বামফ্রন্ট চেয়ারম্যান বিমান বসু। — ফাইল চিত্র।
দীর্ঘ দিন ধরে বামফ্রন্টের তরফে যে বসিরহাট আসনে লড়াই করে এসেছে সিপিআই, ২০২৪-এর লোকসভায় সেই আসন নিয়ে নিল সিপিএম। এ বার সন্দেশখালিকাণ্ডে গ্রেফতার হওয়া নিরাপদ সর্দার বসিরহাট আসনে সিপিএম প্রার্থী হচ্ছেন। এ ছাড়াও আরও চার আসনে প্রার্থীদের নাম ঘোষণা করেছেন বামফ্রন্ট চেয়ারম্যান বিমান বসু। ব্যারাকপুরে সিপিএমের প্রতীকে প্রার্থী হচ্ছেন অভিনেতা দেবদূত ঘোষ। ডায়মন্ড হারবার কেন্দ্রে সিপিএম প্রার্থী করেছে যুব নেতা প্রতীকুর রহমানকে।
ইন্দ্রজিৎ গুপ্ত থেকে শুরু করে মনোরঞ্জন সুর, অজয় চক্রবর্তী— বসিরহাট আসন থেকে জিতেই সংসদ মাতিয়েছেন সিপিআইয়ের এই তিন প্রবাদপ্রতিম নেতা। ভরা বাম জমানায় বসিরহাট আসন কখনও খালি হাতে ফেরায়নি সিপিআইকে। বাম জমানা শেষে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সময়েও বসিরহাট আসনে বরাবর প্রার্থী দিয়েছে সিপিআই-ই। কিন্তু ২০২৪-এ তাতে ঘটে গেল বদল। এ বার সিপিআইয়ের হাত থেকে বসিরহাট আসনটি নিয়ে নিল সিপিএম। সেখানে প্রার্থী সন্দেশখালিকাণ্ডে গ্রেফতার হওয়া প্রাক্তন বিধায়ক নিরাপদ সর্দার।কিন্তু কী করে ঘটল এমন বদল? বামফ্রন্ট সূত্রে খবর, অদলবদলের প্রক্রিয়া নিয়ে চাপানউতোর হয়েছে ঠিকই, কিন্তু তা ফ্রন্টের বৈঠকের চার দেওয়ার পেরিয়ে প্রকাশ্যে আসেনি। প্রসঙ্গত, দিন পনেরো আগেই আনন্দবাজার অনলাইনকে সিপিআইয়ের রাজ্য সম্পাদক স্বপন বন্দ্যোপাধ্যায় জানিয়েছিলেন, সিপিআই কিছুতেই ইন্দ্রজিৎ গুপ্ত যে বসিরহাট থেকে লড়তেন, সেই আসন হাতছাড়া করবে না। তাঁর সাফ কথা ছিল, ‘‘ইন্দ্রজিৎ গুপ্তের আসন অন্য কারও হাতে যেতে দেব না।’’ কিন্তু তাহলে কী করে অসাধ্য সাধন করল আলিমুদ্দিন? সূত্রে খবর, এই কঠিন সময়ে শরিকদের আসন নিয়ে মতবিরোধ যাতে মাত্রা না ছাড়ায় সে ব্যাপারে শুরু থেকেই সতর্ক ছিল সিপিআই। তাই সিপিএম যখন নিরাপদের নাম বসিরহাটের প্রার্থী হিসাবে প্রস্তাব করে, তখন তা নিয়ে বিশেষ আপত্তির রাস্তায় হাঁটেনি সিপিআই। ওই দলের প্রথম সারির এক নেতার কথায়, ‘‘আমাদের রাজ্য সম্পাদকমণ্ডলীতে এই বদল পাস করাতে হতো। কিন্তু বৈঠকে মতানৈক্য না হওয়ায় একাধিক বৈঠক করতে হয়েছে।’’
বসিরহাটের পাশাপাশি, ব্যারাকপুরেও প্রার্থী দিয়েছে সিপিএম। সেখানে এ বার লাল ঝাণ্ডা নিয়ে লড়াইয়ে নামবেন অভিনেতা দেবদূত ঘোষ। সিপিএম সূত্রের খবর, ব্যারাকপুরে কে প্রার্থী হবেন তা নিয়ে দলের অন্দরে সমস্যা মাথাচাড়া দিয়েছিল। মূলত, উত্তর ২৪ পরগনায় সিপিএমের তিন গোষ্ঠীর মধ্যে প্রার্থীর নাম নিয়েও ঐক্য হচ্ছিল না। সূত্রের খবর, একটি গোষ্ঠী ব্যারাকপুরের প্রার্থী হিসাবে শ্রমিক নেত্রী গার্গী চট্টোপাধ্যায়ের নাম প্রস্তাব করে। কিন্তু অন্য গোষ্ঠী তাতে আপত্তি জানায়। জেলার একটি গোষ্ঠীর দাবি ছিল, ওই আসনে তরুণ কোনও মুখকে সুযোগ দেওয়া হোক। সেই সূত্রেই যুব নেতা শতরূপ ঘোষকে ওই আসনে লড়ার প্রস্তাব দেওয়া হয়। কিন্তু সূত্রের দাবি, শতরূপ তাতে লড়তে সম্মত হননি। তার পরেই দেবদূতের নাম আসে। প্রসঙ্গত, গত বিধানসভা ভোটে টালিগঞ্জ আসনে তৃণমূলের অরূপ বিশ্বাস এবং বিজেপি প্রার্থী বাবুল সুপ্রিয়ের বিরুদ্ধে সিপিএম প্রার্থী হিসাবে লড়াই করেছিলেন দেবদূত। এ বার লাল ঝাণ্ডা কাঁধে নামবেন ব্যারাকপুরের সমরে।
ডায়মন্ড হারবারে নওশাদ লড়লে সিপিএম তথা বামেরা সেখানে প্রার্থী দিত না, এমনই ছিল ঘোষিত সিদ্ধান্ত। কিন্তু বৃহস্পতিবার ডায়মন্ড হারবারে মজনু লস্করের নাম ঘোষণা করে আইএসএফ। তার পর শুক্রবার ওই আসনে এসএফআইয়ের সদ্য প্রাক্তন রাজ্য সভাপতি প্রতীকুর রহমানের নাম ঘোষণা করে দিলেন বামফ্রন্ট চেয়ারম্যান বিমান। প্রকৃত পক্ষে, ডায়মন্ড হারবার আসনে একান্তই যদি বামেদের প্রার্থী দিতে হয়, তাহলে প্রতীকুরের নামই ভাবনায় ছিল আলিমুদ্দিনের। গত বিধানসভা ভোটে তিনি ডায়মন্ড হারবার কেন্দ্রেও সিপিএম প্রার্থী ছিলেন।
এ ছাড়া আরও দু’টি আসনে প্রার্থীর নাম ঘোষণা করেছে বামফ্রন্ট। বারাসত আসনে লড়াই করবেন ফরওয়ার্ড ব্লকের প্রবীর ঘোষ এবং ঘাটাল আসনে দেব-হিরণের বিরুদ্ধে লড়বেন সিপিআই প্রার্থী তপন গঙ্গোপাধ্যায়। বাকি আসনগুলির মধ্যে কোনগুলি কংগ্রেসকে দেওয়া হবে, আর কোনটিতে লড়বেন বামফ্রন্টের প্রার্থীরা, তা চূড়ান্ত করতে আরও বেশ কয়েকটি বৈঠক হবে বলে সূত্রের খবর। তবে ‘কাঁটা’ রয়ে গেল পুরুলিয়া আসন নিয়ে। ওই আসনটি ফরওয়ার্ড ব্লকের। তারা এখনও ওই আসনে লড়াই করার সিদ্ধান্তেই অনড়। সে ক্ষেত্রে জটিলতা বৃদ্ধি পেয়েছে কোচবিহারে কংগ্রেস প্রার্থী প্রত্যাহার না করায়। ফরওয়ার্ড ব্লকের দাবি, কোচবিহার আসনে এক তরফা ভাবে প্রার্থী দিয়ে বিষয়টিকে আরও জটিল করে তুলেছে কংগ্রেসই। তবে, বামফ্রন্ট সূত্রে খবর, শুক্রবারও চেয়ারম্যান বিমান ফরওয়ার্ড ব্লক নেতৃত্বকে বুঝিয়েছেন যে, বামফ্রন্টগত ভাবে কোচবিহারের কংগ্রেস প্রার্থী পিয়া রায়চৌধুরীর হয়ে প্রচারে নামবেন না। বামফ্রন্ট সর্বতো ভাবে ওই আসনের ফরওয়ার্ড ব্লক প্রার্থী নীতীশচন্দ্র রায়ের সমর্থনে নামবে। সব মিলিয়ে, আইএসএফের সঙ্গে জোট ভেস্তে গেলেও বামফ্রন্টের মধ্যে যাতে আসন বণ্টন নিয়ে অসন্তোষের সুর না থাকে, তা নিশ্চিত করতেই এখন ব্যস্ত ফ্রন্ট নেতৃত্ব।