—প্রতিনিধিত্বমূলক ছবি।
ষষ্ঠ দফায় দেশের মোট ৫৭টি আসনে ভোটগ্রহণ হবে। তার মধ্যে রয়েছে বাংলার আটটি আসনও। পুরুলিয়া, বাঁকুড়া, বিষ্ণুপুর, তমলুক, ঘাটাল, কাঁথি, ঝাড়গ্রাম এবং মেদিনীপুরে ভোট রয়েছে শনিবার। সকাল ৭টা থেকে ভোটগ্রহণ শুরু হবে। চলবে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত।
নির্বাচন কমিশন সূত্রে জানা গিয়েছে, ষষ্ঠ দফায় এ রাজ্যে মোট ভোটারসংখ্যা ১ কোটি ৪৫ লক্ষের বেশি। বিভিন্ন দলের মোট ৭৯ জন প্রার্থী ষষ্ঠ দফায় বাংলার আট আসনে লড়ছেন। মোট বুথ রয়েছে ১৫,৬০০টি। তার মধ্যে ২,৬৭৮ টি বুথকে স্পর্শকাতর হিসেবে চিহ্নিত করেছে কমিশন। ষষ্ঠ দফায় বাংলায় মোট ৯১৯ কোম্পানি কেন্দ্রীয় বাহিনী মোতায়েন করা হয়েছে। সেই সঙ্গে থাকবেন রাজ্য পুলিশের ২৯,৪৬৮ জন কর্মীও। সবচেয়ে বেশি কেন্দ্রীয় বাহিনী মোতায়েন করা হয়েছে পূর্ব মেদিনীপুর জেলায়। সেখানে ২৩৭ কোম্পানি কেন্দ্রীয় বাহিনী রাখা হচ্ছে। ওই জেলার নিরাপত্তায় বাড়তি গুরুত্ব দিচ্ছে কমিশন। কেন্দ্রীয় বাহিনী ছাড়াও নিরাপত্তার জন্য মোট ৮৯২টি কুইক রেসপন্স টিম মোতায়েন করা হয়েছে রাজ্যের ছয় জেলায়। তার মধ্যে পশ্চিম মেদিনীপুরের জন্য ২১৩, পূর্ব মেদিনীপুরের জন্য ২৩২, বাঁকুড়ার জন্য ১৭৩, ঝাড়গ্রামের জন্য ১২৮, পুরুলিয়ার জন্য ১৩২ এবং পূর্ব বর্ধমানের জন্য ১৪টি টিম রাখা হয়েছে। এ ক্ষেত্রেও, কুইক রেসপন্স টিমের সংখ্যা বেশি পূর্ব মেদিনীপুরেই। ভোট চলাকালীন কোথাও কোনও গোলমালের খবর এলে প্রথমেই সেখানে ছুটে যান কুইক রেসপন্স টিমের সদস্যেরা। এই দফাতেই কুইক রেসপন্স টিমের সংখ্যা এখনও পর্যন্ত সর্বোচ্চ।
এ ছাড়া, শনিবারের ভোটে ন’জন সাধারণ পর্যবেক্ষক এবং পাঁচ জন পুলিশ পর্যবেক্ষক থাকছেন। প্রতি বুথে ‘ওয়েব কাস্টিং’য়ের ব্যবস্থা রেখেছে কমিশন। অর্থাৎ, ভোটগ্রহণ শুরু হওয়ার পর থেকে কোন বুথে কী চলছে, কলকাতার অফিসে বসেই তা দেখতে পাবেন কমিশনের আধিকারিকেরা।
কমিশন সূত্রে খবর, ঝাড়গ্রাম-সহ জঙ্গলমহল এলাকার নিরাপত্তায় শনিবার বাড়তি গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে। সাধারণত, প্রতি বুথে হাফ সেকশন অর্থাৎ চার জন করে কেন্দ্রীয় বাহিনীর জওয়ান থাকেন। ঝাড়গ্রামের প্রতি বুথে শনিবার থাকবে এক সেকশন বাহিনী, অর্থাৎ, আট জন করে জওয়ান।
ষষ্ঠ দফার আট কেন্দ্রে বেশ কিছু তারকা প্রার্থীর দিকে নজর রয়েছে। তমলুক এবং ঘাটাল তার মধ্যে অন্যতম উল্লেখযোগ্য। কারণ, ঘাটালে তৃণমূলের টিকিটে লড়ছেন টলিউড তারকা তথা ওই কেন্দ্রের গত ১০ বছরের সাংসদ দেব। তাঁর বিপরীতে রয়েছেন বিজেপি প্রার্থী তথা আর এক টলি অভিনেতা হিরণ চট্টোপাধ্যায়। তমলুক আলাদা করে নজরে রয়েছে কলকাতা হাই কোর্টের প্রাক্তন বিচারপতি তথা বিজেপি প্রার্থী অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়ের জন্য। তাঁর বিপরীতে লড়ছেন তৃণমূলের দেবাংশু ভট্টাচার্য এবং সিপিএমের সায়ন বন্দ্যোপাধ্যায়।
এ ছাড়া, বিষ্ণুপুর কেন্দ্রে এ বার বিদায়ী সাংসদ সৌমিত্র খাঁয়ের বিরুদ্ধে তৃণমূল প্রার্থী করেছে তাঁরই প্রাক্তন স্ত্রী সুজাতা মণ্ডলকে। মেদিনীপুরে লড়ছেন বিজেপির অগ্নিমিত্রা পাল এবং তৃণমূলের জুন মালিয়া। ঝাড়গ্রাম আসনটি বিজেপির দখলে। তবে সেখানকার বিদায়ী সাংসদ কুনার হেমব্রম সম্প্রতি অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের হাত ধরে তৃণমূলে যোগ দিয়েছেন। ওই কেন্দ্রে বিজেপির প্রার্থী প্রণত টুডু। তৃণমূলের হয়ে লড়ছেন কালীপদ সোরেন। পুরুলিয়াও বিজেপির দখলে। সেখানে প্রার্থীবদল করেনি কেন্দ্রের শাসকদল। লড়ছেন বিদায়ী সাংসদ জ্যোতির্ময় মাহাতো। তফসিলি জনজাতি অধ্যুষিত বাঁকুড়ায় বিজেপি প্রার্থী সেখানকার বিদায়ী সাংসদ সুভাষ সরকার। তবে আলাদা করে নজরে থাকবে কাঁথি। এই কেন্দ্রে বিজেপির টিকিটে লড়ছেন রাজ্যের বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীর ভাই সৌমেন্দু অধিকারী। তাঁর বিরুদ্ধে তৃণমূল প্রার্থী করেছে উত্তম বারিককে।
উল্লেখ্য, এখনও পর্যন্ত পশ্চিমবঙ্গে যে পাঁচ দফার ভোট হয়েছে তা মোটের উপর শান্তিপূর্ণ বলে জানিয়েছে কমিশন। বাংলার ভোট এবং অশান্তি বরাবর সমার্থক হিসেবে থেকেছে। ২০২৪-এর লোকসভা নির্বাচনে এখনও পর্যন্ত সেই অশান্তির খবর আসেনি। আগামী দুই দফার ভোট যাতে এমন শান্তিপূর্ণই থাকে, তার চেষ্টা করছে কমিশন।