গাড়ির আগে আগে তাঁকে মাস্টারপ্ল্যানের রূপকার হিসেবে মাইক ফুঁকে গেল প্রচারগাড়ি।
এ দিন ঘাটাল শহরের মূল রাস্তা ও অলিগলি ঘুরে প্রচার করেন দেব। কোথাও ভিড় ছিল চোখে পড়ার মতো। কোথাও আবার সুনসান রাস্তা। দেবও কখনও হুডখোলা গাড়িতে, কখনও জিপ থেকে নেমে উঠেছেন নিজের গাড়িতে। ঘাটাল শহরের ১ নম্বর ওয়ার্ড শুকচন্দ্রপুর থেকে শুরু হয় দেবের রোড শো। সামনে পিছনে ছিলেন তৃণমূল কর্মীরা। ভ্যাপসা গরম তো ছিলই। সঙ্গে শুকনো চিড়বিড়ে রোদ। তবে এ দিন শুরু থেকেই দেবের রোড শোয়ে ভিড় জমতে শুরু করে। শুকচন্দ্রপুর, আড়গোড়া হয়ে মিশ্র পল্লি, চাউলি-সিংহপুর, রামচন্দ্রপুর, রাজবংশীপাড়া হয়ে জয়নগর মোড়। সেখান থেকে গড় প্রতাপনগর, ডোম পাড়া, শ্মশানকালী মন্দির হয়ে রেডম্যান ক্লাব হয়ে দুধের বাঁধ। সেখান থেকে গুরুদাসনগর হাইস্কুল হয়ে নিশ্চিন্দিপুর লিচুতলা হয়ে বকুলতলা ইলেকট্রিক অফিস হয়ে রথতলা,বানেশ্বর মন্দির হয়ে আড়গোড়ায় রোড শো শেষ করেন তারকা প্রার্থী। আগে ভাগেই তারকা প্রার্থীর রোড শোয়ের কথা প্রচার থাকায় শহরের পশ্চিম পাড়ে একটা বাড়তি উন্মাদনা ছিলই। অলিগলির রাস্তার দু’পাশে ভিড় করেছিলেন মহিলারা। স্কুল পড়ুয়া থেকে পথচলতি মানুষও দাঁড়িয়ে যান। দেবও ছিলেন ফুরফুরে মেজাজেই। বেশ কিছু জায়গায় গাড়ি থামিয়ে তিনি কোথাও মিষ্টি খেয়েছেন। কোথাও জল খেয়েছেন। ভক্তদের মালা হাসি মুখে নিয়ে পরে তা ফিরিয়ে দেওয়া, ভক্তদের সই দেওয়া— এতটুকু ক্লান্তি চোখে পড়েনি। দেবকে কর্মীরা মাস্টারপ্ল্যানের রূপকার বলে প্রচার করলেও মুখ্যমন্ত্রীকে পুরো কৃতিত্ব দিয়েছেন দেব।মাইক্রোফোন নিয়ে তিনি বলেন, “দিদি কথা দিলে কথা রাখেন। ঘাটালে মাস্টার প্ল্যানের জন্য টাকাও বরাদ্দ হয়েছে।”
বন্যার সময় ছাড়া একমাত্র ভোট এলেই বঙ্গ রাজনীতি মেতে উঠত ঘাটাল মাস্টারপ্ল্যান নিয়ে। মানস ভুঁইয়ার মুখে প্রায় শোনা যেত এই প্ল্যানের কথা। পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে মাস্টার প্ল্যানের ক্ষেত্রে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের পাশাপাশি দেবকেও ধন্যবাদ জানিয়েছেন মানস। তৃণমূলের ঘাটাল সাংগঠনিক জেলার সভাপতি আশিস হুতাইত বলেন, ‘‘আসলে কর্মীরা বলতে চাইছেন, দেবের হাত ধরেই আন্দোলন সফল হয়েছে।’’ যদিও জেলার এক প্রবীণ তৃণমূল নেতার দাবি, ‘‘মাস্টারপ্ল্যানের রূপকার তো মুখ্যমন্ত্রী। দিল্লিতে লড়াই করেছেন সাংসদ, মন্ত্রীরা।’’ কটাক্ষ করতে ছাড়ছে না বিরোধীরা। বিজেপি বিধায়ক শীতল কপাটের টিপ্পনী, ‘‘এ তো দেখছি আত্মপ্রচার। টাকা কে দিচ্ছে। দেব না রাজ্য সরকার।’’ আর সিপিএম নেতা অশোক সাঁতরার প্রতিক্রিয়া, ‘‘ আসলে সবই ভাঁওতা। গ্রামে মিথ্যে প্রচার চলছিল। শহরকেও বোকা বানাচ্ছেন দেব।’’
সোমবার দাসপুরের খাঞ্জাপুর,কামালপুর এলাকায় প্রচার করেছিলেন দেব। এ দিন সেই এলাকায় প্রচার করেন ঘাটালের বিজেপি প্রার্থী হিরণ চট্টোপাধ্যায়। দেব রোড শো করেছিলেন। হিরণ অবশ্য বাড়ি বাড়ি গিয়ে জনসম্পর্ক অভিযান করেন। বাড়ি বাড়ি ঘুরে কার কী সমস্যা কথা বলে জানতে চান। তা ছাড়া এলাকায় ঘুরে ঘুরে কেন্দ্রীয় প্রকল্পের একাধিক উপভোক্তার সঙ্গে দেখা করেন। কর্মীদের সঙ্গে লিফলেট বিলিও করেন। সেই লিফলেটে মোদির শুভেচ্ছা বার্তা রয়েছে। তার আগে দুবরাজপুর ব্রহ্মাতলা,রা মনগর মাড়োতলায় প্রচার করেন।
দেবের আছে মাস্টারপ্ল্যান। হিরণের পুঁজি মোদীর শুভেচ্ছাবার্তা।