প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। — ফাইল চিত্র।
আগামী সপ্তাহের মাঝামাঝি লোকসভা নির্বাচনের দ্বিতীয় প্রার্থী-তালিকা চূড়ান্ত করতে বৈঠকে বসতে চলেছেন বিজেপি নেতৃত্ব। দ্বিতীয় দফায় আরও অন্তত দু’শোর কাছাকাছি আসনে প্রার্থী চূড়ান্ত করার কথা রয়েছে। মূলত যে রাজ্যগুলিতে বিজেপি শরিক দলের সঙ্গে হাত মিলিয়ে নির্বাচনে লড়তে চলেছে, সেগুলিতেই আসন ও প্রার্থী চূড়ান্ত করার কথা দ্বিতীয় বৈঠকে।
গত কাল প্রথম দফায় ১৯৫টি আসনে প্রার্থী ঘোষণা করেছে নরেন্দ্র মোদীর দল। এই সংক্রান্ত দ্বিতীয় বৈঠকটি ৫-৭ মার্চের মধ্যে হওয়ার কথা রয়েছে। সূত্রের মতে, ৫ মার্চ অমিত শাহের মহারাষ্ট্রের একাধিক জায়গায় সভা রয়েছে। পরের দিন প্রধানমন্ত্রীর কলকাতা সফর। আর ৭ মার্চ মোদী যাচ্ছেন শ্রীনগর। বিজেপির এক নেতার কথায়, ৫ তারিখ রাতে বৈঠকে বসার কথা ভাবা হয়েছে। সেই দিন পুরো আলোচনা শেষ না হলে ফের ৬ বা ৭ মার্চ রাতে বৈঠকে বসতে চলেছে দল।
বিহার, মহারাষ্ট্রের মতো রাজ্যগুলিতে, যেখানে বিজেপির জোট রয়েছে সেখানে কী ভাবে আসন রফা হবে, তা নিয়েই আগামী বৈঠকে আলোচনা হওয়ার কথা রয়েছে। সূত্রের মতে, তালিকায় প্রথমেই রয়েছে বিহার। ওই রাজ্য ৪০টি লোকসভা আসন রয়েছে। তার মধ্যে নীতীশ কুমারের জেডিইউ-কে ১২টি আসন দেওয়ার কথা ভাবা হয়েছে। এ ছাড়া ওই রাজ্যে রামবিলাস পাসোয়ানের দল এলজেপি-র সঙ্গে জোট রয়েছে বিজেপির। জীতনরাম মাঝির হাম দলও এনডিএ শরিক। ফলে আসন চেয়ে সরব তারাও। ছোট শরিক দলগুলিকে নিজেদের ভাগের আসন থেকে টিকিট দেবে বিজেপি।
গত কাল তেলঙ্গানার কিছু আসনে বিজেপি প্রার্থী ঘোষণা হলেও প্রথম তালিকায় অন্ধ্রপ্রদেশের নাম উল্লেখই করা হয়নি।। অন্ধপ্রদেশে লোকসভার সঙ্গেই বিধানসভা নির্বাচন হতে চলেছে। ওই রাজ্যে এ বার ভাল ফল করতে মরিয়া বিজেপি নেতৃত্ব চন্দ্রবাবু নায়ডুর দল টিডিপি-র সঙ্গে জোটের বিষয়টি অনেকটাই চূড়ান্ত করে এনেছে। সূত্রের মতে, আগামী ৫ মার্চ টিডিপি-র সঙ্গে জোট ঘোষণা হতে পারে বিজেপির। তবে একই সঙ্গে ওই রাজ্যে ‘প্ল্যান-বি’ তৈরি করে রাখতে চাইছেন বিজেপি নেতারা। সেই কারণে অন্ধ্রের ২৫টি লোকসভা ও ১৭৫টি বিধানসভা আসনের জন্য বিকল্প প্রার্থী তালিকা তৈরি করে রাখার কথা রাজ্য নেতৃত্বকে জানিয়ে রেখেছেন ওই রাজ্যের ভারপ্রাপ্ত কেন্দ্রীয় নেতা শিবপ্রকাশ। সূত্রের বক্তব্য, ইতিমধ্যেই প্রায় পনেরোশো ইচ্ছুক নেতা-কর্মী ভোটে লড়তে চেয়ে নাম জমা দিয়েছেন। তাঁদের মধ্যে থেকে লোকসভা ও বিধানসভা-পিছু তিন জন করে সম্ভাব্য প্রার্থীর নাম বেছে রাখতে বলেছেন শিবপ্রকাশ। শেষ পর্যন্ত টিডিপি-র সঙ্গে আসন রফা না হলে ‘একলা চলো’ নীতিই নেবে বিজেপি।
জোট প্রশ্নে এই মুহূর্তে সবচেয়ে বড় জটিলতা তৈরি হয়েছে মহারাষ্ট্রে। ওই রাজ্যের ৪৮টি আসনের মধ্যে ২৫টিতে লড়তে চাইছে বিজেপি। কিন্তু তার মধ্যে এমন কিছু আসন রয়েছে, যেগুলিতে পাঁচ বছর আগে জিতেছিল অবিভক্ত শিবসেনা। দুই শরিকের মধ্যে প্রকাশ্য মতপার্থক্য দেখা গিয়েছে রত্নগিরি আসন নিয়ে। বিজেপি নেতা নারায়ণ রাণে চান, তাঁর ছেলে নীতীশ রাণে ওই আসন থেকে লড়ুন। কিন্তু নিজেদের জেতা আসন ছেড়ে দিতে নারাজ একনাথ শিন্দের শিবসেনা। শিন্দে-ঘনিষ্ঠ নেতা রামদাস কদম কার্যত বিরোধীদের সুরে আওয়াজ তুলে বলেছেন, ‘‘বিজেপি কি অন্য সব দলকে শেষ করে দিতে চায়? নির্বাচনে কি বিজেপি একাই লড়বে? দল কোনও ভাবেই ওই আসনটি ছাড়বে না।’’ পরশু মহারাষ্ট্রে প্রচারে যাচ্ছেন অমিত শাহ। রাজনৈতিক সভা ছাড়াও জোটের আসন ভাগাভাগির বিষয়টি নিয়েও তিনি চূড়ান্ত আলোচনা সেরে ফেলতে চাইছেন বলে সূত্রের দাবি।