Holi 2025 Special

রঙের ছুতোয় ছুঁয়ে দেওয়া শরীর! দোল উৎসবের অপ্রীতিকর দিকটি নিয়ে কী বললেন অভিনেত্রীরা

রং খেলার অছিলায় ছুঁয়ে দেওয়া যায় অন্যদের। রঙের উৎসব মহিলাদের জন্য কতটা নিরাপদ? এ প্রশ্ন ওঠে প্রায়ই।

Advertisement

আনন্দবাজার ডট কম সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ১৪ মার্চ ২০২৫ ০৮:৫৬
Share:
Tollywood actresses Rupanjana Mitra, Tanika Basu, Ushasie Chakraborty talks about the importance of consent in Holi

রং খেলায় সম্মতির গুরুত্ব নিয়ে বললেন তানিকা, রূপাঞ্জনা, উষসী। ছবি: সংগৃহীত।

‘বুরা না মানো হোলি হ্যায়’, এই প্রবাদের সঙ্গে প্রায় সকলেই পরিচিত। দোল উৎসব ও হোলি মানেই যেন অদৃশ্য ছাড়পত্র অন্যকে রং মাখিয়ে দেওয়ার। তবে এই রং খেলার আড়ালেই লুকিয়ে থাকে বহু সম্মতিহীন স্পর্শ। রং খেলার অছিলাতেই ছুঁয়ে দেওয়া যায় অন্যদের। রঙের উৎসব মহিলাদের জন্য কতটা নিরাপদ? এ প্রশ্ন ওঠে প্রায়ই। সম্প্রতি রেহা অদানি নামে এক নেটপ্রভাবী রঙের উৎসবের অন্ধকার দিক তুলে ধরেছেন।

Advertisement

উত্তরপ্রদেশের বিভিন্ন জায়গায় সাড়ম্বরে রঙের খেলায় মাতেন মানুষ। রেহার কাছে বহু মহিলার প্রশ্ন এসেছিল, একাকী ভ্রমণের জন্য দোলের সময় এই জায়গাগুলি কতটা নিরাপদ? নেটপ্রভাবীর স্পষ্ট মত, মহিলাদের জন্য মোটেই এই জায়গাগুলি নিরাপদ নয়। 'স্বয়ং কৃষ্ণও তো সখীদের সঙ্গে খুনসুটি করতেন', এই অজুহাতে নন্দগাঁও ও বরসানা এলাকার পুরুষেরা রং খেলায় মাতেন। রেহা জানিয়েছেন, ভিড়ের মধ্যে পুরুষদের নিশানায় থাকেন মহিলারাই। গোপনাঙ্গ লক্ষ করেই তাঁরা রং ছোড়েন। তবে বৃন্দাবনের দোল উৎসব তুলনায় কিছুটা ভাল বলে জানিয়েছেন রেহা।

একান্তই এই সব এলাকায় দোল খেলার পরিকল্পনা থাকলে পুরুষের বেশ ধরে যাওয়ার পরামর্শও দিয়েছেন তিনি! আপাদমস্ত ঢাকা পোশাক পরার কথাও বলেছেন। এ-ও কি সম্ভব! না কি এ কোনও সমাধান!

Advertisement

তা ছাড়া, শুধুই কি উত্তরপ্রদেশ? চেনা পরিচিতদের দলে রং খেলতে গিয়েও অনেক সময়ে হেনস্থার শিকার হন মহিলারা। পরিচিত হলেও কি সম্মতি ছাড়া সামান্য আবিরও মাখানো যায়? টলিপাড়ার অভিনেত্রীদের কাছেও এই প্রশ্ন রেখেছিল আনন্দবাজার ডট কম।

অভিনেত্রী তানিকা বসু মনে করেন, রং মাখানোর আগে অবশ্যই সম্মতি নেওয়া উচিত। শুধু তাই-ই নয়। সেই ব্যক্তি রং খেলায় যোগ দিতে চান কি না আদৌ, সেটাও আগে জানা উচিত। তানিকা মনে করেন, “শুধু রং খেলা নয়। অনেকে জোর করে মাদক খাইয়ে দেয় এই দিন। গায়ে হাত দেওয়ার মতো এটাও ঘটে থাকে। কোনওটাই ঠিক নয়। ‘বুরা না মানো হোলি হ্যায়’ এই বিষয়টাই আমি পছন্দ করি না। এই ধারণাটাই বদলানো দরকার।”

সম্মতি ছাড়া স্পর্শের অভিজ্ঞতা বাসে, ট্রামে, রাস্তায় প্রায় সব মহিলারই রয়েছে। ব্যতিক্রমী নন তানিকাও। তবে দোলের সময়ে তাঁর সম্মতি ছাড়া তাঁকে রং মাখানো হয়েছে, এমন হয়নি। কারণ, দোল খেলেন না অভিনেত্রী। ছোটবেলা থেকেই দোল খেলায় বাবার অনুমতি পাননি তিনি। তাঁর কথায়, “কলেজে পড়ার সময়ে আমার ইচ্ছে হত দোল খেলতে। কিন্তু বাবা অনুমতি দিতেন না। পরে বড় হয়ে বুঝেছি, বাবা হয়তো ঠিকই বলতেন। আমারও দোল খেলা নিয়ে আগ্রহ কমতে থাকে। এখন তো অন্য দিনের মতোই দোলের দিনটা কাটাই। খুব বড়জোর বন্ধুরা একসঙ্গে হয়ে সামান্য আবির খেলা হয়।”

দোল খেলায় সম্মতিহীন স্পর্শ করার সুযোগ পায় মানুষ। তাই কি প্রথম থেকেই বাবার অনুমতি মেলেনি? তানিকা বলেন, “আমি খুবই রক্ষণশীল পরিবারে বড় হয়েছি। পরিবারেও কাউকে খেলতে দেখিনি। অনেক কিছুতেই আমি অনুমতি পাইনি। হয়তো রং খেলা তেমন নিরাপদ নয় বলেই বাবা নিষেধ করতেন। তবে আমার কোনও আক্ষেপ নেই।”

দোল উপলক্ষে শান্তিনিকেতন যাচ্ছেন উষসী চক্রবর্তী। রং খেলার তেমন পরিকল্পনা নেই। বসন্তের শান্তিনিকেতন উপভোগ করতেই এই উদ্যোগ। বন্ধুদের সঙ্গে সামান্য আবির দিয়ে খেলার পরিকল্পনা অভিনেত্রীর। বরাবরই ঘনিষ্ঠ বন্ধুদের সঙ্গেই দোল উদ্‌যাপন করেন। উষসীর কথায়, “দোল খেলতে গিয়ে আমার কোনও অপ্রীতিকর অভিজ্ঞতা নেই। তার কারণ আমরা খুব ঘনিষ্ঠ বন্ধুরা মিলে নিরাপদ পরিসরে রং খেলি। ছোটবেলায় কাদা দিয়ে দোল খেলা হত। কিন্তু এখন বড় হয়ে সেই প্রশ্ন তো ওঠেই না। তবে রং খেলতে গিয়ে অপ্রীতিকর ঘটনার মুখে অনেক মেয়েই পড়েছেন। সেটা তো একেবারেই অনভিপ্রেত। রং খেলার নাম করে কেউ স্পর্শ করে গেল, এটা তো হতে পারে না।”

রং খেলার সময়ে সবার আগে প্রয়োজন সম্মতি। এমনকি বন্ধুত্ব থাকলেও সম্মতি ছাড়া জোর করে রং মাখানোয় বিশ্বাসী নন অভিনেত্রী রূপাঞ্জনা মিত্র। অভিনেত্রী বলেছেন, “অনেকেরই কিন্তু রং নিয়ে আতঙ্ক থাকে। একটা সময়ে দোলের দিন রাস্তায় বেরোলেই বেলুন ছোড়া হত। সম্মতির কথা কেউ ভাবত না। তবে সেই সময়টা আমরা পার করে এসেছি। ‘বুরা না মানো হোলি হ্যায়’ বলে রং ছুড়ে দেওয়া যায় না।”

বরাবরই ঘনিষ্ঠ পরিসরে দোল খেলতে অভ্যস্ত রূপাঞ্জনা। তাই সেই ভাবে কোনও অপ্রীতির অভিজ্ঞতা হয়নি অভিনেত্রীর। তাঁর কথায়, “কয়েকটা পার্টিতে গিয়ে দেখেছি, আবহাওয়া তেমন সুস্থ থাকে না। যদিও সরাসরি আমার সঙ্গে কোনও খারাপ ঘটনা ঘটেনি। তবে আমি একদমই হোলি পার্টিতে গিয়ে রং খেলার মতো মানুষ নই। বরং এই ধরনের জমায়েত এড়িয়েই চলি।”

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement