আইএসএফ বিধায়ক নওশাদ সিদ্দিকি (বাঁ দিকে), মহম্মদ সেলিম (মাঝে), অধীর চৌধুরী (ডান দিকে)। — ফাইল চিত্র।
ডায়মন্ড হারবারে মজনু লস্করকে প্রার্থী করাই শুধু নয়, ২০২১ বিধানসভা ভোটের মুখে তৈরি হওয়া দল, আইএসএফ সিপিএমের সঙ্গেও জোট ভেঙেছে। এ বার তা নিয়ে পাল্টা প্রতিক্রিয়া আসতে শুরু করেছে সিপিএমের দিক থেকে। ঘুরিয়ে নওশাদের ‘মুরোদ’ নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক তথা মুর্শিদাবাদ লোকসভার কংগ্রেস সমর্থিত সিপিএম প্রার্থী মহম্মদ সেলিম। ভাঙড়ের বিধায়ককে ‘ছোট ওয়েইসি’ এবং ‘বিজেপির ভোটকাটুয়া’ বলে কটাক্ষ করেছেন প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি তথা বহরমপুরের প্রার্থী অধীররঞ্জন চৌধুরী। পাল্টা জবাব দিয়েছেন নওশাদও।
বৃহস্পতিবার আইএসএফ বিধায়ক বলেছেন, “যাঁদের ধর্মনিরপেক্ষ শক্তি হিসেবে বসাতে চাইছি, তাঁরাই আবার পিছড়েবর্গদের নিয়ে তৈরি দল আইএসএফকে কোণঠাসা করছেন! দুঃখের বিষয়, জানি না কোন দলের মধ্যে কী ভাবে আরএসএসের লোক ঢুকে বসে আছে।” নাম না করলেও নওশাদের নিশানায় যে সিপিএম, তা বলে দিতে হয় না। বৃহস্পতিবারের নওশাদের মন্তব্যের জবাব এসেছে শুক্রবার। সেলিম নাম না করে প্রশ্ন তুলেছেন নওশাদদের ‘মুরোদ’ নিয়ে। পাশাপাশি, আইএসএফ আসলে কার বিরুদ্ধে লড়ছে, তা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন। সিপিএম প্রার্থীকে সাংবাদিকেরা প্রশ্ন করেন নওশাদের সরে দাঁড়ানো নিয়ে। সেলিমের জবাব ছিল, “আমি তো লড়াইয়ের ময়দানে আছি। সবার মুরোদ হয় না লড়াইয়ে শেষ পর্যন্ত থাকার।” জোট ভাঙার দায় নওশাদ ঠেলেছিলেন সিপিএমের ঘাড়ে। তার জবাবে সেলিম বলেছেন, “লড়াইটা হচ্ছে বিজেপির বিরুদ্ধে। কেউ কেউ বিজেপির বিরুদ্ধে বলছে, কেউ কেউ সিপিএমের বিরুদ্ধে। বুঝতে হবে কে কার পক্ষে।” তা হলে কি ঘুরিয়ে একদা জোটসঙ্গী আইএসএফকে বিজেপির বদলে সিপিএমের বিরুদ্ধে লড়ার অভিযোগেই বিদ্ধ করলেন সেলিম?
চুপ ছিলেন না সেলিম-অধীর জুটির দ্বিতীয় জনও। শুক্রবার বহরমপুরে জেলা কংগ্রেস কার্যালয়ে সাংবাদিক বৈঠক করেন অধীর। বাংলায় বামেদের সঙ্গে আইএসএফের জোট না হওয়ার জন্য অধীরকে দায়ী করে নওশাদের করা মন্তব্য প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘‘আমাদের এখানকার ওয়াইসি এসেছেন! ছোট ওয়াইসি হায়দরাবাদ থেকে এখানে এসেছেন। তিনি এখন অনেক মন্তব্য করবেন। সব বিজেপির ভোটকাটুয়া। বিজেপির পয়সায় ময়দানে নেমেছে!’’ ডায়মন্ড হারবার কেন্দ্র থেকে নওশাদের প্রার্থী না হওয়া নিয়ে অধীরের কটাক্ষ, ‘‘এত দিন লড়ব লড়ব করে এখন লড়ছেন না কেন? আসলে উনি বিজেপির ভোটকাটুয়া। যেমন ওয়াইসিকে ব্যবহার করে বিজেপি।’’ অধীরের মন্তব্য প্রসঙ্গে নওশাদ বলেন, ‘‘অধীরবাবুকে একটা প্রশ্ন করব, কংগ্রেসের জেলা সভাপতিরা বলছেন , উনি নিজে জেতার জন্য বাংলার কংগ্রেসকে শেষ করার শপথ নিয়েছেন। আমি দলের কথা ভেবেছি, ব্যক্তি নওশাদের নয়।’’
২০২১ সালে বিধানসভা ভোটের মুখে সদ্য তৈরি হওয়া নওশাদদের দল আইএসএফকে সংযুক্ত মোর্চায় শামিল করার ক্ষেত্রে সেলিমের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা ছিল। ফুরফুরা শরিফের সঙ্গে আলিমুদ্দিনের সেতুবন্ধনের ক্ষেত্রে সেলিমই মুখ্য ভূমিকা নিয়েছিলেন বলে শোনা যায়। ২০২১ সালের বিধানসভার মুখে তৈরি হওয়া সেই বাম-আইএসএফ জোট তুবড়ে গেল লোকসভা নির্বাচন আসতেই। তার নেপথ্যে যেমন রয়েছে কিছু আসন নিয়ে পারস্পরিক টানাপড়েন, তেমনই আরও একটি ‘ফ্যাক্টর’ নওশাদের ‘ডায়মন্ড-হুঙ্কার’। গত কয়েক মাস ধরেই নিয়ম করে নওশাদ বলে আসছিলেন যে, তিনি ডায়মন্ড হারবারে তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিরুদ্ধে লড়াই করবেন এবং তাঁকে হারাবেন। ঘটনাচক্রে, এ বছরের গোড়ায় প্রথম বার যখন নওশাদ ডায়মন্ড হারবার লোকসভা কেন্দ্রে অভিষেকের বিরুদ্ধে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার ইচ্ছেপ্রকাশ করেছিলেন তখনই সেলিম সরাসরি বলে দিয়েছিলেন, ‘‘আমি নওশাদের সঙ্গে এ নিয়ে সহমত নই।’’ নিয়মিত ডায়মন্ড হারবারে দাঁড়ানো নিয়ে বিভিন্ন বক্তব্য দিয়ে যাচ্ছিলেন। নওশাদ সেলিমের কথা মানেননি, আইএসএফও তাঁকে নিরস্ত করেনি। কিন্তু বৃহস্পতিবার শেষ পর্যন্ত অভিষেকের বিরুদ্ধে মজনুকে প্রার্থী ঘোষণা করে আইএসএফ। পাশে বসে তা সমর্থন করেন নওশাদ। সেই সঙ্গে সিপিএমের সঙ্গে জোট ভাঙাও আনুষ্ঠানিক তকমা পায়। এর পরেই শুরু হয়ে গিয়েছে আক্রমণ, পাল্টা আক্রমণের ঝড়।