দিলীপ ঘোষ। —ফাইল চিত্র।
বিজেপি তাঁকে যে দায়িত্ব দিয়েছে তিনি সেটিই সর্বান্তঃকরণে পালন করবেন। জানিয়েও দিলীপ ঘোষ বললেন, ‘‘আমি চেয়েছিলাম মেদিনীপুরেই দাঁড়াতে। তার জন্য মানসিক ভাবে প্রস্তুতও ছিলাম। কিন্তু পার্টি মনে করেছে, আমাকে এখানে দাঁড় করানো দরকার। তাই এই কেন্দ্র দিয়েছে।’’
রবিবার বাংলার দ্বিতীয় দফতার প্রার্থী তালিকা ঘোষণা করেছে বিজেপি। সেই তালিকায় যে ১৯টি আসনের প্রার্থীর নাম ঘোষণা করা হয়েছে, তার মধ্যে রয়েছে দিলীপের পুরনো লোকসভা ক্ষেত্র মেদিনীপুরও। কিন্তু সেই আসনের প্রার্থী মেদিনীপুরের বিদায়ী সাংসদ দিলীপ নন। আসানসোলের বিজেপি বিধায়ক অগ্নিমিত্রা পালকে প্রার্থী মনোনীত করা হয়েছে মেদিনীপুরের। বদলে দিলীপকে প্রার্থী করা হয়েছে বর্ধমান-দুর্গাপুর কেন্দ্রের। দলের এই সিদ্ধান্তে কি দিলীপ ক্ষুব্ধ? জানতে চাওয়া হয়েছিল তাঁর কাছে। জবাবে দিলীপ প্রথমে বলেছেন, ‘‘দল আমাকে ভরসা করেছে। তাই কঠিন কেন্দ্র দিয়েছে। তবে আমি চ্যালেঞ্জ নিতে ভালবাসি। মোদীজি যেখানে দাঁড় করাবেন সেখানেই দাঁড়াব। মোদীজির লক্ষ্য পূরণ করতে ঝাঁপাতে হবে।’’ তবে একই সঙ্গে এ-ও মনে করিয়ে দিয়েছেন যে, তিনি যখন মেদিনীপুরে জিতেছিলেন, তখন সেখানে বিজেপি ছিলই না।
বস্তুত মেদিনীপুরে ২০১৯ সালে প্রথম প্রার্থী হয়েছিলেন দিলীপ। তার পর থেকে তিনি মেদিনীপুর কেন্দ্রের গ্রামে গ্রামে ঘুরেছেন বলে সম্প্রতিই একান্ত সাক্ষাৎকারে বলেছিলেন আনন্দবাজার অনলাইনকে। এ-ও বলেছিলেন, তিনি মানুষের নেতা। মেদিনীপুরে তাঁর কেন্দ্রের প্রতিটি গ্রামের মানুষ তাঁকে চেনেন। দিলীপ বলেছিলেন, ‘‘যে কোনও গ্রামে গিয়ে যদি জানতে চান এখানে দিলীপ ঘোষ এসেছিল? মানুষ বলবেন হ্যাঁ এসেছিল।’’ সেই মেদিনীপুরে তাঁর বদলে প্রার্থী করা হয়েছে অগ্নিমিত্রাকে। তাঁকে প্রশ্ন করা হয়েছিল, অগ্নিমিত্রাকে কি কিছু বললেন? উত্তরে দিলীপ বলেছেন , ‘‘উনি আশীর্বাদ চাইতে এসেছিলেন। আমি বললাম, ‘যাও জেতার জন্য মেদিনীপুরের আসন রেডি আছে। গিয়ে লড়ো’।’’
সামান্য ক্ষোভ ঝরে পড়ল কি তাঁর স্বরে? প্রার্থীতালিকা প্রকাশের পর দিলীপকে ঘিরে ধরেছিল সংবাদমাধ্যম। তাঁকে লক্ষ্য করে সঙ্গে সঙ্গেই ধেয়ে এসেছিল প্রশ্ন, আপনার আসন নিয়ে এখন অগ্নিমিত্রা পাল জিতবেন? সঙ্গে সঙ্গেই স্বর বদলেছে দিলীপের। তিনি স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছেন, ‘‘এখানে আমার তোমার বলে কিছু নেই। আমিও একজনের আসনে গিয়েছি। এখানে আমাদের দলের সিনিয়র নেতা আহলুওয়ালিয়াজি ছিলেন। তাঁকে দল অন্য কাজ দেবেন। আমাকে বলেছে ওখানে লড়তে আমি লড়ছি। উনি আমাকে বলেছেন আমি আসব তোমার সঙ্গে সাংবাদিক বৈঠক করব। আশীর্বাদ চেয়েছি।’’
বর্ধমান-দুর্গাপুর কেন্দ্রকে একরকম চ্যালেঞ্জ হিসাবেই নিচ্ছেন দিলীপ। জানিয়ে দিয়েছেন, পাক্কা জিতছেন। নতুন মাটি বলে কোনও চিন্তা নেই। বরং দিলীপ বলেছেন, ‘‘বাংলার কাকদ্বীপ থেকে কোচবিহার পর্যন্ত সর্বত্র তাঁর চেনা। কালকেই বর্ধমান চলে যাব। বডি ফেলে দেব ওখানে।’’ ওই কেন্দ্রে দিলীপের প্রতিপক্ষ তৃণমূল প্রার্থী কীর্তি আজাদ। তাঁর প্রসঙ্গে দিলীপকে প্রশ্ন করা হলে দিলীপ বলেছেন, ‘‘আমি চ্যালেঞ্জ নিতে ভালবাসি। মোদীজি যেখানে দাঁড় করাবে সেখানেই দাঁড়াব আমি কাউকে ভয় পাই না। কীর্তি আজাদ কবে ক্রিকেট খেলেছেন কেউ জানে না। ওঁকে কেউ চেনে না। এখানে লোক নেই তাই বাইরের লোককে ধরে ভোট করাতে হচ্ছে।’’ কিন্তু নতুন মাটিতে লড়াই। সময় কি কম হয়ে গেল? উত্তরে দিলীপ বলেন, আলুওয়ালিয়াজি ১৫ দিনে এই কেন্দ্র জিতেছিলেন আমার হাতে তো দেড়মাস সময় রয়েছে। তা ছাড়া গোটা পশ্চিমবঙ্গের মাটিই বিজেপির জন্য তৈরি আছে। বাকিদের তো অস্তিত্ব রক্ষার লড়াই।