একনাথ শিন্দে। — ফাইল চিত্র।
লোকসভা ভোটের আগে আসন সমঝোতা নিয়ে মহারাষ্ট্রে বিজেপির সঙ্গে জোট শরিকদের আসন-জট কাটছে না। উল্টে পরিস্থিতি এমন দাঁড়িয়েছে যে, বিজেপি-সঙ্গী শিবসেনার শিন্দে গোষ্ঠীর একটা অংশ বিদ্রোহ করতে পারে বলে আশঙ্কা তৈরি হয়েছে জোটের অন্দরে। বিষয়টির দিকে সতর্ক নজর রাখার পাশাপাশি কংগ্রেস-শিবসেনা (উদ্ধব ঠাকরে গোষ্ঠী) এবং এনসিপি (শরদ পওয়ার গোষ্ঠী) বিজেপি ও তার সঙ্গীদের তীব্র আক্রমণ শানিয়েছে।
সূত্রের খবর, শিন্দের গোষ্ঠীর চার জন সাংসদকে বদলানোর জন্য চাপ দিচ্ছে বিজেপি। হিঙ্গোলি, যবতমল-ওয়াসিম, শিরডি এবং কোলহাপুর— এই চারটি কেন্দ্র নিয়েই প্রাথমিক ভাবে বিবাদ তৈরি হয়েছে। ওই চার কেন্দ্রে বর্তমান সাংসদদের জিতে ফেরার সম্ভাবনা কম বলেই মনে করছে বিজেপি। সে কারণে ওই চারটি আসনই শিন্দে শিবিরের কাছ থেকে ছিনিয়ে নিয়ে নিজেরাই সেখানে লড়তে চায় বিজেপি। বিষয়টি প্রকাশ্যে আসার পরেই মুখ্যমন্ত্রী একনাথ শিন্দের কাছে ক্ষোভ জানিয়েছেন চার সাংসদ। রাজ্যের মন্ত্রী তথা শিন্দের ঘনিষ্ঠ বলে পরিচিত শম্ভুরাজ দেশাই অবশ্য দলে কোনও বিরোধের কথা অস্বীকার করে জানিয়েছেন, সব কিছুই ঠিক আছে। দলের কেন্দ্রগুলিতে প্রার্থী বাছাইয়ের ভার পুরোপুরি শিন্দের হাতেই দেওয়া হয়েছে বলে দাবি তাঁর।
কিন্তু সেই দাবির সত্যতা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে বিজেপি নেতাদের একাংশের আচরণে। বিজেপির রামদাস পাটিল সুমতনকর সম্প্রতি তাঁর সমর্থকদের নিয়ে দেখা করেন উপমুখ্যমন্ত্রী তথা বিজেপি নেতা দেবেন্দ্র ফডণবীসের সঙ্গে। শিন্দে গোষ্ঠীর হেমন্ত শ্রীরাম পাটিলকে সরিয়ে তিনি ওই কেন্দ্রে প্রার্থী হতে চান। যবতমল-ওয়াসিম কেন্দ্রের সাংসদ ভাবনা গাউলিকে সরিয়ে সেখানে মন্ত্রী সঞ্জয় রাঠৌড়কে প্রার্থী করার কথা হচ্ছে বিজেপির অন্দরে। একই ভাবে শিরডি আসনটিতে রাজ ঠাকরের ঘনিষ্ঠ বালা নন্দগাঁওকরকে দেওয়ার দাবি তুলেছে জোটের নতুন শরিক এমএনএস। সূত্রের খবর, ওই কেন্দ্রের বর্তমান সাংসদ তথা শিন্দে গোষ্ঠীর নেতা সদাশিব লোখান্ডে বিষয়টি জানতে পেরে দলের শীর্ষ নেতাদের কাছে দরবার করেছেন।
জট তৈরি হয়েছে কোলহাপুর কেন্দ্রটি নিয়েও। সেখানে কংগ্রেস-উদ্ধব-শরদ গোষ্ঠীর মহাজোটের প্রার্থী করা হয়েছে ভোঁসলে রাজপরিবারের সাহু ছত্রপতিকে। পাল্টা প্রার্থী হিসেবে রাজ পরিবারের আর এক সদস্য সমরজিৎ ঘাটগেকে প্রার্থী করেছে বিজেপি। ফলে বাদ পড়তে চলেছেন শিন্দে গোষ্ঠীর বর্তমান সাংসদ সঞ্জয় মান্ডালিক। তিনিও বিজেপির বিরুদ্ধে ক্ষোভ জানিয়ে শিন্দের কাছে নালিশ জানিয়েছেন। নতুন করে জট তৈরি হয়েছে সম্ভাজিনগর কেন্দ্রটি নিয়েও। শিন্দে গোষ্ঠীর সন্দীপন ভামরের বদলে ওই কেন্দ্রে মরাঠা সংরক্ষণ আন্দোলনের এক নেতাকে প্রার্থী করতে চায় বিজেপি।
এমনিতেই শিবসেনার উদ্ধব ঠাকরে ও এনসিপি-র শরদ পওয়ারকে ছেড়ে একনাথ শিন্দে এবং অজিত পওয়ার যে ভাবে দল ভেঙে বিজেপির সঙ্গে হাত মিলিয়েছেন, তাতে অনেকেই ক্ষুব্ধ। এ বারে বিজেপি পরিস্থিতির সুযোগ নিয়ে যে ভাবে দুই দলেরই নেতাদের ইচ্ছে মতো সরিয়ে সেই সব আসনে নিজেদের প্রার্থীদের দাঁড় করাতে চাইছে, তাতে ভোটের আগেই দুই শিবিরে বিদ্রোহের ছায়া দেখতে পাচ্ছেন অনেকে। পরিস্থিতি দেখে কংগ্রেস জানিয়েছে, ওই সব কেন্দ্রে তারা প্রার্থী দাঁড় করাবে। সে ক্ষেত্রে বিদ্রোহীরা কংগ্রেসের পাশে দাঁড়াতে পারেন বলে মনে করছেন অনেকে।