দেব। —ফাইল চিত্র।
তিন মাস সৌজন্যের রাজনীতি করে শেষে ভোটের আগের দিন ধৈর্যের বাঁধ ভাঙল দেবের। ঘাটল লোকসভা কেন্দ্রের তৃণমূল প্রার্থী তথা টলিউড অভিনেতা দেব বললেন, তাঁর সৌজন্যকে দুর্বলতা ভাবা হচ্ছে। তাঁর এখন মনে হচ্ছে, তিনি চুপ করে থাকলে মানুষ ভুল বুঝতে পারে। তাই ঘাটালে ভোটের ২৪ ঘণ্টা আগে একটি সাংবাদিক বৈঠক করে বিরোধীদের বিরুদ্ধে পাল্টা আক্রমণ শানালেন দেব।
একদা বিরোধীদের স্লোগান শুনে স্লোগানদাতাকে বুকে জড়িয়ে নেওয়া দেব শুক্রবার বলেন, ‘‘আমি তিন মাস ধরে মুখ বন্ধ করে বসেছিলাম। ভোটের আর এক দিন বাকি। কিন্তু কাল থেকে আমার মনে হল এ বার উত্তর দেওয়ার সময় এসেছে। কারণ নোংরামোটা এমন জায়গায় চলে গিয়েছে। জেতার জন্য ওরা যা খুশি তা-ই করতে পারে। যে কোনও ভাবে আমাকে হারাতে চাইছে ওরা। গত তিন মাস ধরে সেই চেষ্টা করে আসছে। কিন্তু শেষ দু’দিন যা করেছে, তা আগের সমস্ত কিছু ছাড়িয়ে গিয়েছে।’’ তবে একই সঙ্গে দেব জানিয়েছেন, তিনি কর্মফলে বিশ্বাস করেন। আর মনে করেন গত কয়েক দিন ধরে যা হয়েছে, তার কর্মফল বিজেপি এখন হাতেনাতে পাচ্ছে।
শুক্রবার সকালেই ঘাটালের দাসপুর বিধানসভা এলাকায় নাকাতল্লাশিতে এক বিজেপি নেতার গাড়ি থেকে ২৪ লক্ষ টাকা উদ্ধার করেছে পুলিশ। ঘাটালের বিজেপি প্রার্থী হিরণের ডক্টরেট ডিগ্রি নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে। দেব সেই সব ঘটনার প্রসঙ্গ টেনেই কলকাতায় করা সাংবাদিক বৈঠকে বলেন, ‘‘রাখে হরি মারে কে? ভোটের এক দিন আগে এত টাকা পাওয়া যাওয়া কী করে? বিজেপির ‘সো কলড’ প্রার্থী হিরণবাবু (হিরণ চট্টোপাধ্যায়) শেষ তিন মাস ধরে আমার পিছনে পড়ে রয়েছেন, কখনও আমাকে খুনি বানিয়েছেন, কখনও সন্ত্রাসবাদী বানিয়েছেন, এই ভোটটা জেতার জন্য অনেক চেষ্টা করেছেন। এমনকি, শুভেন্দু অধিকারীও সিবিআই, ইডির তথ্যগুলো ফাঁস করলেন। ভাবলেন, এটা দিয়ে যদি হিরণকে জেতানো যায়। কিন্তু তার পরেও যখন দেখলেন সমস্ত কিছু ফেল হয়ে গেল, দেবকে কোনও ভাবেই হারাতে পারা যাচ্ছে না, তখন ওঁরা প্রত্যেকটা বিধানসভায় প্রত্যেকটা অঞ্চলে গিয়ে টাকা বিলি করতে শুরু করলেন। কালই আমার কাছে খবর এসেছিল। আর আজকে একটা গাড়ি ধরা পড়ল। সঙ্গে ৩৩ লক্ষ টাকা। আমি নিশ্চিত খুঁজলে আরও বিধানসভায় এমন আরও গাড়ি পাওয়া যাবে। বাকি সমস্ত বিধানসভায় এ রকম অনেক গাড়ি ৩০-৪০-৫০ লক্ষ টাকা নিয়ে ঘুরছে মানুষের কাছে ভোট কেনার জন্য।’’
দেবের কথায়, এ সবই কর্মফল। তিনি বলেন, ‘‘রাখে হরি মারে কে বলে একটা শব্দ আছে তো? সমস্ত কিছু নির্বাচনের এক দিন আগে প্রমাণ হয়ে যাচ্ছে। যে, কে কী ভাবে জিততে চায়।’’
এর আগে ঘাটালের বিজেপি প্রার্থী হিরণ প্রসঙ্গে জানতে চাওয়া হলে কোনও খারাপ শব্দ উচ্চারণ করেননি দেব। বরং আনন্দবাজার অনলাইনকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে বলেছিলেন, ‘‘উনি খুব ভাল রাজনীতিবিদ।’’ শুক্রবার অবশ্য সেই দেবকেই বলতে শোনা গেল হিরণের ‘ভুয়ো ডক্টরেট ডিগ্রি’র অভিযোগ নিয়ে। দেব বলেন, ‘‘উনি ফেক ডক্টরেট সার্টিফিকেট নিয়ে ঘুরছেন। নিজের নামের আগে ডক্টরেট লাগানোর জন্য। সেটাও এক দিন আগে ‘ক্লিয়ার’ হয়ে গেল।’’
দেব জানিয়েছেন, ঘাটালে বিজেপির লক্ষ্য তৃণমূল ছিল না। ঘাটালে বিজেপির লক্ষ্য ছিলেন তিনি। তিনি বলেছেন, ‘‘ওঁরা জানতেন এখানে দেবের ভাবমূর্তির ক্ষতি করতে হবে এবং তিন মাস ধরে ওঁরা সবাই মিলে সেই চেষ্টাই বিভিন্ন ভাবে ইডি-সিবিআইয়ের ভয় দেখানো থেকে শুরু করে ভুয়ো অডিয়ো ক্লিপ ভাইরাল করা, ব্যক্তিগত আক্রমণ, আমাকে বদনাম করা সমস্ত কিছু শুরু করে দিয়েছিল। আমি শুধু ঘাটাল লোকসভা কেন্দ্রের মানুষকে নয়, বাংলার মানুষকে বলতে চাই, আমি এমন কোনও মন্তব্য করিনি, যাতে নিজেকে হিরো হিসাবে দেখাতে পারি। কিন্তু যে ভাবে রাজনীতি হচ্ছে, যে ভাবে ভোট কেনা হচ্ছে তাতে আমি আশ্চর্য হয়ে গিয়েছি। ওঁরা বলেছেন, আমি নাকি গরু চুরি করেছি, আমার কাছে গরু চুরির টাকা আছে। আমি তো বলব গরু চুরির টাকা এদের কাছে আছে। কোটি কোটি টাকা এদের কাছ থেকে ধরা পড়েছে। তা হলে গরু চুরিটা কারা করে?’’
দেবের বিরুদ্ধে বিজেপি কর্মীর মৃত্যুর দায় চাপিয়েছিল বিজেপি। সেই প্রসঙ্গে দেব বলেন, যে খুন দিয়ে ওদের প্রচার শুরু হয়েছিল, সেই মামলা হাই কোর্ট খারিজ করে দিয়েছে, এবং বলা হয়েছে এটা দুর্ঘটনাজনিত মৃত্যু। রক্তে অ্যালকোহল পাওয়া গিয়েছে। হাত বাঁধা ছিল না। আঘাতের চিহ্ন ছিল না। আমি আদালতের উপর ভরসা রেখেছিলাম। কাউকে আক্রমণ করিনি। একটি কথাও বলিনি। শেষ পর্যন্ত আমার আস্থা প্রমাণিত হয়েছে। হাই কোর্ট বুঝেছে কোনটা সত্য কোনটা অসত্য।”
টাকা উদ্ধার প্রসঙ্গে দেব আরও বলেন, ‘‘বিজেপি প্রার্থী যাঁর গাড়ি থেকে টাকা পাওয়া গিয়েছে, তিনি ২০২১ সালে বিজেপির টিকিটে দাঁড়িয়েছিলেন এমএলএ হিসাবে। হেরেছেন। সেটা আলাদা কথা। কিন্তু এমন নয়, যে তিনি বুথ স্তরের নেতা। বিজেপি এখন বলতেই পারে ও তো ছোট কর্মী, ওঁকে চিনি না জানি না। কিন্তু তা নয়। প্রশান্ত বেরা বিজেপির একটা বিখ্যাত নাম দাসপুর বিধানসভা ক্ষেত্রে।’’
যদিও টাকা উদ্ধার প্রসঙ্গে বিজেপি প্রার্থী হিরণের দাবি, ‘‘এটা তৃণমূলের চক্রান্ত। টাকা, বন্দুক, বোমা বাড়িতে, গাড়িতে ঢুকিয়ে বিজেপি নেতা-কর্মীদের ফাঁসিয়ে দেওয়ার চেষ্টা চলছে। অনেককেই মিথ্যা অভিযোগে গ্রেফতার করা হচ্ছে। হার নিশ্চিত বুঝতে পেরেই এ সব পুলিশকে দিয়ে করাচ্ছে তৃণমূল!’’
ভোটের এক দিন আগে নিজের কেন্দ্রের প্রার্থীদের প্রতি বার্তা দিয়ে দেব বলেছেন, ‘‘আমি আবার কেন্দ্রের মানুষজনকে বলব, আপনাদের যিনি প্রার্থী, তিনি মাথা উঁচু করে ১০ বছর কাজ করেছেন এবং মাথা উঁচু করেই প্রচার করেছেন। এমন কোনও কথা বলিনি, এমন কোনও মন্তব্য করিনি, যাতে কারও অসম্মান হয়। ওঁদের মতো কর্মীকে মেরে, পিটিয়ে, ভয় দেখিয়ে, চমকিয়ে-ধমকিয়ে ভোট নিজের দিকে করিনি, আমি এ সব রাজনীতির মধ্যে নেই।’’