গ্রাফিক: শৌভিক দেবনাথ।
তৃতীয় বার ক্ষমতায় এলেও এ বার এনডিএ শরিকদের উপরে নির্ভরশীল প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী তথা বিজেপি। একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা না পেলেও এনডিএ ক্ষমতায় বসার ‘ম্যাজিক নম্বর’ দখল করতে পেরেছে। আর সেই জাদু-অঙ্কে দুই দলের উপরে সবচেয়ে বেশি নির্ভরতা থাকবে বিজেপির। মঙ্গলবারের ফল বলছে, বিজেপি একা ২৪০ আর জোটের সর্বমোট শক্তি ২৯২। এর মধ্যে নীতীশ কুমারের দল জেডিইউয়ের হাতে ১২ এবং চন্দ্রবাবু নায়ডুর দল টিডিপির হাতে রয়েছে ১৬টি আসন। বাকিদের উপরে নির্ভরতা থাকলেও নীতীশ ও নায়ডুর উপরে বিজেপিকে বেশি করে ভর দিয়ে চলতে হবে তৃতীয় মোদী সরকার গঠন হলে। আর জোট শরিক হিসাবে নীতীশ-নায়ডুর অতীত ইতিহাস বিজেপির কাছে মোটেও সুখের নয়। সে কথাই মনে করিয়ে দিলেন রাজ্য বিজেপির প্রাক্তন সভাপতি দিলীপ ঘোষ। তিনি বললেন, ‘‘নীতীশ এবং নায়ডু বরাবরই পাল্টিবাজ। তাঁদের উপরে নির্ভর করা কতটা ঠিক হবে তা নিয়ে ভাবা উচিত কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের।’’
এখন যা পরিস্থিতি ,তাতে নির্ভর করা ছাড়া সরকার গঠনের কোনও উপায়ই নেই বিজেপির। ফলে মোদী বা অমিত শাহদের এখন কিছুই করার নেই। এ বারের নির্বাচনে বিজেপির ফলাফলের কাটা ঘায়ে যেন নুনের ছিটেই দিলেন দিলীপ! অতীতে এমন অনেক কিছু বলেই দলের অস্বস্তি বাড়িয়েছেন তিনি। তবে দলের এমন অস্বস্তিকর সময়ে এ কথা বলে কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের উপরে চাপই বাড়ালেন দিলীপ। তাঁকে বর্ধমান-দুর্গাপুর আসনে পাঠানোর জন্য এমনিতেই দলীয় নেতৃত্বের ভূমিকা নিয়ে ঘনিষ্ঠ মহলে প্রশ্ন তুলেছেন দিলীপ। এ বার তৃতীয় মোদী সরকার গঠনের কাঁটাও প্রকাশ্যে চিনিয়ে দিলেন।
প্রসঙ্গত, অতীতে নীতীশ এবং চন্দ্রবাবুর দল একাধিক বার পক্ষ বদল করেছে। এ বার দিল্লিবাড়ির লড়াইয়ে দুই দলই বিজেপির সঙ্গে ছিল। তবে তার আগে বিজেপি বিরোধী জোট ‘ইন্ডিয়া’ গঠনের অন্যতম উদ্যোক্তাই ছিলেন নীতীশ। ‘ইন্ডিয়া’র প্রথম বৈঠক হয় তাঁর পটনার বাসভবনে। এর পরে বিজেপির সঙ্গে ঘনিষ্ঠতা বাড়িয়ে এনডিএ-শরিক হয় জেডিইউ। পরে ফের বিহারের মুখ্যমন্ত্রী হন নীতীশ। এখন তিনি বিহারের পাশাপাশি দিল্লির সরকারেও বিজেপির ত্রাতার ভূমিকায়। একই ভূমিকায় অতীতে বিজেপির হাত ছাড়া এবং ধরা চন্দ্রবাবুও। অন্য দিকে, বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় মঙ্গলবারই বলেছেন, ‘‘বিজেপিকে এখন পায়ে ধরতে হচ্ছে টিডিপি ও নীতীশ কুমারের। ওঁদের (নীতীশ ও চন্দ্রবাবু) ভাল চিনি আমি।’’ বিজেপি যখন সমর্থন ধরে রাখার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে তখন মমতার এই বক্তব্য অন্য ইঙ্গিত দিয়ে রেখেছে। তারই মধ্যে দিলীপের খোঁচা নতুন মাত্রা পেল দুই ‘ন’ নীতীশ ও নায়ডুর উপরে মোদীর নির্ভরতায়।