‘ইন্ডিয়া’র মঞ্চে মমতার ছবি। প্রিয়ঙ্কা গান্ধীর সঙ্গে ডেরেক ও ব্রায়েন (ডান দিকে)। রবিবার দিল্লির রামলীলা ময়দানে। ছবি: পিটিআই।
উপলক্ষ অরবিন্দ কেজরীওয়ালকে গ্রেফতার করার প্রতিবাদ। রবিবারের রামলীলা ময়দান বহু দিন পর আবার বিরোধী জোট ‘ইন্ডিয়া’কে ঐক্যবদ্ধ চেহারায় দেখল। ‘গণতন্ত্র বাঁচাও’ কর্মসূচিতে বক্তব্য রাখলেন রাহুল গান্ধী, সীতারাম ইয়েচুরি, তেজস্বী যাদব, অখিলেশ যাদবের মতো বিরোধী নেতা-নেত্রীরা। তৃণমূলের দূত হিসাবে এই সভায় বক্তব্য রাখেন দলের রাজ্যসভার নেতা ডেরেক ও’ব্রায়েন। তবে তৃণমূলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় দিল্লি না গিয়েও রবিবার উপস্থিত থাকলেন রামলীলা ময়দানে।
মঞ্চে রাখা দু’টি এলইডি স্ক্রিনে বার বার ফুটে উঠছিল বিরোধী নেতা-নেত্রীদের মুখ। সেখানে ছিল মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ছবিও। সভায় বক্তব্য রাখতে উঠে ডেরেক পুলওয়ামা হামলা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন। এর পাশাপাশি দাবি করেন যে, এটা বিজেপির সঙ্গে ভারতীয় গণতন্ত্রের লড়াই। পুলওয়ামা প্রসঙ্গে ডেরেক বলেন, “আমরা চাই সত্যিটা সামনে আসুক। আমরা এই নিয়ে শ্বেতপত্র চাই।” মঞ্চের দু’টি ফাঁকা চেয়ারের দিকে ইঙ্গিত করে তিনি বলেন, “আমরা দুটো আসন ফাঁকা রেখেছি। মাননীয় কেজরীওয়াল এবং মাননীয় সোরেন আপনারা আমাদের সঙ্গেই রয়েছেন।” বিজেপির উদ্দেশে আক্রমণ শানিয়ে তিনি বলেন, “কর্মসংস্থান, মুদ্রাস্ফীতি, সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলি রক্ষা করার নিরিখে মোদীর গ্যারান্টি আসলে জ়িরো ওয়ারেন্টি।”
প্রসঙ্গত, ২০১৯-এর লোকসভা নির্বাচনের ঠিক আগে জম্মু ও কাশ্মীরের পুলওয়ামায় সিআরপিএফের কনভয়ে জঙ্গি হানায় ৪০ জন জওয়ানের মৃত্যু হয়। এই ঘটনা নিয়ে আগেই প্রশ্ন তুলেছিল তৃণমূল-সহ বেশ কিছু বিরোধী দল। প্রশ্ন তুলেছিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও। বিজেপিকে আক্রমণ শানিয়ে এই ঘটনায় উচ্চ পর্যায়ের তদন্তের দাবি করেছিলেন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। গোয়েন্দা তথ্য হাতে থাকার পরেও কেন কেন্দ্র ব্যবস্থা নেয়নি, সেই প্রশ্নও তুলেছিলেন তিনি।
রবিবার দিল্লিতে যখন বিরোধী জোট ইন্ডিয়ার কর্মসূচি চলছে, তখন কৃষ্ণনগরের দলীয় প্রার্থী মহুয়া মৈত্রের সমর্থনে নদিয়ার ধুবুলিয়ায় জনসভা করছেন মমতা। সেখানে অবশ্য ‘ইন্ডিয়া’র দুই শরিক সিপিএম, কংগ্রেসকে আক্রমণ করেন তিনি। মমতার দাবি, সিপিএম, কংগ্রেসকে ভোট দেওয়ার অর্থ বিজেপিকেই ভোট দেওয়া। নাম না করে আইএসএফকেও কটাক্ষ করেন তিনি। বলেন, ‘‘ইন্ডিয়া নাম আমারই দেওয়া। বাংলায় জোট হয়নি। ভোটের পর ওটা আমি দেখে নেব।’’ বাংলায় তৃণমূল একাই লড়বে বলে আরও এক বার জানিয়ে দেন তিনি। কেজরীওয়ালের গ্রেফতারি নিয়ে ফের মুখ খুলে মমতা বলেন, “অরবিন্দকে আটকে রেখেছে। ওঁর কাজ কি বন্ধ রাখতে পেরেছে?’’
রবিবার রামলীলা ময়দানে বক্তব্য রাখতে উঠে বিজেপির বিরুদ্ধে ‘ম্যাচ ফিক্সিং’ করার অভিযোগ তোলেন রাহুল। লোকসভায় বিজেপির ৪০০ আসন জেতার দাবির প্রেক্ষিতে ওয়েনাড়ের বিদায়ী কংগ্রেস সাংসদ বলেন, “ইভিএমে কারিকুরি, সংবাদমাধ্যম এবং সমাজমাধ্যমের উপর চাপ সৃষ্টি করা ছাড়া বিজেপি ৪০০ আসন পেতে পারবে না। নেতাদের ভয় দেখানো হচ্ছে। সরকার ফেলে দেওয়া হচ্ছে। এই ম্যাচ ফিক্সিং করছেন নরেন্দ্র মোদী এবং কিছু শিল্পপতি।” সিপিএম নেতা সীতারাম বলেন, “ভারতকে বাঁচাতে হলে আমাদের সাম্প্রদায়িক শক্তিকে হারাতে হবে।” প্রধানমন্ত্রী আক্রমণ শানিয়ে আরজেডির তেজস্বী বলেন, “দেশের সবচেয়ে বড় শত্রু বেকারত্ব এবং মুদ্রাস্ফীতি। মোদীজি প্রিয়ঙ্কা চোপড়ার সঙ্গে সাক্ষাৎ করবেন, কিন্তু কৃষকদের সঙ্গে দেখা করবেন না। বিল গেটসের সঙ্গে দেখা করবেন, কৃষকদের সঙ্গে দেখা করবেন না।”