—ফাইল চিত্র।
জয়ের ব্যবধান বেড়েছে। কিন্তু পুরসভার ওয়ার্ডভিত্তিক ফলাফলে কিছুটা হলেও শাসকদলের চিন্তা বাড়িয়েছে বিরোধীরা।
২০১৯-এর লোকসভা নির্বাচনের নিরিখে দমদম লোকসভা কেন্দ্রের তৃণমূল প্রার্থী সৌগত রায়ের জয়ের ব্যবধান বেড়ে এ বার হয়েছে সাড়ে ১৭ হাজারের বেশি। বিজেপির প্রাপ্ত ভোট কমেছে ১ হাজার ১৪১টি। আবার, পাঁচ বছর আগে সিপিএম ও কংগ্রেসের (যদিও আলাদা প্রার্থী ছিল) প্রাপ্ত ভোটের থেকে এ বার বাম-কংগ্রেস জোটের ভোট বেড়েছে ৪৪ হাজারের কিছু বেশি। তবে, রাজনৈতিক মহলের মতে, জোড়া ফুলের জয়ের ব্যবধান গত বারের চেয়ে অনেকটা বাড়লেও তাদের দখলে থাকা পুরসভাগুলির অনেক ওয়ার্ডেই পরাজয় হয়েছে। যার নেপথ্যে স্থানীয় ‘চোরকাঁটা’ রয়েছে বলেই মত রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞ থেকে শাসকদলের একাংশেরও। সিপিএমের ভোট বৃদ্ধিকেও একটি কারণ বলে মনে করছেন তাঁরা।
দমদম লোকসভা কেন্দ্রের তৃণমূলের এক শীর্ষ নেতার কথায়, ‘‘সব পুরসভার পূর্ণাঙ্গ রিপোর্ট এখনও তৈরি হয়নি। তবে প্রাথমিক বিশ্লেষণে অন্তত সাত-আটটি পুরসভার বেশ কয়েকটি ওয়ার্ডে ফল খারাপ হয়েছে বলে জানা যাচ্ছে।’’ যেমন, দমদম, উত্তর দমদম, দক্ষিণ দমদম, বরাহনগর, কামারহাটি, পানিহাটি ও খড়দহ পুরসভা মিলিয়ে ৮১ থেকে ৯০টি ওয়ার্ডে হার হয়েছে তৃণমূলের। যার মধ্যে বেশির ভাগ ওয়ার্ডই শাসকদলের দখলে রয়েছে। এমনকি, সেখানে পুরপ্রধান, চেয়ারম্যান পারিষদ রয়েছেন। স্বাভাবিক ভাবেই প্রশ্ন উঠছে, ২০২২-এর পুর নির্বাচনে ওয়ার্ডগুলিতে জয় এলেও দু’বছরের মধ্যে পিছিয়ে যাওয়ার কারণ কী? শাসকদলের নেতারা ‘পর্যালোচনা করা হবে’ বলে আপাতত দায় সারছেন। কিন্তু বিরোধীদের অভিযোগ, ‘‘বোঝাই যাচ্ছে, পুর ভোটে ওই সব ওয়ার্ডে কী ভাবে ভোট লুট হয়েছে।’’
জানা যাচ্ছে, দমদম, উত্তর দমদম, দক্ষিণ দমদম এবং রাজারহাট-গোপালপুর মিলিয়ে মোট ৯৭টি ওয়ার্ডের মধ্যে ৪১টিতে বিরোধীরা এগিয়ে। যেমন, উত্তর দমদম পুরসভার ৩৪টি ওয়ার্ডের মধ্যে ১২টি, দমদম পুরসভার ২২টি ওয়ার্ডের মধ্যে ১১টি, দক্ষিণ দমদম পুরসভার ১৭টি ওয়ার্ডের মধ্যে চারটি, রাজারহাট-গোপালপুর অঞ্চলের ২৪টি ওয়ার্ডের মধ্যে ১৪টিতে এগিয়ে বিরোধীরা। আবার, বি টি রোড বরাবর খড়দহ পুরসভার ২২টি ওয়ার্ডের মধ্যে ১৩টি, পানিহাটিতে ৩৫টির মধ্যে ১৯টি, কামারহাটিতে ৩৫টির মধ্যে ১৬টি ওয়ার্ডে এগিয়ে বিরোধীরা। খড়দহ বিধানসভার অধীনে চারটি পঞ্চায়েতের মধ্যে দু’টিতে মাত্র জিতেছে তৃণমূল। বরাহনগরে ক’টি ওয়ার্ডে বিরোধীরা এগিয়ে, তা বলতে না পারলেও অনুমান করা হচ্ছে সংখ্যাটি পাঁচের মতো।
যে সমস্ত ওয়ার্ডে তৃণমূলের হার হয়েছে, সেখানে ফলাফল ঘোষণার পরে জল্পনা ছড়িয়েছে, দলের গোষ্ঠী-কলহের জেরে ভোটের একাংশ পেয়েছেন বিরোধীরা। ভোটের আগেই জল্পনা ছড়িয়েছিল যে, একাধিক ওয়ার্ডে শাসকদলের কিছু ভোট বিরোধীদের দিকে যেতে পারে। আবার স্থানীয় সমস্যা, পুরপ্রতিনিধি এবং দলের কর্মীদের ভূমিকা, অবাঙালি ভোট-সহ নানা বিষয় ঘিরে বিরোধীদের ভোট বৃদ্ধির আগাম আশঙ্কা ছিল।
যদিও প্রতিটি পুরসভারই শীর্ষ নেতৃত্ব জল্পনাকে আমল দিতে নারাজ। তাঁদের একাংশের কথায়, ‘‘মানুষ ভোট দিয়েছেন। কোথাও কোথাও দলের পক্ষে ভোট তুলনায় কম পড়েছে। কারণ খতিয়ে দেখা হবে। প্রয়োজনে ত্রুটি সংশোধন করা হবে।’’