অসমে রোড-শো প্রিয়ঙ্কা গান্ধী বঢরার। নিজস্ব চিত্র।
যৌন কেলেঙ্কারিতে অভিযুক্ত কর্নাটকের জেডিএস সাংসদ প্রজ্বল রেভান্নাকে দেশ ছাড়তে বাধা না দেওয়ায় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর তীব্র সমালোচনা করলেন কংগ্রেস নেত্রী প্রিয়ঙ্কা গান্ধী বঢরা। তৃতীয় পর্যায়ের ভোটের প্রচারে অসমের ধুবুড়িতে এসে আজ তাঁর জনসভায় রেভান্না কাণ্ড, যৌন হেনস্থার প্রতিবাদে মহিলা কুস্তিগিরদের আন্দোলন, মণিপুরের মহিলাদের নগ্ন করে হাঁটানোর মতো ঘটনার উদাহরণ তুলে ধরেন প্রিয়ঙ্কা। তিনি দাবি করেন, ‘বেটি বাঁচানোর’ ঝুটো দাবি করা বিজেপির আমলে দেশের মেয়েরা নানা ভাবে নির্যাতিতা হয়েই চলেছেন।
কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ মঙ্গলবার অসমে এসে জোট শরিক জেডিএসের নেতা রেভান্নার বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগের নিন্দা করেও বলেছেন যে, এ বিষয়ে নিজের দলের রাজ্য সরকারকে প্রশ্ন করা উচিত প্রিয়ঙ্কার। আজ প্রিয়ঙ্কা পাল্টা অভিযোগ তোলেন, ইচ্ছে করলেই দেশ থেকে পালানোর আগে রেভান্নাকে আটকাতে পারত বিজেপি। কিন্তু প্রধানমন্ত্রী মোদী বা স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী শাহ তা করেননি। কারণ, অভিযুক্ত ব্যক্তি বিজেপির শরিক দলের নেতা। খোদ প্রধানমন্ত্রীই তাঁর হয়ে কিছু দিন আগে জনসভায় ভোট ভিক্ষা করেছেন। চাপের মুখে এখন অবশ্য রেভান্নাকে সাসপেন্ড করেছেন জেডিএস নেতৃত্ব।
আজ প্রিয়ঙ্কা বলেন, “উন্নাও, হাথরসে মহিলাদের সঙ্গে জঘন্য অপরাধ করা ব্যক্তিদের বিজেপি ক্রমাগত আড়াল করেছে। মণিপুরে এক সেনার স্ত্রীকে ও অন্য এক তরুণীকে নগ্ন করে রাস্তায় হাঁটানো হয়েছে। সকলে সেই ভিডিয়ো দেখেছেন। তা নিয়েও মোদী ও শাহ চুপ। তাঁরা ওই মহিলাদের বাঁচাতে আসেননি। কোনও পদক্ষেপ করা হয়নি। বিজেপি সর্বত্র মহিলাদের বিরুদ্ধে অপরাধহতে দিচ্ছে।”
প্রিয়ঙ্কার অভিযোগ, অলিম্পিকে পদক পেলে মহিলা কুস্তিগিরদের সঙ্গে ছবি তোলেন মোদী। কিন্তু সেই মহিলারাই যখন মোদীর দলের এক নেতার অন্যায়ের প্রতিবাদে রাস্তায় নেমে আন্দোলন করেন, সাহায্য চান— তখন মোদী চুপ করে থাকেন।
কংগ্রেস নেত্রী বলেন, ‘‘মোদী আদতে জনতার দৈনন্দিন দুর্দশার কোনও খবরই রাখেন না। আগেকার আমলের স্বৈরাচারী রাজাদের মতো বাস্তব জগৎ থেকে দূরে বাস করা এক উদ্ধত নেতা তিনি। সেই ঔদ্ধত্য এমন পর্যায়ে পৌঁছেছে যে, তাঁর দলের প্রার্থীরা এখন ভোটে জেতার পরে দেশের সংবিধান বদলে দেওয়ার কথা বলছেন।’’ বিজেপি দাবি করছে, প্রধানমন্ত্রী ৭০ বার উত্তর-পূর্বে এসেছেন। তিনি উত্তর-পূর্বকে বিশেষ গুরুত্ব দেন। এই প্রসঙ্গে প্রিয়ঙ্কা বলেন, ‘‘আদতে প্রধানমন্ত্রী এই অঞ্চলকে বর্জন করেছেন। কিন্তু আমার ভাই রাহুল মণিপুর থেকে অসমে ভারত জোড়ো ন্যায় যাত্রা চালিয়েছেন। এখানকার মানুষকে জুড়তে, সকলের কথা জানতে চেয়েছেন।’’
দুর্নীতি নিয়ে অসম ও কেন্দ্রের শাসক দল বিজেপিকে তীব্র আক্রমণ করে প্রিয়ঙ্কা বলেন, “বিজেপি মাত্র ১০ বছরে বিশ্বের সবচেয়ে ধনী রাজনৈতিক দল হয়ে উঠেছে। কংগ্রেস ৭০ বছরেও সেই জায়গায় পৌঁছতে পারেনি। এর পরেও ওরা কোন মুখে কংগ্রেসকে অসৎ বলে! ওদের আমলে দেশে ৪৫ বছরের মধ্যে বেকারত্বের হার সর্বাধিক।”
অসমের মুখ্যমন্ত্রী হিমন্তবিশ্ব শর্মাকেও নিশানা করেন প্রিয়ঙ্কা। কংগ্রেসের ইস্তাহার নিয়ে হিমন্ত বলেছিলেন, তা বামপন্থী মৌলবাদী বা পাকিস্তানিদের প্রভাবে তৈরি। প্রিয়ঙ্কা বলেন, ইস্তাহার ভাল করে না পড়েই বিজেপি অপপ্রচার চালাচ্ছে। তাঁর কথায়, “অসমে মাফিয়ারাজ চলছে। মুখ্যমন্ত্রীর বিরুদ্ধে বহু দুর্নীতিতে জড়িত থাকার অভিযোগ রয়েছে। সামনে শত্রুতা দেখালেও অসমে ইউডিএফ প্রধান তথা ধুবুড়ির প্রার্থী বদরুদ্দিন আজমলের সঙ্গে হিমন্তের গোপন আঁতাঁত রয়েছে, যেমনটা আছে তেলঙ্গানা বিজেপির সঙ্গেআসাদুদ্দিন ওয়েইসির।”