মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ছবি: সংগৃহীত।
মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় জানালেন, বিজেপিকে সরানো হবেই। জয় আসবেই। তিনি উপস্থিত জনতাকে ধন্যবাদও দেন। ‘জয় বাংলা’, ‘বিজেপি হঠাও’ স্লোগান তুলে শেষ করেন জনসভা। তার পরেই বলেন, ‘‘এই বোমা-টোমা বলছে, এঁরা আমার, অভিষেকের জীবন পর্যন্ত নিতে পারে। পুলওয়ামায় যেমন করেছিল। এই চক্রান্ত ভাঙবই।’’
মমতা ‘খেলা হবে’ স্লোগান তুললেন মঞ্চে দাঁড়িয়ে। বললেন, ‘‘কেন্দ্রীয় বাহিনী এনে পথ আটকালে খবর দেবেন পার্টি অফিসে। আমাদের লোক এসে আপনাদের পৌঁছে দেবে। এই জিনিস কোচবিহারেও হয়েছিল।’’
মমতা জানালেন, পার্থ সিংহ রায়ের মা রবিবার মঞ্চে রয়েছেন। তাঁকে জড়িয়ে ধরেন মুখ্যমন্ত্রী। কৃতজ্ঞতা জানান। ওই ঘটনার পর থেকে তিনি বার বার বালুরঘাটে এসেছেন। জানালেন মমতা।
মমতা বলেন, ‘‘অনেক কবরস্থান, শ্মশান তৈরি করিয়েছি। সকলকে একসঙ্গে নিয়ে চলতে চাই। যখন যুব রাজনীতি করতাম, সব সময় এখানে আসতাম। বন্যা হলে কুমারগঞ্জে আসতাম। পার্থ সিংহ রায় যখন কুমারগঞ্জে গুলিতে মারা যায়, শতাধিক ছেলেকে আটক করা হয়। বিপ্লবদাকে বলি এসে, ওঁদের জন্য লড়াই করতে হবে। রাত ১১টায় শঙ্করদার বাড়ি যাই। দরজা বন্ধ। বিপ্লবদা পাঁচিল টপকালেন। আমরাও। শঙ্করদা দাঁড়ালেন। আমি সুভাষকে বললাম, একটা গাউন দেবে। আমি সেটা পরে লড়াই করি কোর্টে। সকলকে মুক্ত করি। আজও সেই গাউন রেখে দিয়েছি।’’
মমতা বলেন, ‘‘মানুষের আর কোনও ক্ষমতা থাকবে না, স্বাধীনতা থাকবে না এরা ক্ষমতায় এলে। এই নির্বাচনকে গুরুত্ব দিন। জলপাইগুড়িতে সিপিএম বাড়ি বাড়ি গিয়ে বলেছে, ভোট বিজেপিকে দাও। ফরওয়ার্ড ব্লককে নয়। কংগ্রেস ভোট ভাগ করার জন্য দেখে দেখে দাঁড়িয়েছে। বিজেপির একটা আসন কমলে দিল্লি থেকে বিজেপির চলে যাওয়া।’’
মমতা বলেন, ‘‘বিজেপি দেশ বিক্রি করে দিয়েছে। সংবিধান ভেঙে দিয়েছে। আমাদের লোকেরা বুক চিতিয়ে সংসদে লড়াই করে। আপনাদের সাংসদ ঠান্ডা ঘরে ঘুমোয়। কোনও কথা বলে না। বলে, বাংলায় ১০০ দিনের কাজের টাকা দিয়ো না। যে লোক বলে বাংলাকে বঞ্চিত করো, টাকা দিয়ো না, তাঁকে আপনারা ভোট দেবেন? এঁরা বার বার প্রধানমন্ত্রীর কাছে গিয়ে বলেছে বাংলাকে টাকা দেবেন না।’’
মমতা বলেন, ‘‘ভুলেও এনআরসি-র আবেদন করবেন না। করলেই বিদেশি করে দেবে। ’’ অভিন্ন দেওয়ানি বিধি নিয়েও কটাক্ষ করলেন মমতা। বলেন, ‘‘সকলকে আমিষ খেতে হবে এমন নয়। দুধ, মাখন, ছানা, সয়াবিন, বার্লি যা-ই খান, কেউ বারণ করেনি। ভেজে খরচ বেশি। ননভেজে মায়েরা মাছের ঝোল-ভাত করলেই কাজ শেষ। তাই ভারতের ৮০ শতাংশ মানুষ আমিষ খায়। যাঁরা আমিষ খান, খেতে দিন। তোমরা কে হস্তক্ষেপ করার?’’
নাম না করে শুভেন্দুকে কটাক্ষ করলেন মমতা। তিনি বলেন, ‘‘জিজ্ঞেস করুন, হরিদাস গদ্দার, কী ছিলে, কী হয়েছ? আঙুল ফুলে কলাগাছ। কেন বিজেপিতে গেলে? টাকা বাঁচাতে, পরিবার বাঁচাতে। বিজেপি কাল থাকবে না, তোমাদের মতো গদ্দারদের জায়গা দেব না। ’’
মমতা বলেন, ‘‘সব থেকে বড় ডাকাত বিজেপি। বলে আমরা আবাস করতে দিইনি। ৪২ লক্ষ আবাস করেছি। সত্যি হলে কান মুলে ক্ষমা চাইবেন। সব পঞ্চায়েত আমাদের নয়। তা সত্ত্বেও সব দেখে ৪২ লক্ষ বাড়ি আগে করেছি আরও ১১ লক্ষ বাড়ি করব। কেন্দ্র এই টাকা একা দেয় না। মাছের তেলে মাছ ভাজে। বলে আমরা টাকা খেয়েছি। ৪২ লক্ষ বাড়ি ওরা একা করেছে!’’
মমতা বলেন, ‘‘টাকা বাঁচাতে তৃণমূলের সব খেয়েদেয়ে এখন বিজেপিতে গেছিস। কার বিরুদ্ধে বোমা? মনে রাখবে উপরের দিকে থুতু ফেললে থুতু নিজের দিকে আসে। বোমা ফাটালে জবাব হবে কালিপটকা দিয়ে।’’
মমতার কথায়, ‘‘ওরা বলে, আমি এনআরসি করতে না দেওয়ার কে? কোন হরিদাস পাল। আমি বলেছি করতে দেব না। অসমে করেছিল। সেখানে প্রতিবাদ করেছিল একমাত্র তৃণমূল।’’
মমতা বলেন, ‘‘দূরদর্শনের রং গেরুয়া হচ্ছে কী ভাবে? রেলস্টেশনের রং কী ভাবে গেরুয়া হচ্ছে? আমাদের গর্ব সেনাবাহিনীর বাড়ির রং গেরুয়া হচ্ছে। যাঁরা সাধু হচ্ছেন গেরুয়া পরে, তাঁদের অপমান নয়? কাশীতে পুলিশকেও গেরুয়া পরিয়েছেন। দেখবেন কবে বলবে, সকালে গেরুয়া শরবত খেতে হবে। কে কী পরবেন, রং পছন্দ করবেন, নিজের বিষয়। আপনার হয়ে কেউ ঠিক করবে না।’’
মমতা বলেন, ‘‘দূরদর্শন দেখেছেন? রং বদলে গেল। মন কি বাত, তিনি নিজেই বলেন। নিজেই শোনেন। কাউকে বলতে দেন না। আজ পর্যন্ত সাংবাদিক বৈঠক করতে দেখিনি ওঁকে। নিজেরাই সাজিয়ে-গুছিয়ে সমাজমাধ্যমে বসিয়ে দাও।’’
মমতা বলেন, ‘‘ওরা বলে বোমা ফাটাব। একটা কালিপটকা ফাটিয়ে দেখো। বোমা তোমাদের বিরুদ্ধে ফাটাব। কালো টাকা কোথায় গেল? গদ্দার জবাব দাও। সকলকে ১৫ লক্ষ টাকা দেবে বলেছিল। কেউ টাকা পেয়েছেন? কোভিডের ইনজেকশন দিল। তাতেও প্রধানমন্ত্রীর ছবি।’’
বিজেপিকে একের পর এক কটাক্ষ করেন মমতা। তাদের থেকে কাজের খতিয়ান দাবি করেন। মমতা বলেন, ‘‘একটা কাজ করেছ? কী করেছ? আবাস যোজনা, ১০০ দিনের কাজের টাকা বন্ধ করেছ। সারা দেশ বিক্রি করেছ। ইতিহাস, ভুগোল বিক্রি করেছ। সময় থাকলে বিস্তারিত বলতে পারতাম।’’
বালুরঘাটে কী কী কাজ হয়েছে, তা জানালেন মমতা। জানালেন, এটা বংলার নির্বাচন নয়। দিল্লির নির্বাচন। তাই জবাব ‘মোদীবাবু’কে দিতে হবে। মমতার কথায়, ‘‘জবাব চাই জবাব দাও। যখন পশ্চিমবঙ্গের নির্বাচন আসে, হাজার বার কৈফিয়ত দেব। জবাব দাও গদ্দারেরা।’’
মমতা বলেন, ‘‘সময় কম, রোদ, ধুলোর ঝড়, এই অবস্থায় আমারও গলা ভেঙে যাচ্ছে। আপনারা কী ভাবে কষ্ট করে দাঁড়িয়ে রয়েছেন! অনেক ধন্যবাদ।’’