উপরের ব্যানারে অনুপস্থিত অনুব্রত মণ্ডল। নীচে রয়েছে তাঁর কাটআউট। সিউড়ির তৃণমূল কার্যালয়ে। নিজস্ব চিত্র tapasphoto09@gmail.com
সিউড়িতে শতাব্দী রায়ের নির্বাচনী প্রচারের ব্যানার, পোস্টার থেকে উধাও অনুব্রত মণ্ডলের ছবি। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় এবং বিকাশ রায়চৌধুরীর ছবি থাকলেও নেই অনুব্রতের ছবি। তৃণমূল নেতাদের দাবি, জেলার সব তৃণমূল নেতা, কর্মীদের মনেই আছেন অনুব্রত। যদিও এই নিয়ে প্রশ্ন ওঠার পরেই মূল ব্যানারের নীচে লাগানো হয়েছে অনুব্রতের কাটআউট। যা নিয়ে কটাক্ষ করেছে বিজেপি।
হঠাৎ করেই প্রচারের ব্যানার থেকে অনুব্রতর ছবি বাদ দেওয়া হল কেন, তা নিয়ে চর্চা চলছে দলের অন্দরেও। অনুব্রতকে ছাড়া এ বারই প্রথম বার বীরভূমে লোকসভা নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে চলেছে তৃণমূল। উনিশের লোকসভা নির্বাচনে অনুব্রতের সভাপতিত্বে জেলার দু’টি লোকসভা কেন্দ্রেই বিপুল ভোটে জয়লাভ করেছিল তৃণমূল প্রার্থীরা।
এ বারও দু’কেন্দ্রে প্রার্থী অপরিবর্তিত থাকলেও বদলে গিয়েছেন পরিচালক। অনুব্রতর পরিবর্তে এ বার জেলায় ভোট পরিচালনা করছে পাঁচ সদস্যের জেলা কোর কমিটি। যদিও কোর কমিটির সদস্যরা বারবারই জানিয়েছেন, অনুব্রতের শেখান পথেই ভোট পরিচালনা করবেন তাঁরা। দু’টি লোকসভা আসনে জয়লাভ করে অনুব্রতকে উপহার দিতে চান বলেও জানান তাঁরা। কিন্তু লোকসভার প্রচার শুরু হতেই ঘটল ‘ছন্দপত’ন। প্রচারের ব্যানার থেকেই ‘উধাও’ হয়ে গেলেন অনুব্রত।
এর আগেও এক বার জেলা থেকে ছবি সরে গিয়েছিল কেষ্টর। দূর্নীতির দায়ে অনুব্রতর গ্রেফতারির কিছুদিন পর থেকে বিভিন্ন দলীয় ব্যানার থেকে সরিয়ে দেওয়া হয় তাঁর ছবি। দুর্নীতির অভিযোগ থেকে দূরত্ব বজায় রাখতে দলের নির্দেশেই সেই বদল করা হয়েছিল বলে তৃণমূল সূত্রে খবর। যদিও পরে জেলা কোর কমিটির কাছে কেষ্টর উপরে নিজের আস্থার কথা স্পষ্ট করেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। জেলা সফরে এসেও কেষ্টর সাংগঠনিক দক্ষতার কথা বলেন তিনি। এর পরেই আবার জেলা জুড়ে তৃণমূলের ব্যানারে ‘স্বমহিমায়’ ফেরেন অনুব্রত।
কিন্তু লোকসভা নির্বাচনের মুখে আবারও ফিরে এল সেই ছবি বিতর্ক। ব্রিগেডের মঞ্চ থেকে তৃণমূলের প্রার্থী ঘোষণার পরে সিউড়িতে তৃণমূলের দলীয় কার্যালয় ও সংলগ্ন বিভিন্ন এলাকায় শতাব্দী রায়ের পক্ষে ভোট চেয়ে লাগান হয় ব্যানার। আর সেই ব্যানারে দলের রাজ্য ও জেলা নেতৃত্বের ছবি থাকলেও নেই অনুব্রতের ছবি। যদিও এই নিয়ে প্রশ্ন উঠতেই কার্যত ‘ড্যামেজ কন্ট্রোলে’ নেমে পড়েছে তৃণমূল। বৃহস্পতিবার দুপুরে সিউড়ির দলীয় কার্যালয়ের মাথার উপরে অনুব্রতর ছবিহীন ব্যানার থাকলেও নীচে অনুব্রত মণ্ডল, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এবং অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের প্রমাণ আকারের কাটআউট লাগানো হয়েছে।
এই প্রসঙ্গে বীরভূম জেলা তৃণমূলের কোর কমিটির আহ্বায়ক বিকাশ রায়চৌধুরী বলেন, “বীরভূম জেলায় এমন কোনও ব্লক নেই যেখানে অনুব্রত মণ্ডলের ছবি নেই। অনুব্রত মণ্ডল সবার মনের মধ্যে রয়েছেন, সব কর্মীর মধ্যে রয়েছেন। অনুব্রত মণ্ডলের পথেই কর্মীরা আগামী লোকসভা ভোটের জন্য তৈরি হচ্ছেন। অনুব্রত মণ্ডল ছাড়া বীরভূম ভাবাই যায় না। অনুব্রত মণ্ডল যেখানেই থাকুক, তিনি আছেন বলেই কর্মীরা এত উৎসাহিত।’’
এ নিয়ে কটাক্ষ করে বিজেপির বীরভূম সংগঠনিক জেলার সহ সভাপতি বাবন দাস বলেন, ‘‘তৃণমূল অনুব্রত ছবি রাখবে কি রাখবে না সেটা ওদের ব্যাপার। কিন্তু ওরা যে বলছে সব কর্মীর মধ্যেই অনুব্রত আছে, তা হলে কি সব কর্মীকেই তিহারে পাঠানোর ব্যবস্থা করতে চাইছেন ওঁরা?” যদিও একইসঙ্গে তিনি বলেন, “অনুব্রত ছাড়া এখন যাঁরা আছেন, এঁদের কোনও দাম নেই। এত দিন ওঁরা সবাই জিতত অনুব্রতকে ভাঙিয়ে বা অনুব্রতের ছায়ায়। অনুব্রতকে বাদ দিয়ে এ বার ভোট করে দেখুক।”