সস্ত্রীক বিজেপি নেতার অবস্থান। নিজস্ব চিত্র।
লোকসভা ভোটের মুখে বিবাদে জড়ালেন বিজেপির আসানসোলের দুই জেলা নেতা। দলের জেলা যুব মোর্চার নেতা পবন সিংহের অভিযোগ, তোলা না দেওয়ায় তাঁকে মারধর ও তাঁর বাড়ি ভাঙচুর করিয়েছেন জেলা বিজেপির সহ-সভাপতি অভিজিৎ আচার্য। অভিজিতের পাল্টা অভিযোগ, তাঁর উপরে আগ্নেয়াস্ত্র নিয়ে হামলা চালিয়েছেন ওই যুব নেতা। দলের দুই নেতার এমন কোন্দল সামাল দিতে মাঠে নেমেছেন বিজেপির জেলা নেতৃত্ব।
ঘটনার সূত্রপাত ২৯ জানুয়ারি। সে রাতে সাঁকতোড়িয়া পুলিশ ফাঁড়িতে বিজেপির জেলা সহ-সভাপতি অভিজিৎ অভিযোগ করেন, সাঁকতোড়িয়ার বাসিন্দা, বিজেপি যুব মোর্চার জেলা সদস্য পবন আগ্নেয়াস্ত্র নিয়ে তাঁর কার্যালয়ে গিয়ে হামলা চালিয়েছেন। পুলিশ পবনকে গ্রেফতার করে। তার এক দিন পরে পবনের স্ত্রী সুনীতা দেবী সাঁকতোড়িয়া ফাঁড়িতে অভিযোগ করেন, এলাকায় তাঁর একটি নির্মীয়মাণ বাড়ি রাতের অন্ধকারে অভিজিৎ আচার্যের আশ্রিত দুষ্কৃতীরা যন্ত্র দিয়ে ভেঙে দিয়েছে। পুলিশ তদন্তে নেমে যন্ত্র বাজেয়াপ্ত করে ও চালককে গ্রেফতার করে। অভিজিৎ হাই কোর্ট থেকে আগাম জামিন নেন।
সোমবার থেকে ফের অভিজিতের বিরুদ্ধে সরব হয়েছেন পবন। সে দিন সকাল থেকে তিনি স্ত্রী সুনীতাকে নিয়ে ভাঙা বাড়িতে অবস্থান-অনশনে বসেছেন। প্রায় ৩৬ ঘণ্টা অবস্থান চালানোর পরে পবনের বক্তব্য, ‘‘থানায় অভিযোগ করায় আমাদের প্রাণে মারার হুমকি দিচ্ছেন অভিজিৎ। আমাদের দাবি, তাঁকে অবিলম্বে গ্রেফতার করতে হবে।’’ পবনের দাবি, দলের নেতাদেরও পুরো বিষয়টি জানিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থার আর্জি জানিয়েছেন। অভিজিতের পাল্টা দাবি, ‘‘এলাকায় পবনের প্রচুর পাওনাদার রয়েছে। বহু অপকর্মের সঙ্গে জড়িত। সেই সবের হাত থেকে বাঁচতে এই নাটক করছে।’’
দলের দুই জেলা নেতার প্রকাশ্য বিবাদ কটাক্ষ করছেন তৃণমূল নেতারা। তাঁদের দাবি, বখরা নিয়ে কোন্দলে এমন ঘটনা। তৃণমূলের জেলা সভাপতি নরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তীর বক্তব্য, ‘‘এটা ওদের অন্তর্কলহ। ভোটের আগে আরও বাড়বে। এমন একটি দল যাতে জিততে না পারে, সেই আবেদন করছি।’’
লোকসভা ভোটের মুখে দুই নেতার বিবাদে অস্বস্তিতে বিজেপি। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক জেলা নেতার কথায়, ‘‘মাস তিনেক আগের এই ঘটনার আগেই নিষ্পত্তি হওয়া উচিত ছিল। ভোটের মুখে এমন অস্বস্তির জন্য জেলা নেতৃত্বই দায়ী।’’ যদিও বিজেপির জেলা সভাপতি বাপ্পাদিত্য চট্টোপাধ্যায়ের বক্তব্য, ‘‘বিরোধীরা বিষয়টিতে রং চড়ানোর চেষ্টা করছেন। আমরা দু’পক্ষের সঙ্গে কথা বলে নিষ্পত্তির ব্যবস্থা করছি।’’ তিনি জানান, মাস তিনেক আগে এই ঘটনার কথা জানার পরে দলের দশ সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করে পূর্ণাঙ্গ তদন্ত করা হয়েছে। রিপোর্ট রাজ্য নেতৃত্বের কাছে পাঠিয়ে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপের আবেদন করা হয়েছে। তবে আর কোনও অগ্রগতি হয়নি, জানান তিনি।