মিছিলে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সঙ্গে তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ও। বৃহস্পতিবার। —নিজস্ব চিত্র।
অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায় বৃহস্পতিবার যোগ দিয়েছেন বিজেপিতে। তার কয়েক ঘণ্টা পরেই তাঁকে নাম না করে আক্রমণ করে বললেন, ‘‘বিচারপতির চেয়ারে বসে বিজেপিবাবু বিজেপিতে যোগ দিচ্ছেন। আমি জানি কোনটা সঠিক কোনটা বেঠিক। আমি নিজে আইনজীবী ছিলাম। কিন্তু উনি হাজার হাজার ছাত্রছাত্রীর চাকরি কেড়ে নিয়েছেন। আবার টিভিতে ইন্টারভিউও দিয়েছেন। কাল থেকে আপনার রায় জনগণ দেবে। তৈরি থাকুন। আপনি যেখানে দাঁড়াবেন। ছাত্রদের নিয়ে যাব। হাজার হাজার ছাত্রের চাকরি খেয়েছেন।’’
ইডির ভয়ে গদ্দারেরা বিজেপিতে যোগ দিয়েছে বলে মন্তব্য করলেন মমতা। প্রশ্ন উঠছে, সদ্য বিজেপিতে যোগ দেওয়া তাপস রায়ই কি তাঁর লক্ষ্য। পরে মমতা আবার বলেন, গদ্দারদের ভাল হবে না। এর আগে অবশ্য শুভেন্দু অধিকারীকে নাম না করে গদ্দার বলতেন মমতা।
বুধবার ইস্ট-ওয়েস্ট মেট্রোর প্রকল্প উদ্বোধন করেছেন প্রধানমন্ত্রী। মমতা বৃহস্পতিবার মোদীর নাম না করে বললেন, ‘‘যা যা প্রকল্প উদ্বোধন করে গিয়েছেন, সব আমার করা।’’
কেন্দ্রীয় দলের প্রতি সৌজন্য দেখিয়েছি, ভাল আচরণ করেছি, মিষ্টি খাইয়েছি, মিষ্টি দই দিয়ে পাঠিয়েছি, বাংলা সৌজন্য জানে। আমরা কারও গায়ে হাত দিইনি এটা মনে রাখবেন।
মমতা বললেন, ‘‘বিজেপিকে আমি বলি পিন্টু বাবু। পিন্টুবাবু কো গুস্সা কিঁউ আতা হ্যায়?’’ মমতা বললেন, ‘‘বাংলায় ৪৫৪টা কেন্দ্রীয় দল এসেছে। কিন্তু মণিপুরে যখন নগ্ন ভাবে মহিলাদের হাঁটানো হল, তখন ক’টা দল গিয়েছিল। হাথরসে ক’টা কেন্দ্রীয় দল গিয়েছিল? আপানাদের যত রাগ, সব বাংলার উপর?’’ আগে নিজের দিকে তাকিয়ে দেখুন আপনার রাজ্যগুলি কী করছে?
ট্রেন বাতিল করা প্রসঙ্গে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বললেন, ‘‘আজ ক্ষমতায় আছো তাই ট্রেন ক্যানসেল করছ। কিন্তু যখন ক্ষমতা চলে যাবে, তখন ট্রেন ড্রেনে ঢুকে যাবে। তখন ট্রেন তোমাদের পেইন হয়ে যাবে। আর আমাদের গেইন হবে।’’
মমতা বললেন কত জায়গায় বিজেপির নেতাদের হাতে নির্যাতিত হচ্ছেন মা-বোনেরা। তারা ভয়ে কিছু বলতে পারে না। কিন্তু বাংলার মেয়েরা কথা বলতে জানে। বাংলায় কিছু হলে মহিলারা তেড়েফুড়ে ওঠে, আমি এটা পছন্দ করি।
মমতা বললেন, আমাকে সবাই বলে, ‘‘বাবা বাংলায় যে সব রায় হচ্ছে! আমি বলি, আছেন কেউ কেউ। এমন নির্দেশ দেন তাঁরা।’’
মোদীকে মমতা বললেন, ‘‘বাংলার উপর এত রাগ কেন?’’ মণিপুরে যখন মহিলাদের নগ্ন করে হাঁটানো হচ্ছিল কোথায় ছিলেন? হাথরসে যখন ধর্ষণের পর জ্বালিয়ে দেওয়া হল, তখন কোথায় ছিলেন?
মমতা বললেন বাংলা যে মহিলাদের জন্য সুরক্ষিততম, কলকাতা যে অন্যতম নিরাপদ শহর, তা আন্তর্জাতিক ভাবে স্বীকৃত।
কলেজ স্কোয়্যার থেকে ডোরিনা ক্রসিংয়ের কাছাকাছি পৌঁছল মিছিল। এই ডোরিনা ক্রসিংয়েই মিছিল শেষে একটি সমাবেশ করবেন মমতা এবং অভিষেক। আন্তর্জাতিক নারী দিবস উপলক্ষে মমতার এই মিছিলে পা মিলিয়েছেন সন্দেশখালির মহিলারাও। এক দিন আগে এই সন্দেশখালি নিয়ে মমতার নেতৃত্বাধীন তৃণমূল সরকারকে আক্রমণ করেছিলেন দেশের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। এই সভায় মমতার তারই জবাব দিতে পারেন বলে অনুমান রাজনৈতিক মহলের।
মমতার সঙ্গে সামনের সারিতে রয়েছেন জুন মালিয়া, নয়না গঙ্গোপাধ্যায়, লাভলি মৈত্র, অসীমা পাত্র, শশী পাঁজা, চন্দ্রিমা ভট্টাচার্য, সুষ্মিতা দেব, সাগরিকা ঘোষ। তার পিছনেই রয়েছেন অভিষেক।
অভিষেককে ফুল দিয়ে স্বাগত জানাচ্ছে এক শিশু। বৃহস্পতিবার। — নিজস্ব চিত্র।
রানাঘাট থেকে লোকসভা ভোটের টিকিট পাওয়ার আশায় ছিলেন তিনি। রানাঘাটে ফের বিজেপি প্রার্থী হয়েছেন বিদায়ী সাংসদ জগন্নাথ সরকার। রানাঘাটের রাজনীতিতে জগন্নাথ আর মুকুটমনির ঝগড়া সর্বজনবিদিত। প্রার্থী হতে না পেরে তিনি তৃণমূল যোগদান করছেন বলেই বিজেপি পরিষদীয় দল সূত্রে খবর।
অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে মিছিলে রয়েছেন রানাঘাট দক্ষিণের বিজেপি বিধায়ক মুকুটমনি অধিকারী। যা অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ বলে মনে করছে রাজনৈতিক মহল।
অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় এবং মুকুটমণি অধিকারী। বৃহস্পতিবার। — নিজস্ব চিত্র।
যে সন্দেশখালি নিয়ে এক দিন আগেই প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী বারাসতে দাঁড়িয়ে আক্রমণ করেছেন তৃণমূল সরকারকে। সেই সন্দেশখালির মহিলারাই বৃহস্পতিবার যোগ দিলেন মমতার মিছিলে।
মিছিলের আয়োজনে মহিলা তৃণমূল। দুপুর ২টোয় কলেজ স্কোয়ার থেকে ডোরিনা ক্রশিং পর্যন্ত হাঁটবেন মমতা। পরে সেখানে একটি সংক্ষিপ্ত সভাও করবেন তিনি। এই মিছিলে হাঁটবেন তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ও।
প্রতিবছরই নারী দিবসে মিছিল করেন মমতা। তবে এ বছর ৮ মার্চের বদলে ৭ মার্চ হচ্ছে মমতার মিছিল এবং তদপরবর্তী সভা। কেন নারীদিবসের এক দিন আগেই সাংগঠনিক কর্মসূচিতে রাস্তায় নামছেন মমতা?
অনেকে শুক্রবার শিবরাত্রির পুজোর কথা বললেও অনেকের মতে, পোড়খাওয়া রাজনীতিক মমতা জানতেন, ৬ মার্চ বারাসতে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী সন্দেশখালি এবং মহিলাদের নিরাপত্তা নিয়ে আগ্রাসী আক্রমণ করতে পারেন তৃণমূল তথা মমতার সরকারের বিরুদ্ধে। বুধবার সেটাই করেছেন মোদী। তাই আগেই আজ কর্মসূচি ঠিক করে রাখা ছিল।