তামিলনাড়ুর মুখ্যমন্ত্রী এম কে স্ট্যালিন। —ফাইল চিত্র।
আগামী ৪ জুন লোকসভা নির্বাচনের ফলপ্রকাশ। তার ২৪ ঘণ্টা আগে বিরোধী মঞ্চ ‘ইন্ডিয়া’র নেতানেত্রীরা বৈঠকে বসতে চলেছেন। ভোটের ফলাফল অনুকূলে হবে ধরে নিয়ে এই প্রাক্কথনের উদ্যোক্তা ডিএমকে নেতা তথা তামিলনাড়ুর মুখ্যমন্ত্রী এম কে স্ট্যালিন।
৩ জুন ডিএমকে-র প্রাণপুরুষ এম করুনানিধির ১০০ বছর পূর্তি। ওই দিন সকালে স্ট্যালিন, বিরোধী মঞ্চের প্রত্যেক দলনেতাকে নয়াদিল্লিতে তাঁদের দলীয় দফতরে শ্রদ্ধাজ্ঞাপনের অনুষ্ঠানে আমন্ত্রণ জানিয়েছেন। অন্য দলগুলির পাশাপাশি, তৃণমূলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও আমন্ত্রিত। সেখানে সব নেতানেত্রী নিজেদের মধ্যে কথা বলার পরিসর পাবেন। তৃণমূল সূত্রে আজ বলা হয়েছে, ওই অনুষ্ঠানে তারা অবশ্যই যোগ দেবে। তবে মমতার যাওয়ার সম্ভাবনা কম, তিনি প্রতিনিধি পাঠাবেন। কাকে পাঠানো হবে তা অবশ্য এখনও স্থির হয়নি।
কংগ্রেস সূত্রের বক্তব্য, জোট রাজনীতিতে এই আগাম আলোচনার রেওয়াজ নতুন নয়। কোনও এক জন নেতা প্রাথমিক ভাবে দায়িত্ব নেন সকলকে একজোট করার। ইউপিএ সরকার গঠনের সময় সিপিএম নেতা হরকিষেণ সিংহ সুরজিতের বাড়িতে ফলাফল ঘোষণার আগেও মিলিত হতেন কংগ্রেস, এনসিপি, আরজেডি-র শীর্ষ নেতারা। তার আগেও চন্দ্রশেখর সরকার গঠনের ক্ষেত্রেও ওই রেওয়াজ দেখা গিয়েছে। স্ট্যালিন নিজে প্রধানমন্ত্রিত্বের দৌড়ে নেই, কংগ্রেসের জোট শরিক হলেও তাঁর সঙ্গে অন্যান্য বিরোধী দলনেতাদের সম্পর্কও ভাল। তাই আপাতত প্রাথমিক আলোচনা শুরুর জন্য তিনিই আদর্শ
ব্যক্তি, এমনটাই মনে করছে রাজনৈতিক মহল।
চলতি লোকসভা নির্বাচনে পশ্চিমবঙ্গে জোট হয়নি কংগ্রেস এবং তৃণমূলের। বরং চলছে পরস্পরের প্রতি প্রবল শর নিক্ষেপ। কিন্তু আগামী ৩ জুন লোকসভার সমস্ত ভোট পর্বই শেষ হয়ে যাবে। ফলে কংগ্রেসের সঙ্গে এক মঞ্চে থাকতে কোনও অসুবিধা হওয়ার কথা নয় মমতার দলের। আজ দলের রাজ্যসভার নেতা ডেরেক ও’ব্রায়েন উত্তরপ্রদেশের ভাদোহিতে তৃণমূলের সঙ্গে এসপি-র সফল জোটের কথা তুলে ধরেছেন। গত কাল ওই লোকসভা কেন্দ্রের সব বিধায়ক এবং তৃণমূল প্রার্থী ললিতেশ ত্রিপাঠীকে নিয়ে জনসভা করেছেন এসপি নেতা অখিলেশ যাদব। সেই মঞ্চে ছিল তৃণমূলের প্রতীক এবং পতাকা। তাৎপর্যপূর্ণ ভাবে ওই কেন্দ্রে কংগ্রেস প্রার্থী দেয়নি, তাদের পতাকাও দেখা গিয়েছে তৃণমূল প্রার্থীর মঞ্চে। ‘ইন্ডিয়া’র এই ‘ঐক্যে’র ছবি নিজের এক্স হ্যান্ডলে পোস্ট করেছেন অখিলেশ। তৃণমূলের তরফে পাল্টা পোস্ট করে ওই ছবি দিয়ে বলা হয়েছে, ‘একজোট থাকলেই আমরা ঋজু ভাবে দাঁড়িয়ে থাকব’।
সম্প্রতি তৃণমূলনেত্রী বলেছিলেন, ‘ইন্ডিয়া’ সরকার গড়লে তাঁরা ‘বাইরে থেকে সমর্থন করবেন’। যা নিয়ে গুঞ্জন তৈরি হয়। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী ভাদোহিতে জনসভায় মমতাকে অখিলেশের ‘নতুন বুয়া’ হিসেবে উল্লেখ করে তাঁর বাইরে থেকে সমর্থন তত্ত্বের উল্লেখ করেছিলেন। তিনি মানুষকে বোঝাতে চেয়েছেন, ‘ইন্ডিয়া’র মধ্যেও বিভাজন তৈরি হচ্ছে। পরে মুম্বইতে এক সাংবাদিক সম্মেলনে কংগ্রেস সভাপতি মল্লিকার্জুন খড়্গে অবশ্য অস্বস্তি সামলাতে এই সংক্রান্ত প্রশ্নের জবাবে বলেছেন, তৃণমূলনেত্রী পরে নতুন করে বিবৃতি দিয়ে জানিয়েছেন যে তিনি জোটের ভিতরেই রয়েছেন। ফলে চিন্তার কোনও কারণ নেই। যদিও রাজনৈতিক শিবির বলছে, এখনও পর্যন্ত মমতা এই বিষয়টিকে স্পষ্ট করতে চেয়ে কোনও কথা বলেননি। কংগ্রেস নিতান্তই অস্বস্তি ঢাকতে এ কথা বলছে।
এই পরিস্থিতিতে লোকসভা ফলাফলের ঠিক আগের দিন নয়াদিল্লিতে ‘ইন্ডিয়া’-র নেতাদের জমায়েত হওয়া এবং তৃণমূলের সেখানে প্রতিনিধিত্ব করা যথেষ্ট তাৎপর্যপূর্ণ হয়ে উঠতে চলেছে বলেই মনে করছে রাজনৈতিক মহল।