জগন্নাথ সরকারকে গ্রেফতারের দাবিতে জাতীয় সড়ক অবরোধ। বৃহস্পতিবার নদিয়ার শান্তিপুরে। ছবি: প্রণব দেবনাথ
রানাঘাটের বিদায়ী সংসদ তথা বিজেপি প্রার্থী জগন্নাথ সরকারের বিরুদ্ধে এক আদিবাসী যুবককে মারধরের অভিযোগে বৃহস্পতিবার বিকালে অশান্ত হল শান্তিপুর। ওই যুবককে শান্তিপুর স্টেট জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়েছে। জগন্নাথকে গ্রেফতার করার দাবিতে বিকেলে দীর্ঘক্ষণ ১২ নম্বর জাতীয় সড়ক অবরোধ করা হয়। জগন্নাথের পাল্টা দাবি, তাঁর উপরেই হামলা হয়, তাঁর গাড়িও ভাঙচুর করা হয়েছে। তবে রাত পর্যন্ত কোনও তরফেই পুলিশের কাছে অভিযোগ দায়ের করা হয়নি।
ঘটনার সূত্রপাত নদিয়ার শান্তিপুর ব্লকের আরবান্দি ২ পঞ্চায়েতের ডোমখিরা এলাকায়। ঘটনাচক্রে, জগন্নাথ ওই পঞ্চায়েতেরই বাসিন্দা। স্থানীয় সূত্রের খবর, বছর ১৫ আগে তিনি স্থানীয় বাসিন্দা, কুশ মুন্ডার জমি এবং পুকুরের একাংশ লিজ় নিয়েছিলেন। পুকুরের চারপাশ ঘিরে বেশ কিছু সেগুন গাছও পোঁতা হয়েছিল। সেই পুকুর ও জমি নিয়েই ঝামেলার জেরেই এ দিন জগন্নাথ কুশের ছেলে সুব্রত মুন্ডাকে মারধর করেন বলে অভিযোগ।
আহতের পরিবারের দাবি, সুব্রতের বাবা-কাকার থেকে জগন্নাথ জমি ও পুকুরের একাংশ লিজ় নিলেও সুব্রতের অংশ তার মধ্যে ছিল না। সেখানে বেশ কিছু সেগুন গাছ পোঁতা হয়েছিল। পরিবারের দাবি, জগন্নাথ দশটি গাছ কেটে ফেলেছেন। সেই গাছ যাতে বাইরে চালান না হয়, সে জন্য বেড়া দিয়ে ঘিরে দেওয়া হয়েছিল। এ দিন জগন্নাথ গাড়ি নিয়ে সেখানে গিয়ে বেড়া ভেঙে দেন। তার পরে নিজের নিরাপত্তা রক্ষীদের উপস্থিতিতেই তিনি সুব্রতকে মারধর করেন বলে অভিযোগ। সুব্রতের অভিযোগ, ‘‘জগন্নাথ সরকার আমাদের পুকুরের ধারে সেগুন গাছ গায়ের জোরে কেটে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছিলেন। তা আটকাতে গেলে কেন্দ্রীয় নিরাপত্তা বাহিনী এবং গুন্ডাবাহিনী সঙ্গে নিয়ে এসে তিনি আমাকে মারধর করেন।’’ তৃণমূলের রানাঘাট লোকসভা কেন্দ্রের পরিদর্শক সব্যসাচী দত্ত রাতে হাসপাতালে গিয়ে তাঁর সঙ্গে দেখা করেন।
তবে জগন্নাথের দাবি, তাঁর লিজ় নেওয়া পুকুর থেকে বেশ কিছু দিন যাবৎ মাছ চুরি হচ্ছিল। অভিযোগ, এ দিন তিনি সেখানে গেলে এক মত্ত ব্যক্তি লোহার রড দিয়ে তাঁর গাড়ির কাচ ভাঙচুর করে। পরে এক দল লোক এসেও হামলা করার চেষ্টা করে বলে দাবি। সাংসদকে তাঁর নিরাপত্তারক্ষীরা সরিয়ে নিয়ে যান। হামলার সময়ে ওই মত্ত ব্যক্তি নিজেই পড়ে আহত হয়েছেন বলে সাংসদের দাবি। তাঁর বিরুদ্ধে সেগুন গাছ কাটারও অভিযোগ উঠেছে। জগন্নাথের দাবি, ‘‘আমার পোঁতা ওই সেগুন গাছ কাটার ব্যাপারে বন দফতরের অনুমতি রয়েছে। তৃণমূল পরিকল্পনা করে আমার উপরে হামলা করিয়েছে। এতে পুলিশেরও মদত আছে।’’
বিকেলে শান্তিপুরের বাবলার কাছে জাতীয় সড়ক অবরোধে শামিল হন আদিবাসী সমাজের মানুষজন। তৃণমূলের দলীয় পতাকা না থাকলেও হাজির ছিলেন শান্তিপুরের বিধায়ক ব্রজকিশোর গোস্বামী, শান্তিপুর পঞ্চায়েত সমিতির কর্মাধ্যক্ষ প্রিয়া সরকার, তৃণমূলের শান্তিপুর ব্লক (এ) সভাপতি সুব্রত সরকার ও ব্লক (বি) সভাপতি কানাই দেবনাথেরা। পুলিশের আশ্বাসে ঘণ্টাখানেক পরে অবরোধ ওঠে। তৃণমূলের রানাঘাট সাংগঠনিক জেলার সভাপতি দেবাশীষ গঙ্গোপাধ্যায়ের দাবি, ‘‘বিজেপি নেতারা যে আদিবাসীদের উপর অত্যাচার করেন, সেটা স্পষ্ট হয়ে গেল। আদিবাসী সমাজ সর্বত্র এই হামলার প্রতিবাদ করবে।’’