দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরীওয়াল। —ফাইল ছবি।
ভোট মরসুমে দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরীওয়ালের উপর হামলার আশঙ্কা করছে তাঁর নিজের দল আম আদমি পার্টি (আপ) এবং বিজেপি উভয়েই।
আপ নেতৃত্ব যখন ওই হামলার পিছনে প্রধানমন্ত্রীর দফতরের হাত থাকতে পারে বলে সরব, তখন বিজেপি শিবিরের অভিযোগ, ইভিএমে সহানুভূতি পেতে কেজরীওয়ালের দলের লোকেরাই তাঁর উপরে হামলা চালাতে পারে।
আজ সকালে দিল্লির বেশ কয়েকটি মেট্রো স্টেশনের ভিতরে ও মেট্রোর কামরায় দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী তথা আবগারি দুর্নীতি মামলায় অন্তর্বর্তী জামিনে মুক্ত কেজরীওয়ালকে হুমকি দিয়ে লেখা দেখা যায়। কোনওটিতে লেখা ছিল, ‘কেজরীওয়াল দিল্লি ছাড়ুন। না হলে ভোটের আগে পড়া তিন থাপ্পড় মনে আছে তো! ...এর পর পাঁচ থাপ্পড় দ্রুত পড়তে চলেছে’। আর একটিতে লেখা ছিল, ‘দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী আমাদের রেহাই দিন। আমাদের বিনামূল্যের পরিষেবা চাই না...।’
কেজরীওয়ালকে হুমকি দেওয়া ওই বার্তা প্রকাশ্যে আসতেই তাঁর প্রাণহানির আশঙ্কায় সরব হন রাজ্যসভার আপ সাংসদ সঞ্জয় সিংহ। তিনি বলেন, ‘‘কেজরীওয়াল জেল থেকে বেরোনোর পরেই বিজেপি ঘাবড়ে গিয়েছে। তাই তাঁর উপরে প্রাণঘাতী হামলার পরিকল্পনা হচ্ছে। এই ষড়যন্ত্রের পিছনে রয়েছে প্রধানমন্ত্রীর দফতর (পিএমও)। যদি কেজরীওয়ালের শরীরে একটি আঁচড়ও পড়ে, তা হলে দায়ী থাকবে প্রধানমন্ত্রী কার্যালয়, বিজেপি ও প্রধানমন্ত্রী স্বয়ং।’’
আজ বিকেলে আপের সাংসদ- বিধায়কেরা নির্বাচন কমিশনকে লেখা একটি চিঠিতে জানান, ‘কেজরীর উপর হামলার আশঙ্কা রয়েছে। অতীতেও তাঁর উপরে হামলা হয়েছিল। বর্তমান সময়ে কেজরীকে হুমকি দিয়ে মেট্রো স্টেশনে ও কামরায় বেশ কয়েকটি হুমকি বার্তা দেখা গিয়েছে’। ওই হুমকি দেওয়ার পিছনে নাম উঠেছে অঙ্কিত গয়াল নামে এক ব্যক্তির। আপ সূত্রের খবর, ওই ব্যক্তি সমাজমাধ্যমে নিজের অ্যাকাউন্টেও একই ধরনের হুমকি দিয়েছেন কেজরীওয়ালকে।
ওই চিঠিতে আপ নেতৃত্বের প্রশ্ন, যেখানে মেট্রো স্টেশন ও মেট্রোর কামরার নিরাপত্তা সিসিটিভি-র মাধ্যমে নিয়ন্ত্রিত হয়, সেখানে ওই ব্যক্তি কী ভাবে ওই সব লিখলেন! কেন নিরাপত্তাকর্মীরা ওই ব্যক্তিকে আটকানোর চেষ্টা করলেন না। আপ নেতৃত্বের বক্তব্য, দিল্লির মুখ্যমন্ত্রীর নিরাপত্তার দায়িত্ব রয়েছে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের অধীনে থাকা দিল্লি পুলিশ। কিন্তু তারা পরিকল্পিত ভাবে ওই হুমকিকে গুরুত্ব না দেওয়ার কৌশল নিয়েছে।
আপ সাংসদ সঞ্জয়ের ধাঁচেই আপের সাংসদ-বিধায়কেরা অভিযোগ করেছেন কেজরীর ক্ষতি করতে যে কোনও কিছু করতে পারেন নরেন্দ্র মোদী। চিঠিতে আশঙ্কা প্রকাশ করে বলা হয়েছে,‘প্রধানমন্ত্রীর দফতর অরবিন্দ কেজরীওয়ালের উপরে হামলার ছক কষছে। যদি কেজরীওয়ালের নিরাপত্তায় কোনও ধরনের ত্রুটি হয় তা হলে তার জন্য দায়ী থাকবেন খোদ প্রধানমন্ত্রী’। তাই কেজরীকে হুমকি দেওয়া ব্যক্তিকে দ্রুত গ্রেফতারির পাশাপাশি, আপ আহ্বায়কের নিশ্ছিদ্র নিরাপত্তা সুনিশ্চিত করতে কমিশনের কাছে আবেদন জানিয়েছেন আপ নেতৃত্ব।
পাল্টা আক্রমণে বিজেপির অভিযোগ, সহনুভূতি আদায়ে এবং বিজেপিকে অস্বস্তিতে ফেলতে নিজের উপরে হামলা করাতে পারেন কেজরী। দিল্লি বিজেপি সভাপতি বীরেন্দ্র সচদেব আজ বলেন, ‘‘অতীতেও কেজরীওয়ালের উপরে তাঁর দলের সমর্থকেরাই হামলা চালিয়েছিল। এ বারেও সহানুভূতি পেতে কেজরীওয়াল নিজের উপরে হামলা হতে পারে।’’ সচদেবের মতে, স্বাতী মালিওয়াল-কাণ্ড থেকে আমজনতার নজর ঘোরাতেই হুমকি-কাণ্ড সাজিয়েছেন আপ নেতৃত্ব। তাই কমিশনের কাছে কেজরীওয়ালের নিরাপত্তা বাড়ানোর দাবি করেছে বিজেপি। যাতে নিজের উপর হামলা চালিয়ে বাড়তি সুবিধা না নিতে পারেন দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী।