(বাঁ দিকে) মমতাবালা ঠাকুর। শান্তনু ঠাকুর (ডান দিকে)। গ্রাফিক: শৌভিক দেবনাথ।
লোকসভা ভোটের আবহে বনগাঁর ঠাকুরনগরের ঠাকুরবাড়ির বিবাদ আবারও প্রকাশ্যে। এ বারও সম্মুখসমরে মমতাবালা ঠাকুর এবং শান্তনু ঠাকুর। ২০১৯ সালের লোকসভা ভোটযুদ্ধে জেঠিমাকে হারিয়ে শেষ হাসি হেসেছিলেন শান্তনু। কিন্তু এ বার ভোটযুদ্ধে তাঁর মুখোমুখি তৃণমূল প্রার্থী বিশ্বজিৎ দাস। এ বার ঠাকুরনগরে হরিচাঁদ ঠাকুরের জন্মদিন উপলক্ষে আয়োজিত মেলা নিয়ে বিবাদে জড়িয়ে পড়েছেন ঠাকুর পরিবারের দুই সদস্য।
ঠাকুরনগরের এই পারিবারিক লড়াইয়ে জড়িয়ে রয়েছে তৃণমূল-বিজেপিও। প্রতি বছর হরিচাঁদ ঠাকুরের জন্মতিথি মধুকৃষ্ণ ত্রয়োদশীতে পুণ্যস্নানের জন্য ঠাকুরনগরের ঠাকুরবাড়িতে একটি মেলা হয়। এই মধুকৃষ্ণ ত্রয়োদশী পুণ্যস্নানের পুণ্যতিথি। মতুয়া সম্প্রদায়ের ভক্তেরা সেখানে থাকা পুকুর ‘কামনাসাগরে’ ডুব দেন। মতুয়াদের বিশ্বাস এই তিথিতে তাঁরা স্নান করলে মনস্কামনা পূরণ হয়। সেই মেলায় রাজ্য তথা দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে মতুয়া সম্প্রদায়ের মানুষেরা ঠাকুরনগরে আসেন। বিজেপি সাংসদ শান্তনু বলেছেন, ‘‘মেলা বন্ধের জন্য ১৪৪ ধারা জারি করে মতুয়াদের ধর্মীয় ভাবাবেগে আঘাত করেছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ও তাঁর ক্যাডারেরা।’’ তাঁর আরও অভিযোগ, ‘‘এই ঘটনায় মতুয়াদের বিশ্বাস, আবেগ ও ভালবাসা ধ্বংস করার চেষ্টা করা হচ্ছে। রাজনৈতিক প্রতিহিংসার কারণে মেলা বন্ধ করতে চাইছে ওরা। ১৯৫৩ সাল থেকে মতুয়াদের এই মেলা হয়ে আসছে। রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে বিদ্যুৎ দফতর থেকে চিঠি দিয়ে জানানো হয়েছে বিদ্যুৎ সংযোগ দেওয়া হবে না।’’ বিদায়ী সরকারের কেন্দ্রীয় প্রতিমন্ত্রীর এমন অভিযোগে লোকসভা ভোটের আবহে মেলাকে কেন্দ্র করে রাজনৈতিক রং চড়তে শুরু করেছে।
পাল্টা তৃণমূলের অভিযোগ, এই মেলার আয়োজনের সঙ্গে সরকারের ভুমিকার কোনও সম্পর্ক নেই। ঠাকুরবাড়ির তরফেই পুলিশ-প্রশাসনের কাছে ১৪৪ ধারা চালুর লিখিত আবেদন করা হয়েছিল। সেই আবেদনে সাড়া দিয়েই জেলা পুলিশের তরফে ১৪৪ ধারা জারি করা হয়েছে। মার্চ মাসেই তৃণমূলের টিকিটে রাজ্যসভার সাংসদ হয়েছেন মমতাবালা। তাই মুখ্যমন্ত্রীর বিরুদ্ধে শান্তনুর আক্রমণের জবাব দিয়েছেন তিনিও। জবাবে মমতাবালা বলেন, ‘‘মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কোনও বিষয় নেই। তিনি মতুয়াদের জন্য অনেক কিছু করেছেন। তাঁরই উদ্যোগে ঠাকুরবাড়ির পুকুর ‘কামনাসাগর’-এর পাড় বাঁধানো ও তার সংস্কার হয়েছে। রেলমন্ত্রী হিসাবে ঠাকুরনগর স্টেশনও সাজিয়েছেন তিনিই।’’ তিনি আরও বলেন, ভোটে হার নিশ্চিত জেনেই, মতুয়াদের মন পেতে শান্তনু মিথ্যা অভিযোগ করছেন। সুষ্ঠু ভাবে পরিচালনার জন্য দুষ্কৃতীদের মেলায় প্রবেশ বন্ধ করা জরুরি। সেই ব্যাপারে নিষেধাজ্ঞা আনতেই ১৪৪ ধারা জারি করার আবেদন করেছি আমি।’’
আগামী শুক্র ও শনিবার ঠাকুরনগরে মেলার আয়োজন হওয়ার কথা। কিন্তু দুই বিবাদমান গোষ্ঠী পরস্পরের বিরুদ্ধে আক্রমণাত্মক এবং অনড় হয়ে ওঠায়, মেলার আয়োজন নিয়েই প্রশ্ন উঠে গিয়েছে।