নলহাটি ২ ব্লকে শীতলগ্রামে বিজেপি পার্থীর প্রচারের ছবি। নিজস্ব চিত্র।
তাঁর বিরুদ্ধে শীতলখুচি প্রসঙ্গ তুলে সরব হয়েছেন খোদ মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এ বার বীরভূম কেন্দ্রের সেই বিজেপি প্রার্থী, প্রাক্তন আইপিএস দেবাশিস ধর বগটুই প্রসঙ্গ তুলে মুখ্যমন্ত্রীকে পাল্টা নিশানা করলেন।
দেবাশিস বীরভূম কেন্দ্রে প্রার্থী হওয়ার পর থেকেই গত বিধানসভা ভোটের সময়ে শীতলখুচিতে গুলি চালনার প্রসঙ্গ তুলে তাঁকে বিঁধছে তৃণমূল। শুক্রবার কোচবিহারে নির্বাচনী জনসভা থেকে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘‘আপনাদের মনে আছে গত নির্বাচনে (বিধানসভা) শীতলখুচিতে চার জন সংখ্যালঘু যুবককে গুলি করা মারা হয়েছিল আর এক জন রাজবংশী ভাইকে। আমি নির্বাচনের মাঝে ছুটে এসেছিলাম। শীতলখুচির ঘটনায় যিনি নির্দেশ দিয়েছিলেন, তিনি বীরভূমে পালিয়ে গিয়ে বিজেপি প্রার্থী হয়েছেন। যাঁর বিরুদ্ধে ডিপি এবং ভিজিল্যান্স কমিশনে কেস আছে৷’’ মমতার অভিযোগ, বিজেপি এক তরফা সব নিয়ম ভেঙে অনিয়ম করছে৷
প্রসঙ্গত, ২০২১ সালের ১০ এপ্রিল বিধানসভা নির্বাচনের চতুর্থ দফায় ভোটগ্রহণের সময় কোচবিহারের শীতলখুচিতে গুলি চালানোর অভিযোগ ওঠে সিআইএসএফ জওয়ানদের বিরুদ্ধে। ভোটের লাইনে থাকা চার যুবকের মৃত্যু হয়। আর এক জায়গায় দুষ্কৃতীদের গুলিতে নিহত হন অন্য এক ভোটার। সেই সময় কমিশনের নির্দেশে ওই জেলার পুলিশ সুপারের দায়িত্বে ছিলেন দেবাশিস ধর। বৃহস্পতিবার মাথাভাঙার জনসভা থেকে বিজেপি প্রার্থীকে নিশানা করে মমতা বলেছিলেন, ‘‘হাতের রক্ত না মুছেই ভোটে নেমেছে।’’
শনিবার নলহাটি ২ ব্লকের শীতলগ্রামে প্রচারে গিয়ে তার জবাব দেন দেবাশিস। তিনি বলেন, “উনি শীতলখুচি নিয়ে বলছেন, আর বগটুই গ্রামে ১০ জনকে জতুগৃহের মতো পুড়িয়ে মারা হল। সেটা নিয়ে ওঁর কোনও প্রতিক্রিয়া নেই। আমার মনে হয় এ রকম মুখ্যমন্ত্রীর ক্ষমতায় থাকার কোনও অধিকার নেই।”
ঘটনা হল, দেবাশিসকে নিশানা করতে যে শীতলখুচি প্রসঙ্গ তোলা হবে তা তৃণমূলের জাতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় তারাপীঠের কর্মিসভায় নির্দেশ দেন বলে দল সূত্রে দাবি। এ বার পাল্টা বগটুইকে হাতিয়ার করলেন দেবাশিস।
এ দিন প্রচারে বেরিয়ে তিনি সকালে পৌঁছে যান নলহাটি ১ নম্বর ব্লকের কুরুমগ্রামে। সেখানে এ দিন রক্ষাকালী মন্দিরে পুজো দেন। সেখান থেকে দেবাশিস চলে যান নলহাটি ২ নম্বর ব্লকের শীতলগ্রামে। সেখানে পায়ে হেঁটে প্রচার করেন। শিব মন্দিরে প্রণাম করেন। সেখানে পূর্ব মেদিনীপুরে তদন্তে গিয়ে জাতীয় তদন্তকারী সংস্থার আধিকারিকদের ‘আক্রান্ত’ হওয়ার ঘটনার প্রসঙ্গ তুলেও তৃণমূলকে আক্রমণ করেন তিনি।
দেবাশিস ধর বলেন, “কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা থেকে কেন্দ্রীয় সুরক্ষা বাহিনীকে আক্রান্ত হতে হচ্ছে। যাঁরা জাতীয় সন্ত্রাসবাদের মোকাবিলায় কাজ করে চলেছেন, আন্তর্জাতিক সন্ত্রাসবাদকে দমন করে চলেছেন এ দিন তাঁদের আক্রান্ত হতে হয়েছে। এই মুখ্যমন্ত্রী দেশের আগে নিজের ব্যক্তিগত স্বার্থের কথা ভাবেন।”
বীরভূম কেন্দ্রে তাঁর প্রতিপক্ষ, তৃণমূল প্রার্থী শতাব্দী রায়কেও এ দিন কটাক্ষ করেন দেবাশিস। তিনি বলেন, “আমি অভিনয়ও করব, আবার রাজনীতিও করব হতে পারে না। তাই তো গ্রামে গ্রামে ঘুরে এত না পাওয়ার অভিযোগ শুনতে হচ্ছে।’’ দেবাশিস বলেন, ‘‘শুধুমাত্র সংসদের সভা ছাড়া সর্বক্ষণ আমাকে আপনারা পাবেন। আমি তাই চাকরি ছেড়ে দিয়ে রাজনীতিতে এসেছি।’’ শতাব্দী অবশ্য এর প্রতিক্রিয়া দিতে চাননি।
তৃণমূলের জেলা সম্পাদক ত্রিদিব ভট্টাচার্য পাল্টা কটাক্ষ করে বলেন, “রাজনীতিতে কয়েকদিন এসেছেন তিনি। মুখ্যমন্ত্রী আন্দোলন করে এই জায়গায় এসেছেন। সংগঠন তৃণমূলের মজবুত আছে। ভোটের পরে বিজেপির প্রার্থীকে আর খুঁজে পাওয়া যাবে না।”