যাদবপুরের সিপিএম প্রার্থী সৃজন ভট্টাচার্যের সমর্থনে কেন্দ্রীয় মিছিল। ছিলেন সিপিএমের তরফে সুজন চক্রবর্তী, বিকাশ ভট্টাচার্য, কান্তি গঙ্গোপাধ্যায়, কংগ্রেসের সৌম্য আইচ রায়-সহ বাম ও কংগ্রেসের কমী-সমর্থকেরা। — নিজস্ব চিত্র।
বরানগর বিধানসভা কেন্দ্রের উপনির্বাচনে সিপিএমের প্রার্থী হলেন তন্ময় ভট্টাচার্য। তারই পাশাপাশি বারাসত লোকসভা কেন্দ্রে প্রার্থী বদল করতে হল বামফ্রন্টকে। ওই কেন্দ্রে ফরওয়ার্ড ব্লকের প্রার্থী প্রবীর ঘোষের সঙ্গে বিজেপির যোগসূত্র সামনে আসায় বিতর্ক তৈরি হয়েছিল। প্রবীরের বদলে সেখানে প্রার্থী করা হল ফ ব-র উত্তর ২৪ পরগনা জেলা সম্পাদক সঞ্জীব চট্টোপাধ্যায়কে।
তন্ময় আগে দমদম উত্তর কেন্দ্রের বিধায়ক ছিলেন। গত বার বিধানসভা ভোটে পরাজয় এবং সিপিএম শূন্যে নেমে যাওয়ার পরে আইএসএফের সঙ্গে সমঝোতা নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করে দলের রাজ্য সম্পাদক মহম্মদ সেলিমকে নাম না করে নিশানা করেছিলেন তন্ময়। তাঁর জন্য দলে তাঁকে ভর্ৎসনার মুখে পড়তে হয়েছিল। এ বার আইএসএফের সঙ্গে বামেদের সমঝোতা শেষ পর্যন্ত হয়নি। উপনির্বাচনে প্রার্থী হয়ে তন্ময় বলেছেন, বিজেপি ও তৃণমূল কংগ্রেসের দ্বিমেরু রাজনীতিকে পরাস্ত করার লক্ষ্যেই তাঁদের লড়াই। আর সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক সেলিমের বক্তব্য, ‘‘নির্বাচনী বন্ডের দুর্নীতি, দুষ্কৃতী-রাজের প্রতিবাদ, সংবিধান ও ধর্মনিরপেক্ষতা রক্ষার লড়াইয়ে আমাদের স্লোগান— ‘হক-রুটি-রুজি, জনতাই পুঁজি’। বাম ও কংগ্রেস প্রার্থীদের সর্বত্র সমর্থন করার জন্য বাংলার মানুষকে আবেদন জানাচ্ছি।’’
তৃণমূল কংগ্রেস ছেড়ে বিজেপিতে যোগ দেওয়ার সময়ে তাপস রায় বিধায়ক-পদে ইস্তফা দেওয়ায় বরানগরে এ বার উপনির্বাচন হচ্ছে। ওই কেন্দ্রে তৃণমূলের প্রার্থী সায়ন্তিকা বন্দ্যোপাধ্যায় এবং বিজেপির সজল ঘোষ। বরানগরের পাশাপাশি ভগবানগোলায় বিধানসভা উপনির্বাচন আছে, সেখানে প্রার্থী দিয়েছে কংগ্রেস। বরানগরে উপনির্বাচনের প্রার্থী ছাড়াও বুধবার জয়নগর লোকসভা আসনে আরএসপি প্রার্থী সমরেন্দ্র নাথ মণ্ডলের নাম ঘোষণা করেছেন বামফ্রন্টের চেয়ারম্যান বিমান বসু। কাঁথি আসনটি কংগ্রেসকে ছেড়ে দেওয়া হচ্ছে বলে বাম সূত্রের খবর। এই প্রশ্নে আলিমুদ্দিন স্ট্রিটে এ দিন সেলিমের ও ইঙ্গিতপূর্ণ মন্তব্য, ‘‘আমাদের দল ও বামফ্রন্টের প্রার্থী দেওয়া সম্পূর্ণ হয়েছে। সমঝোতার ভিত্তিতে কংগ্রেসের জন্য আসন ছেড়ে রাখা হয়েছে।’’
তবে আসন ছাড়া নিয়ে বামফ্রন্টে অনড় অবস্থান নেওয়ার পরে প্রার্থী নিয়ে বিড়ম্বনায় পড়তে হয়েছে বাম শরিক ফ ব-কে। বারাসত কেন্দ্রে তাদের প্রার্থী প্রবীর ঘোষ বিজেপির শিক্ষক সংগঠনের সঙ্গে যুক্ত বলে তথ্য পাওয়া গিয়েছে। সূত্রের খবর, বিষয়টি নিয়ে সিপিএমের উত্তর ২৪ পরগনা জেলা নেতৃত্ব বামফ্রন্ট চেয়ারম্যান বিমানবাবুর কাছে তীব্র আপত্তি জানিয়েছিলেন। প্রশ্ন উঠেছে ফ ব-র র অন্দরেও। বিমানবাবু ফ ব নেতৃত্বকে অনুরোধ করেন প্রার্থী বদলানোর জন্য। ফ ব-র রাজ্য নেতৃত্ব এ দিন দলের জেলা নেতৃত্বের সঙ্গে বৈঠকে বসেন। তার পরে রাজ্য বামফ্রন্টের কাছে প্রবীরের পরিবর্তে সরিয়ে বারাসতের প্রার্থী হিসেবে সঞ্জীবের নাম পাঠানো হয়। বস্তুত, সিপিএমের রাজ্য নেতৃত্ব প্রথম থেকে সঞ্জীবকেই বারাসতে প্রার্থী চেয়েছিলেন। সঞ্জীব অবশ্য বলেছেন, ‘‘দলের জেলা সম্পাদক থাকায় আমি নির্বাচনে প্রার্থী হব না বলে ঠিক ছিল। পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে অন্য সিদ্ধান্ত নিতে হয়েছে। বামফ্রন্ট এবং দল যা দায়িত্ব দিয়েছে, সর্বশক্তি দিয়ে তা পালনের চেষ্টা করব।’’
দু’দিন আগে হেমন্ত বসু ভবনে সাংবাদিক সম্মেলন করে নিজেদের ভাগের আসন ছাড়তে নারাজ মনোভাব দেখিয়েছিলেন ফ ব-র রাজ্য সম্পাদক নরেন চট্টোপাধ্যায়। তোপ দেগেছিলেন কংগ্রেসকেও। শেষ পর্যন্ত যে আসনে টানাপড়েন নেই, সেখানেও প্রার্থী নিয়ে বিড়ম্বনা তৈরির পরে এ দিন সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক সেলিমের বক্তব্য, ‘‘ফরওয়ার্ড ব্লককে বেশি কথা বলতে বারণ করা হয়েছে। কোচবিহারে বামফ্রন্টের ঘোষিত প্রার্থী আছেন, যিনি ফ ব-র। পুরুলিয়া আসনে বামফ্রন্ট প্রার্থী দেয়নি, ওখানে কংগ্রেসের প্রার্থী আছে।’’ পুরুলিয়ায় দলের তরফে পৃথক প্রার্থী দিয়ে রেখেছেন নরেনবাবুরা। সিপিএম সূত্রের খবর, ঘাটালে কংগ্রেস আর প্রার্থী দেবে না বলে তারা বার্তা পেয়েছে। সেখানে সিপিআইয়ের প্রার্থীই লড়বেন। দক্ষিণ ২৪ পরগনার কোনও একটি আসনের জন্য কংগ্রেস জোর করলে তখন কী হবে, তা অবশ্য এখন স্পষ্ট নয়।