বাংলায় বিজেপির ভোটপ্রচারে মিঠুন চক্রবর্তী। ছবি: পিটিআই।
নীলবাড়ির লড়াইয়ের সঙ্গে দিল্লিবাড়ির লড়াইয়ের মিঠুন চক্রবর্তীর অনেক ফারাক। অনেকটাই সতর্ক অভিনেতা মিঠুন। ঝাঁজ বজায় রাখলেও জাত গোখরোর ‘বিষ’ ছোবল নেই তাঁর বক্তৃতায়। শ্মশানে পাঠানোর বদলে লাল পিঁপড়ের কামড় খাওয়ানোর হুঁশিয়ারি তাঁর সংলাপে।
২০২১ সালের বিধানসভা নির্বাচনের আগে আগে ব্রিগেড ময়দানে ধুতি-পাঞ্জাবি পরে হাতে গেরুয়া পতাকা নিয়েছিলেন মিঠুন। তাঁর যোগদানের পরে সেই মঞ্চেই হাজির হয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। এর পরে নতুন দলে এসে তৃণমূলের প্রাক্তন রাজ্যসভা সাংসদ মিঠুন ঝোড়ো প্রচার চালিয়েছিলেন। এক এক দিনে চার-পাঁচটি করে সভা করেছিলেন। হেলিকপ্টারে চড়ে বাংলার এ মাথা থেকে ও মাথা ঘুরেছিলেন। এ বার অত ঝক্কি নিচ্ছেন না সদ্য শারীরিক সমস্যা নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি থাকা মিঠুন। এখনও পর্যন্ত রাজ্যের প্রথম ও দ্বিতীয় দফার মোট ছ’টি আসনের সব ক’টিতেই প্রচারে গিয়েছেন এক দিন করে। তবে প্রতি দিন একটি রোড-শো আর একটি জনসভা। তার বেশি নয়।
সভায় গেলেও মিঠুনের বক্তব্যে এসেছে বদল। তার কারণও রয়েছে। ২০২১ সালের ৯ মার্চ ব্রিগেডে পদ্মশিবিরে যোগদানের পরেই নিজের বক্তৃতার মধ্যে তিনি তাঁর অভিনীত ছবির একটি জনপ্রিয় সংলাপ উল্লেখ করে বলেছিলেন, ‘‘আমি বেলেবোড়াও নই, জলঢোঁড়াও নই। আমি জাত গোখরো। এক ছোবলেই ছবি।’’ এর পরে তাঁর প্রতিটি সভাতেই ওই সংলাপ শোনা যেত। সঙ্গে ‘মারব এখানে, লাশ পড়বে শ্মশানে’ সংলাপও। বিজেপি সমর্থকদের হাততালিও পেয়েছিলেন প্রচুর। কিন্তু ফল ঘোষণার পরে সেই সংলাপ বলার জন্য মানিকতলা থানায় মিঠুনের বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ করে তৃণমূল প্রভাবিত সংগঠন ‘সিটিজেন্স ফোরাম’। বলা হয়, মিঠুন ভোটের প্রচারে যে সব কথা বলেছেন, তাতে হিংসা ছড়ানোর ‘উস্কানি’ ছিল। বিজেপি যেখানে যেখানে জিতেছিল, সেখানে তৃণমূল কর্মী-সমর্থকদের উপরে হামলার জন্যও ওই সংলাপ দায়ী বলে অভিযোগ তোলা হয়েছিল।
এর পরে আদালতে যায় সেই মামলা। এফআইআর খারিজের জন্য কলকাতা হাই কোর্টের দ্বারস্থ হন মিঠুন। তাঁকে তদন্তে সহযোগিতা করার নির্দেশ দেয় আদালত। মিঠুনকে ভার্চুয়াল মাধ্যমে জিজ্ঞাসাবাদও করে পুলিশ। তবে শেষমেশ কলকাতা হাই কোর্টের বিচারপতি কৌশিক চন্দ ‘স্বস্তি’ দেন মিঠুনকে। তিনি এজলাসে বলেন, ‘‘শোলের (খলচরিত্র) আমজাদ খান থেকে শুরু করে এখনও পর্যন্ত হাজার হাজার সিনেমায় জনপ্রিয় ডায়ালগ শোনা গিয়েছে। আমি কি বলতে পারি যে তা থেকে কোনও (হিংসাত্মক) ঘটনা ঘটেছে?’’সেই সঙ্গেই তাঁর মন্তব্য ছিল, ‘‘ভোট-পরবর্তী অশান্তি ছড়ানোর সঙ্গে মিঠুন চক্রবর্তীর ওই সংলাপের সম্পর্ক থাকতে পারে না।’’
গত শনিবার বালুরঘাটে বিজেপি রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদারের হয়ে প্রচারে এসেছিলেন মিঠুন। গঙ্গারামপুর বিধানসভা এলাকায় রোড-শো করার পরে যান কুশমন্ডিতে। সেখানে সমাবেশ ছিল তাঁর। ভিড় ভালই হয়েছিল। সে ভিড় মিঠুনকে দেখার জন্য তো বটেই, শোনার জন্যও। প্রথম দিকে রাজনৈতিক কথাবার্তা বললেও জনতার আবদার, ‘ডায়ালগ চাই’। দাবি মেনে নিলেন অভিনেতা-নেতা। নিজেই জানালেন সংলাপ শোনাবেন। তবে তার আগে মনে করালেন বিধানসভা নির্বাচনের অভিযোগ পর্ব। মিঠুন বললেন, ‘‘আমি আর আগের মতো আমার ডায়ালগ বলতে পারব না। কারণ, ওই সাপের ডায়ালগটা বলেছিলাম বলে নাকি হিংসা ছড়াচ্ছে! কেস করা দেওয়া হল।’’ এর পরে বিচারপতি চন্দের কথা মনে করিয়েই সম্ভবত ‘শোলে’ ছবির জনপ্রিয় সংলাপ ‘ও সাম্বা...’ শুনিয়ে দিলেন খানিকটা। তার পরেই জানিয়ে দিলেন তিনি ডায়ালগ বলবেন। কিন্তু ঘুরিয়ে।
শুরু হল তাঁর সাপের ডায়ালগ। বললেন, ‘‘আমি বেলেবোড়াও নই, জলঢোঁড়াও নই। আমি অ্যারোগ্যান্ট (উদ্ধত) সাপ, ছোট ছোট ইঁদুর খুঁজে বেড়াই।’’ এর পরেও জনতার দাবি থেকে গেল ‘মারব এখানে’ সংলাপের জন্য। হতাশ করলেন না মিঠুন। তবে সতর্ক গলায় বললেন, ‘‘মারব এখানে মনে আছে তো? দেখুন ওই ডায়ালগটা কেমন ঘুরিয়ে নিয়ে বলছি।’’ কিছুটা থেমে বললেন, ‘‘চিমটি কাটব এখানে। আর লাল পিঁপড়ের মতো জ্বলবে এখানে-ওখানে-সেখানে।’’ সঙ্গে শরীরের নানা প্রত্যঙ্গও দেখালেন। হাততালিতে ফেটে পড়ল জনতা।
বিজেপি নেতারা বলছেন, মূল সংলাপের তুলনায় ঘুরিয়ে ডায়ালগ বলে বেশি হাততালি পাচ্ছেন মিঠুন। কারণ, মূল ডায়ালগটা না বলা হলেও সবাই স্মৃতি থেকে শুনে নিচ্ছেন আর ঘুরিয়ে বলার মজাও মিলছে।