(বাঁ দিকে) দেব অধিকারী। হিরণ চট্টোপাধ্যায় (ডান দিকে)। —ফাইল চিত্র।
তাঁর প্রযোজনা সংস্থা ‘দেব এন্টারটেনমেন্ট ভেনচার্স প্রাইভেট লিমিটেড’ ৫০ লক্ষ টাকা নিয়েছিল ‘আরণ্যক ট্রেডার্স’-এর থেকে। ছবিনির্মাণের পর সেই টাকা ফেরতও দিয়ে দেওয়া হয়েছিল। ফলে সেখানে কোনও ‘সন্দেহজনক’ লেনদেন নেই। শুক্রবার দুপুরে সেই হিসাবের ‘লেজার বই’-এর নথি প্রকাশ করে হিসাব দিলেন ঘাটালের তৃণমূল প্রার্থী তথা অভিনেতা দেব। একটি ‘লেজার অ্যাকাউন্ট’-এর পৃষ্ঠা নিজের এক্স (সাবেক টুইটার) হ্যান্ডলে পোস্ট করেছেন তিনি। সেই পোস্টে দেব লিখেছেন, ‘‘সিনেমার জন্য লগ্নি করেছিলেন। সিনেমা রিলিজ়ের পর ফেরত দিয়ে দেওয়া হয়েছিল।’’ অর্থাৎ, দেব বলতে চেয়েছেন, ছবির জন্য সংশ্লিষ্ট সংস্থাটি ওই অর্থ লগ্নি বা বিনিয়োগ করেছিল। তার পরে তা ফেরতও দিয়ে দেওয়া হয়েছিল।
তার পরেই নাম না করে ঘাটালের বিজেপি প্রার্থী হিরণ চট্টোপাধ্যায়কে খোঁচা দিয়েছেন দেব। লিখেছেন, ‘‘এই যে ডক্টরবাবু, আমার লেজ়ার।’’ ঘটনাচক্রে, শুক্রবার সকালেই হিরণের বিরুদ্ধে আম আদমি পার্টি (আপ) নির্বাচন কমিশনে নথি দিয়ে দাবি করেছে, তাঁর ‘ডক্টরেট’ ডিগ্রিটি ভুয়ো। হিরণ অবশ্য পাল্টা বলেছেন, পিএইচডি-উত্তর গবেষণা কী ভাবে হয়, তা হয়তো অনেকের জানা নেই। তাই তাঁরা এ সব বলছেন।
শুক্রবার সকালে বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী তাঁর এক্স হ্যান্ডলে কিছু নথি পোস্ট করে লেখেন, ‘দেবের কীর্তি’। ‘আরণ্যক ট্রেডার্স’ নামে একটি সংস্থার লেজ়ার অ্যাকাউন্টের হিসেব ছিল সেই নথিতে। তার উপরে ছিল অন্য একটি সংস্থার নাম। তার শুধুমাত্র ‘ভেনচার্স প্রাইভেট লিমিটেড’ অংশটি শুভেন্দুর পোস্টে দৃশ্যমান। পুরো নাম স্পষ্ট নয়। পরে দেবের পোস্টে তা স্পষ্ট হয়েছে। শুভেন্দুর পোস্ট করা লেজার অ্যাকাউন্টের তথ্য অনুযায়ী, ‘আরণ্যক ট্রেডার্স’ থেকে দেবের সংস্থার আইসিআইসিআই ব্যাঙ্কের একটি অ্যাকাউন্টে ২০১৬ সালের ২৪ এবং ২৫ নভেম্বর ২৫ লক্ষ টাকা করে মোট ৫০ লক্ষ টাকা জমা পড়েছে। অন্য একটি জায়গায় দেখা যাচ্ছে, একটি ডায়েরির পাতায় হাতে লেখা ‘দেব মোবাইল: ৭২ হাজার টাকা’ এবং ‘দেব ঘড়ি: ৪ লক্ষ ৬০ হাজার টাকা’। পাশেই একটি পাতায় ছাপানো অক্ষরে ইংরেজিতে লেখা ‘দেব মোবাইল অ্যান্ড দেব ওয়াচ’। ডায়েরির পাতায় উল্লিখিত পরিমাণ অর্থের উল্লেখ রয়েছে ছাপা অক্ষরের পৃষ্ঠাটিতেও (কোনও নথিরই সত্যতা আনন্দবাজার অনলাইন যাচাই করেনি)।
বৃহস্পতিবার দুপুরে দেবের পোস্ট করা লেজ়ারে দেখা যাচ্ছে, ২০১৬ সালের নভেম্বরে ওই দু’দিনে তাঁর সংস্থার অ্যাকাউন্টে ২৫ লক্ষ করে মোট ৫০ লক্ষ টাকা ঢুকেছিল। পাশাপাশিই দেখা যাচ্ছে, ২০১৭ সালের ৩ এবং ১৩ নভেম্বর আরণ্যককে ২৫ লক্ষ করেই মোট ৫০ লক্ষ টাকা ফেরত দেওয়া হয়েছে (এই তথ্যেরও সত্যতা যাচাই করেনি আনন্দবাজার অনলাইন)।
গরু পাচার মামলার তদন্তের সূত্রে দেবকে সিবিআই এবং ইডি ডেকেছিল। তিনি হাজিরাও দিয়েছিলেন। শুভেন্দু জানিয়েছেন, তাঁর পোস্ট করা ডায়েরির পাতা গরু পাচার মামলার অন্যতম অভিযুক্ত এনামুল হকের। আবার হিরণের দাবি, ‘আরণ্যক’ এনামুলের সংস্থা। তবে দেব এই প্রশ্নও তুলেছেন, যে নথি কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থার হাতে থাকার কথা, তা শুভেন্দুর হাতে গেল কী করে? শুভেন্দুর পোস্টটি ‘রিপোস্ট’ করে হিরণ লিখেছিলেন, ‘‘বিচার আপনাদের, সিদ্ধান্ত আপনার নিজের’’। দুপুরে হিরণের পোস্ট উল্লেখ (মেনশন) করেই নেওয়া-দেওয়ার লেজার প্রকাশ্যে আনলেন ঘাটালের তৃণমূল প্রার্থী দেব। যার মাধ্যমে তিনি অর্থকরী বিষয়ে নিজের ‘স্বচ্ছতা’র বিষয়টিই তুলে ধরতে চেয়েছেন। তবে অনেকের মতে, দেব লেজার প্রকাশ করে এই তথ্যও প্রকারান্তরে মেনে নিলেন যে, তাঁর প্রযোজনা সংস্থায় ‘আরণ্যক’-এর টাকা ঢুকেছিল। যদিও সেই টাকা ফেরত দিয়ে দেওয়া হয়েছে। দেবের ‘লেজার শো’-এর প্রেক্ষিতে বিজেপি পাল্টা কী দেখায়, আপাতত কৌতূহল তা নিয়েই।