কালীনারায়ণপুরে বিজেপি প্রার্থীর বিরুদ্ধে পোস্টার। শনিবার রানাঘাটে। নিজস্ব চিত্র।
প্রার্থী তালিকা ঘোষণার পরে বিজেপি ছেড়েছেন রানাঘাট দক্ষিণের বিধায়ক মুকুটমণি অধিকারী। তৃণমূলে যোগ দিয়েছেন। এর মধ্যেই কালীনারায়ণপুরে রানাঘাটের সাংসদ তথা রানাঘাটে এ বারের বিজেপির প্রার্থী জগন্নাথ সরকারের বিরুদ্ধে পোস্টার পড়ল।
শুক্রবার রাতে রানাঘাট ১ ব্লকের কালীনারায়ণপুর পাহাড়পুর পঞ্চায়েতের বিভিন্ন জায়গায় রানাঘাটের সাংসদ তথা বিজেপি প্রার্থী জগন্নাথ সরকারের বিরুদ্ধে একাধিক পোস্টার দেখা যায়। পোস্টারে লেখা, ‘দুর্নীতিগ্রস্ত, চরিত্রহীন জগা হটাও নদিয়া বাঁচাও’। কোনও পোস্টারে লেখা, ‘তৃণমূলের সমাজ বিরোধীদের প্রত্যক্ষ মদতদাতা জগন্নাথ সরকারকে মানছি না মানব না’। রাজ্য বিজেপির অন্যতম সহ-সভাপতি তথা রানাঘাটের সাংসদকে সেখানে আরএসএস এবং বিজেপির কলঙ্ক বলেও দাবি করা হয়েছে। পোস্টারে আরও দাবি করা হয়েছে, নদিয়ার দক্ষিণে বিজেপিকে শেষ করে দেওয়ার চক্রান্ত করছেন জগন্নাথ।
লোকসভা নির্বাচনের আগে বিজেপি আংশিক প্রার্থী তালিকা ঘোষণা করেছে বিজেপি। রানাঘাটে বর্তমান সাংসদ জগন্নাথ সরকারের উপর আস্থা রেখে তাঁকেই ফের প্রার্থী করা হয়েছে। সেই জগন্নাথের বিরুদ্ধে পোস্টার পড়ায় অস্বস্তিতে পড়েছেন বলে জানান স্থানীয় বিজেপি নেতাদের কেউ কেউ।
বিজেপি সূত্রে জানা গিয়েছে, নদিয়ার দক্ষিণ প্রান্তে বিজেপির সাফল্য যেমন এসেছে, তেমনই পিছু পিছু এসেছে দলীয় কোন্দল। গত পাঁচ বছরে মিউজিকাল চেয়ারের মতো বদল হয়েছে দলের জেলা সভাপতি পদ। লোকসভা ভোটের কয়েক মাস পরে রানাঘাটে দলের দলীয় দফতরে জেলা সভাপতি মানবেন্দ্র রায়কে নিগৃহীত করার অভিযোগ ওঠে। সেই সময় আঙুল উঠেছিল জগন্নাথ শিবিরের বিরুদ্ধে। পরে অশোক চক্রবর্তী জেলা সভাপতি থাকাকালীন জগন্নাথ শিবিরের সঙ্গে তাঁর সঙ্ঘাত তৈরি হয়। বার কয়েক তিনি ইস্তফাও দেন। শেষ পর্যন্ত দল তার ইস্তফা গ্রহণ করে। নানা সময়ে মণ্ডল সভাপতি বদল থেকে শুরু করে দলের বিভিন্ন কমিটি তৈরি এবং কর্মসূচি ঘিরেও বিজেপির কোন্দল সামনে এসেছে। সম্প্রতি মণ্ডল সভাপতি বদল ঘিরেও জগন্নাথ সরকারের বিরুদ্ধে মুখ খুলেছেন দলের পঞ্চায়েত স্তরের জনপ্রতিনিধিদের কেউ কেউ। বিজেপির নদিয়া দক্ষিণ সাংগঠনিক জেলার প্রথম সভাপতি ছিলেন জগন্নাথ সরকার। চাকরি সংক্রান্ত জটিলতার কারণে মুকুটমণি অধিকারীর প্রার্থী পদ আটকে যাওয়ায় শেষ পর্যন্ত জগন্নাথ লোকসভায় দাঁড়িয়ে জেতেন। পরবর্তী কালে শান্তিপুর বিধানসভাতেও দাঁড়িয়ে তিনি জেতেন।
এ দিন যে পোস্টারগুলি দেখা গিয়েছে, তার নীচে লেখা রয়েছে বিজেপি নদিয়া দক্ষিণ জেলা। বিজেপি সূত্রে খবর, পোস্টার কাণ্ড অস্বস্তি বাড়িয়েছে গেরুয়া শিবিরের। জগন্নাথ সরকার বলেন, ‘‘রাতের অন্ধকারে পোস্টার মারার কাজটা অসাধু লোকদের।
আর এই অসাধু লোকগুলো তৃণমূলেরই হয়। গতবার আমি বিপুল ভোটে জিতেছি। আর তাতে তৃণমূল ভয় পেয়ে এই ঘৃণ্য চক্রান্ত করছে। বিজেপিকে ধ্বংস করার কোনও প্রশ্নই নেই। আমি ভালবেসেই দলটা করি।’’ দলের মধ্যে গোষ্ঠী কোন্দলের বিষয় উড়িয়েছেন রানাঘাটের বিজেপি সাংসদ।
একে বিজেপির গোষ্ঠী কোন্দল বলে ব্যাখ্যা করেছে তৃণমূল। তৃণমূলের রানাঘাট সংগঠনিক জেলার সভাপতি দেবাশীষ গঙ্গোপাধ্যায় বলেন, ‘‘এই ধরনের রাজনীতি আমাদের দলের সংস্কৃতি নয়। এটা বিজেপির নিজেদের কোন্দলের ফল। প্রার্থী ঘোষণা হওয়ার পর থেকেই বিজেপির অন্দরে ঝামেলা চলছে। এগুলো তারই বহিঃপ্রকাশ।’’