— প্রতিনিধিত্বমূলক ছবি।
কয়েক দিন আগের ঘটনা। পুর পরিষেবা সংক্রান্ত একটি সমস্যার সমাধান করে এক অবাঙালি মহিলা ও তাঁর মেয়েকে বিধাননগরের এক পুরপ্রতিনিধি জিজ্ঞাসা করেছিলেন, ‘‘এ বার আমাদের ভোট দেবেন তো?’’ মহিলা হেসে পাল্টা উত্তর দিয়েছিলেন, ‘‘ইয়ে তো মোদীজি কা ভোট হ্যায়।’’ সেই উত্তর শুনে মুচকি হেসেছিলেন সল্টলেকের ওই পুরপ্রতিনিধিও।
২০১৪ সাল থেকেই লোকসভা ভোটে বারাসত কেন্দ্রের অন্তর্গত বিধাননগর বিধানসভায় হেরে আসছে তৃণমূল। আশ্চর্যজনক ভাবে আবার ২০১১ সাল থেকে বিধানসভা ভোটে বিধাননগর কেন্দ্রে জিতে এসেছে তারা। কিন্তু পরিবর্তনের হাওয়ায় অবাঙালি ভোটারদের মন কোনও নির্বাচনেই সে ভাবে ছুঁতে পারেনি রাজ্যের শাসকদল। এ বারের লোকসভা নির্বাচনের প্রাক্কালে তাই অবাঙালি ভোটারদের মন জয়ের পাশাপাশি বিধাননগর তথা
সল্টলেকে বাঙালি, বিশেষত নিম্নবিত্ত বাঙালি ভোটারদের মন জয়ের দিকেই বেশি নজর দিচ্ছে তারা।
বিগত দু’টি লোকসভা নির্বাচনে বিধাননগরে শাসকদলের হারের ব্যবধান বেড়েছে। ২০১৪ সালের লোকসভা ভোটে বিধাননগরে তৃণমূল হেরেছিল সাড়ে পাঁচ হাজারের কাছাকাছি ভোটে। আবার, ২০১৯ সালে হেরেছিল সাড়ে আঠারো হাজার ভোটে। যার পিছনে অবাঙালি ভোট অনেকটাই দায়ী বলে মনে করেন বিধাননগরের শাসকদলের নেতৃত্ব।
সেখানকার শহর তৃণমূলের সভানেত্রী তুলসী সিংহরায়ের কথায়, ‘‘বাঙালি-অবাঙালি বলে
নয়, সব ভোটারদের কাছেই আমরা পৌঁছচ্ছি। তবে হাতে সময় থাকায় চেষ্টা করছি অবাঙালি পরিবারের বাড়ি বাড়ি পৌঁছতে। আমরা যে তাঁদেরই লোক, সেটা আমরা বোঝাতে চাইছি।’’
দমদম পার্ক, বাঙুর, লেক টাউন, সল্টলেক, দত্তাবাদ, সুকান্তনগর, কুলিপাড়ার মতো বিস্তীর্ণ
এলাকা নিয়ে বিধাননগর বিধানসভা কেন্দ্র। নিম্নবিত্ত অধ্যুষিত সংযুক্ত এলাকাগুলি বাদ দিলে সল্টলেক, লেক টাউন, বাঙুর, দমদম পার্কের মতো এলাকায় অবাঙালি ভোটের হার যথেষ্টই। কেন্দ্রের হিসাবে ২৬ থেকে ২৭ শতাংশ অবাঙালি ভোটার রয়েছেন। সল্টলেকের কোনও কোনও ব্লকে বসবাস করা আবাসিকদের পঞ্চাশ শতাংশ অবাঙালি। তার পরেও শাসকদল মানছে, মুখে লোকসভা কিংবা বিধানসভা ভোটের বৈশিষ্ট্য আলাদা করে বলা সত্ত্বেও ২০২১ সালের বিধানসভা নির্বাচনে অবাঙালি ভোট স্বস্তি দেয়নি তৃণমূলকে। আট হাজার ভোটের ব্যবধানে সুজিত বসু বিধানসভা ভোটে জিতলেও বাঙুর, লেক টাউন, সল্টলেকের মতো জায়গায় অবাঙালি ভোট ডুবিয়েছে শাসকদলকে।
বিধাননগরের এক পুরপ্রতিনিধির কথায়, ‘‘বাঙুরে একটি আবাসনে ২৩০০ অবাঙালি ভোটার রয়েছেন। সেখানকার একটিও ভোট তৃণমূলের পক্ষে আসে না বলেই আমাদের অনুমান। দক্ষিণদাঁড়ি, দত্তাবাদ, সুকান্তনগরের মতো নিম্নবিত্ত বাঙালি এলাকা থেকে শেষরক্ষা হয়েছিল।’’ তৃণমূল সূত্রের খবর, এই সব ভেবেচিন্তেই এ বার লোকসভা ভোটে বাঙালি ভোটের উপরেও বাড়তি গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে। তবে অবাঙালি ভোটারদেরও বোঝানোর চেষ্টা চলছে যে, বিজেপিকে ভোট দিলে ভোট নষ্ট হবে।
বিধাননগরের বিধায়ক সুজিত বসুর কথায়, ‘‘আমরা অবাঙালিদের বোঝানোর চেষ্টা করছি, তাঁরা আমাদেরই লোক। কারণ, তাঁরা পশ্চিমবঙ্গের বাসিন্দা। কাকলি ঘোষদস্তিদার বাংলার উন্নয়নের জন্য কাজ করছেন। বাংলার উন্নতি হলে তো তাঁদেরও উন্নতি হবে। ভোট গণতান্ত্রিক অধিকার। কে কাকে ভোট দেবেন, সেটা নিজস্ব ব্যাপার।’’
অবশ্য কাকলি ঘোষদস্তিদারের কথায়, ‘‘সবাই আমার ভোটার। তবে এটা ঠিক, এক সময়ে সল্টলেকের রাস্তা ও জল নিয়ে কিছু সমস্যা ছিল অবাঙালি পরিবারগুলির। সে সব আমাদের সরকার মিটিয়ে দিয়েছে। আমি নিজেও ওঁদের সঙ্গে কথা বলেছি। আমার মনে হয়, ওঁরা আমাদের কাজে খুশি।’’
বাম আমলে দেখা গিয়েছিল, বিধাননগরের অবাঙালি সমাজ জ্যোতি বসুকে নির্বাচনের আগে সংবর্ধনা দিত। তৃণমূল সরকার ক্ষমতায় আসার পরে তাদের নেতৃত্বকেও সম্মান জানিয়ে সভা করেছেন অবাঙালিরা। কিন্তু, ভোটে তার ছাপ থাকেনি।
কেন? অবাঙালি সমাজের এক প্রতিনিধির কথায়, ‘‘সবাই যে শাসকবিরোধী ভোট
দেন, তেমনটা নয়। কিন্তু সামগ্রিক সংখ্যাটা কেন কম, সেটা আমরাও বুঝি না।’’