—প্রতীকী চিত্র।
স্থানীয়দের বাদ দিয়ে অর্থের বিনিময়ে বহিরাগতদের নিয়োগ করা হচ্ছে। এই অভিযোগে দুর্গাপুর শিল্পাঞ্চল জুড়ে বিদ্ধ রাজ্যের শাসক দল তৃণমূল। লোকসভা ভোটের প্রচারে তা তুলে ধরে ফায়দা তোলার চেষ্টায় নেমেছে বিরোধীরা। তবে এই অভিযোগে আমল দেয়নি তৃণমূল।
স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, দুর্গাপুর শিল্পাঞ্চল জুড়ে বিভিন্ন কারখানায় তৃণমূল নেতৃত্বের বিরুদ্ধে অর্থের বিনিময়ে বহিরাগতদের নিয়োগের অভিযোগ উঠেছে বার বার। সে দুর্গাপুরের রাষ্ট্রায়ত্ত কারখানা দুর্গাপুর স্টিল প্লান্ট (ডিএসপি) হোক, সগড়ভাঙার গ্রাফাইটের ইলেকট্রোড ও কার্বনের নানা সামগ্রী উৎপাদনকারী বেসরকারি কারখানা বা কাঁকসার কোনও শিল্পতালুকের বেসরকারি কারখানা হোক। অভিযোগ সর্বত্র। এমন অভিযোগকে ঘিরে শাসক দলেরই ‘গোষ্ঠীদ্বন্দ্বে’ বার বার অশান্তির ঘটনাও ঘটেছে।
ডিএসপিতে ঠিকা শ্রমিক নিয়োগ ও গেট পাস নিয়ে দুর্নীতির অভিযোগ ছিল দীর্ঘদিনের। অর্থের বিনিময়ে শাসক দলের একাংশের মদতে বহিরাগতদের কাজে নেওয়া হচ্ছে। এমন অভিযোগ আইএনটিটিইউসির একাংশই সংগঠনের রাজ্য সভাপতি ঋতব্রত বন্দ্যোপাধ্যায়কে জানিয়েছেন বলে তৃণমূল সূত্রের খবর। ২০২৩-এর ১০ এপ্রিল তেমন সাত জনকে সংগঠন থেকে বহিষ্কার করেন ঋতব্রত। পাল্টা বহিষ্কৃত নেতারা ও তাঁদের অনুগামীরা ডিএসপিতে মিছিল করেন। এর অশান্তির ঘটনাও ঘটে কারখানার ভিতরে। সগড়ভাঙার বেসরকারি কারখানায় ২০২০-এ দলেরই একাংশের বিরুদ্ধে নিয়োগে দুর্নীতির অভিযোগ তুলে এবং স্থানীয়দের নিয়োগের দাবিতে সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে আইএনটিটিইউসি’র একটি গোষ্ঠী। পুলিশকে কার্যত লাঠি চালিয়ে পরিস্থিতি স্বাভাবিক করতে হয়। এ ছাড়া, কাঁকসার বিভিন্ন শিল্পতালুকের কারখানাগুলিতেও মাঝেমধ্যে স্থানীয়দের নিয়োগের দাবিতে বিক্ষোভ হয়। অভিযোগের তির থাকে তৃণমূলের একাংশের বিরুদ্ধে। সপ্তাহ খানেক আগেও একটি কারখানায় এমন অভিযোগ উঠেছে।
শিল্পক্ষেত্রে এই ‘গোষ্ঠীদ্বন্দ্বের’ প্রভাব ভোটবাক্সে পড়তে পারে বলে দলেরই একাংশের আশঙ্কা। যদিও, আইএনটিটিইউসির জেলা সভাপতি অভিজিৎ ঘটক বলেন, “নিয়োগের ক্ষেত্রে স্থানীয়দের অগ্রাধিকার দিতে হবে। এটা সব কারখানা কর্তৃপক্ষকে জানিয়ে দেওয়া হয়েছে।”
এই পরিস্থিতির সুযোগ নিতে আসরে নেমেছে বিরোধীরা। সিপিএমের তরফে ইতিমধ্যেই এ বিষয়ে শ্রম কমিশনারের দফতরে স্মারকলিপি দেওয়া হয়েছে। কারখানার গেটে সভা করে নিয়োগ-দুর্নীতি নিয়ে সরব হচ্ছেন দলের নেতারা। দলের জেলা সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য পঙ্কজ রায় সরকার বলেন, “গত কয়েক বছরে অধিকাংশ কারখানা বন্ধ হয়ে গিয়েছে। যেগুলি এখনও কোনও রকমে চালু রয়েছে, সেখানে স্থানীয়দের বঞ্চিত করে অর্থের বিনিময়ে বহিরাগতদের কাজে নিয়োগ করা হচ্ছে।” বিজেপির তরফে স্থানীয়দের নিয়োগের দাবিতে মিছিল করা হয় মাঝেমধ্যেই। দলের বর্ধমান সদর সাংগঠনিক জেলার সহ-সভাপতি চন্দ্রশেখর বন্দ্যোপাধ্যায়ের মন্তব্য, “তৃণমূলের নেতারা কাটমানি ছাড়া কিছুই দেখতে পান না। তাই অর্থের বিনিময়ে বাইরের লোকেদের এনে কাজ দেওয়া হচ্ছে।” বিজেপি নেতৃত্বের দাবি, তাঁদের আন্দোলনের চাপে পড়ে সম্প্রতি একটি কারখানায় কয়েকজন স্থানীয় যুবককে কাজ দেওয়া হয়েছে। অভিযোগ, তাঁরা সবাই শাসক দলের অনুগামী হিসেবে পরিচিত।
অভিযোগ অস্বীকার করেছে তৃণমূল। দলের পশ্চিম বর্ধমান জেলা সহ-সভাপতি উত্তম মুখোপাধ্যায় বলেন, “এই সব অভিযোগের ভিত্তি নেই। স্থানীয়দের নিয়োগকেই বরাবর অগ্রাধিকার দেওয়া হয়ে থাকে। নিয়োগের সময় রাজনৈতিক পরিচয় কী, তা দেখা হয় না।”