মনোনয়ন জমা দেওয়ার পথে বাম প্রার্থীরা। — নিজস্ব চিত্র।
লোকসভা নির্বাচনের শেষ দফায় যে আসনগুলিতে ভোট রয়েছে, সেগুলির একগুচ্ছ প্রার্থী মনোনয়নপত্র জমা দিলেন শুক্রবার। কলকাতা, উত্তর ২৪ পরগনা, দক্ষিণ ২৪ পরগনার নানা কেন্দ্রের প্রার্থীরা এ দিন মনোনয়নপত্র জমা দিলেন। আর তাকে কেন্দ্র করে মিছিল, রোড-শো, রামমন্দিরের আদলে ট্যাবলো, পুজোপাট— সবই দেখা গেল। বিজেপির মনোনয়নে হাজির হলেন কেন্দ্রীয় রেলমন্ত্রী থেকে ত্রিপুরার মুখ্যমন্ত্রীও। এক কথায়, মনোনয়ন-পর্বকে কেন্দ্র করে কলকাতায় বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতা-কর্মীদের এ দিন কার্যত উৎসবের মেজাজ দেখা গিয়েছে।
তৃণমূল কংগ্রেসের ডায়মন্ড হারবার লোকসভা কেন্দ্রের প্রার্থী তথা দলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়, কলকাতা উত্তরের সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়, দমদমের সৌগত রায় এবং বরাহনগর বিধানসভা কেন্দ্রের উপনির্বাচনের প্রার্থী সায়ন্তিকা বন্দ্যোপাধ্যায়েরা এ দিন মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন। মনোনয়ন জমা দেওয়ার আগে সৌগত এবং সায়ন্তিকা দক্ষিণেশ্বরে পুজোও দিতে গিয়েছিলেন। ‘মানুষের হাওয়া’ মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের পক্ষে দাবি করে নির্বাচন শান্তিপূর্ণ হবে বলে আশাপ্রকাশ করেছেন সৌগত। পাশাপাশি, সুদীপকে তাঁর প্রতিপক্ষ বিজেপি প্রার্থী তাপস রায় সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হলে বলেন, “আমি জানি, আমার বিরুদ্ধে অনেক প্রতিপক্ষই দাঁড়িয়েছেন। কিন্তু আমি শুধু নিজের জয়ের বিষয়ে লক্ষ্য রাখি।”
সুদীপের এমন মন্তব্যের প্রেক্ষিতেই পাল্টা বিজেপি প্রার্থী তাপসের বক্তব্য, “উত্তর কলকাতার মানুষ, তাঁদের চাহিদার বিষয়ও উনি দেখতে পান না। এর জবাব ভোটে মানুষ দেবেন।” তাপসও এ দিন মনোনয়ন জমা দিয়েছেন। তার আগে সিমলায় স্বামী বিবেকানন্দের বাসভবনে গিয়ে তাঁর মূর্তিতে শ্রদ্ধা জানান তাপস। তার পরে শুরু হয় রোড-শো। সেখানে ছিলেন ত্রিপুরার মুখ্যমন্ত্রী মানিক সাহা। তাঁর দাবি, “যা দৃশ্য দেখলাম, কাতারে কাতারে মানুষ বিজেপিকে সমর্থন করছেন। শুধু উত্তর কলকাতা নয়, আমরা অনেক আসনে জিতব।” তাপসের মনোনয়নপত্রের চার জন প্রস্তাবকের অন্যতম ছিলেন পূর্ণিমা কোঠারি। অযোধ্যায় করসেবা আন্দোলনের সময়ে প্রাণ হারানো রামস্বরূপ কোঠারির পরিবারের প্রতিনিধি এই পূর্ণিমা।
মনোনয়ন জমা দিচ্ছেন বিজেপি প্রার্থী তাপস রায়। সঙ্গে ত্রিপুরার মুখ্যমন্ত্রী মানিক সাহা। — নিজস্ব চিত্র।
রামমন্দিরের আদলে ট্যাবলো সাজিয়ে মনোননয়ন দিতে গিয়েছিলেন কলকাতা দক্ষিণের বিজেপি প্রার্থী দেবশ্রী চৌধুরীও। ভবানীপুর থেকে হাজরা মোড় পর্যন্ত রোড-শো করেছেন তিনি। দেবশ্রীর দাবি, “এই জমায়েতই বলে দিচ্ছে বাংলা আর তৃণমূলের শাসন মানতে চাইছে না। পরিবর্তন আসন্ন।” মনোনয়ন জমা দেওয়ার আগে কেন্দ্রীয় রেলমন্ত্রী অশ্বিনী বৈষ্ণবকে সঙ্গে নিয়ে গড়িয়া মোড় থেকে টালিগঞ্জ পর্যন্ত রোড-শো করেছেন যাদবপুরের বিজেপি প্রার্থী অনির্বাণ গঙ্গোপাধ্যায়ও।
মিছিলের বহরে পিছিয়ে ছিল না বামেরাও। মনোনয়ন জমা দিয়েছেন উত্তর ২৪ পরগনার তিন বাম প্রার্থী, দমদম ও বসিরহাটের সিপিএম প্রার্থী যথাক্রমে সুজন চক্রবর্তী, নিরাপদ সর্দার এবং বারাসতের ফরওয়ার্ড ব্লক প্রার্থী সঞ্জীব চট্টোপাধ্যায়। বারাসত কলেজের সামনে থেকে বড় মিছিল করে উত্তর ২৪ পরগনার জেলাশাসকের কাছে এ দিন মনোনয়ন জমা দিয়েছেন তাঁরা। ইতিমধ্যেই বরাহনগর উপনির্বাচনের সিপিএম প্রার্থী তন্ময় ভট্টাচার্যও মনোনয়ন জমা দিয়েছেন। মনোনয়ন জমা দেওয়ার পরে বিজেপি, তৃণমূল ও রাজ্যপালকে বিঁধে সুজনের মন্তব্য, ‘‘রাজদরবারে জোকার গিয়ে বসলে তিনি রাজা হয়ে যান না, বরং রাজদরবারই সার্কাসের চেহারা নেয়! সন্দেশখালির ভিডিয়ো, তার পাল্টা ‘সাজানো’র অভিযোগ এই নিয়ে তর্ক চলছে। তৃণমূল আবার দাবি করছে, ৫০০ বা হাজার টাকা ভাতা দেওয়া হয়েছে অতএব সব ভোট তাদের দিতে হবে! গণতন্ত্র এবং মানুষের রুটি-রুজির লড়াই পিছনে চলে যাচ্ছে।’’