—প্রতীকী ছবি।
সাম্প্রতিক সময়ে বামেদের মিছিল-সভায় হাজির হওয়া তফসিলি জাতি-জনজাতির ২৫০ জন যুবক-যুবতীকে নিয়ে উত্তর ২৪ পরগনায় কর্মশালা করেছে ডিওয়াইএফআই। তফসিলি জাতি-জনজাতির মধ্যে আরএসএসের ‘ক্রমবর্ধমান প্রভাবকে’ প্রতিহত করে বাম-প্রভাব বাড়াতে অন্য জেলাতেও এমন কর্মসূচি দরকার, মনে করছেন সংগঠনের রাজ্য নেতৃত্বের একাংশ। ভাবনা রয়েছে এই অংশের জন্য আলাদা ‘সাব-কমিটি’ তৈরির। বিশেষ ভাবে নজরে রাখা হচ্ছে সন্দেশখালির ঘটনা-প্রবাহও।
দলিত ও পিছিয়ে পড়া সম্প্রদায়কে আরএসএস কী চোখে দেখে, কী ভাবে হিন্দুত্ববাদী সংগঠনগুলি নিজেদের স্বার্থে ‘পিছিয়ে পড়া’ সম্প্রদায়কে ‘ব্যবহার’ করে, ফেব্রুয়ারির মাঝামাঝি বারাসতে জেলা সিপিএম কার্যালয়ের ওই কর্মশালায় ব্যাখ্যা করেন সিপিএম নেতা পলাশ দাস, রানাঘাটের সিপিএম প্রার্থী অলকেশ দাস প্রমুখ। ডিওয়াইএফআই-এর জেলা সম্পাদক সপ্তর্ষি দেব বলেন, “ওই যুবক-যুবতীরা কর্মশালা থেকে ফিরে তাঁদের এলাকায় সংগঠনের কাজ করছেন।”
ডিওয়াইএফআই এবং সিপিএম সূত্রের বক্তব্য, ভোট পরিসংখ্যান অনুযায়ী তফসিলি জাতি-জনজাতির ভোটারেরা উত্তর ২৪ পরগনার সাতটি বিধানসভা আসনের ভাগ্য নির্ধারণ ও অন্তত পাঁচ-ছ’টি আসনে খেলা ঘোরানোর ক্ষমতা রাখেন। বসিরহাট, বনগাঁ ও বারাসত লোকসভা কেন্দ্রের বহু এলাকায় সংখ্যাগুরু ভোটার এই জনগোষ্ঠীর। সিপিএমের পর্যবেক্ষণ, তৃণমূলের উপরে ক্ষিপ্ত এই গোষ্ঠীর অনেকেরই বিজেপি শিবিরে যাওয়ার প্রবণতা রয়েছে। এর প্রতিফলন দেখা গিয়েছে গত নির্বাচনের ফলেও। গত বিধানসভা ভোটে তফসিলি জাতি-জনজাতি অধ্যুষিত ৬৮টি আসনে বাম, কংগ্রেস, আইএসএফের সংযুক্ত মোর্চা ১১.৪৩% ও বিজেপি ৪২.৮৭% ভোট পেয়েছিল। ১৬টি আসনে মোর্চা ৫.৮২%, তৃণমূল ও বিজেপি যথাক্রমে ৪৫ এবং ৪৪% পায়। মতুয়া অধ্যুষিত ২১টি কেন্দ্রের ১২টি তৃণমূল ও ন’টি বিজেপি জেতে। এক সিপিএম নেতার কথায়, “তথ্য বলছে, সংখ্যালঘু, তফসিলি জাতি-জনজাতির সমর্থন ছাড়া বামেদের ঘুরে দাঁড়ানোর সম্ভাবনা ক্ষীণ।” সেই সূত্রে মতুয়াদের মধ্যে বাম-প্রভাব বাড়ানো নিয়েও কথা হচ্ছে।
তফসিলি জাতি-জনজাতির মানুষ সন্দেশখালিতে আন্দোলনের সামনের সারিতে রয়েছেন। সেখানে কিছু জায়গায় সিপিএমের ঝান্ডাও উড়তে দেখা যাচ্ছে। এই সুযোগকেও কাজে লাগাতে চাইছেন সিপিএম নেতৃত্ব।
তবে জাতিসত্তার রাজনীতি থেকে বরাবরই দূরে থাকার দাবি করেন বাম নেতৃত্ব। তাঁদের একাংশই এখন মনে করছেন, জাতিসত্তার রাজনীতিতে ভর করে বিজেপি এই রাজ্যে এগিয়েছে। এই প্রেক্ষিতে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়, তফসিলি জাতি-জনজাতিদের নিজস্ব দাবিগুলিকে সামনে রেখে বামেদেরও আন্দোলন করা জরুরি। এক সিপিএম নেতা বলেন, “ভাবনাটা একেবারে নতুন, তা নয়। ওই অংশের সমর্থন ফিরে পেতে পশ্চিমবঙ্গ সামাজিক ন্যায় মঞ্চ কাজ করছে।”